বিশেষ সংবাদ

বিআইডব্লিউটিএ’র সদর দপ্তর ছিল বরিশাল,বাতিল করেন হাসিনা

WhatsApp Image 2025 05 12 at 11.18.26 07f29272
print news

আকতার ফারুক শাহিন: বরিশাল নগরীর আলোচিত পদ্ম পুকুরের পাড়ে এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে কাঠের তৈরি সেই বাংলোবাড়ি। এই বাড়িতে একসময় ছিল বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ সংস্থা, সংক্ষেপে বিআইডব্লিউটিএ’র সদর দপ্তর। নদ-নদীর প্রয়োজনে যে বিআইডব্লিউটিএ, তা চলে গেছে ইট-পাথরের নগরী রাজধানী ঢাকায়। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটির সদর দপ্তর ১৯৯৮ সালের দিকে বরিশাল থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন বর্তমানে ভারতে পালিয়ে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শত বছরের পুরোনো এই বাড়িটিতে এখন রয়েছে সংস্থাটির নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর। বিআইডব্লিউটিএ’র সদর দপ্তর ঢাকায় নিয়ে যাওয়ায় এখনো আক্ষেপের শেষ নেই দক্ষিণ উপকূলের মানুষের। যাদেরকে নিয়ে এই দপ্তরের কাজ, তাদের বাড়ির কাছ থেকে সেটি নিয়ে যাওয়ার দুঃখ ভুলতে পারছেন না তারা। কাজের প্রয়োজনে এখন তাদের ছুটতে হয় দূরের সেই নগরে। যে নগরে যাওয়া-আসায় সময়ের পাশাপাশি ব্যয় হয় বিপুল অর্থ।

প্রশাসনকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার যে কথা এখন বলছে বিএনপি, সেই কাজটি আরও অন্তত ৪৫-৪৬ বছর আগেই শুরু করেছিলেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। বিকেন্দি করণের মাধ্যমে সরকারের প্রতিটি অঙ্গ সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। যার অংশ হিসাবে বরিশালে এসেছিল বিআইডব্লিউটিএ’র সদর দপ্তর। ১৯৭৯ সালের ২৩ নভেম্বর বরিশাল সার্কিট হাউজে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। সেখানে বরিশালের উন্নয়নে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বরিশালকে বিভাগে উন্নীত করা, এখানে বিশ্ববিদ্যালয়, বিমানবন্দর স্থাপন, ১শ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ নির্মাণ এবং বিআইডব্লিউটিএ’র সদর দপ্তর বরিশালে স্থানান্তর ছিল সেইসব সিদ্ধান্তের কয়েকটি।

বরিশাল নাগরিক পরিষদের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘সেই সময় কেবল বরিশাল নয়, চট্টগ্রাম, খুলনা, পটুয়াখালীসহ আরও কয়েকটি স্থানে কেবিনেট মিটিং করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়া। এসব মিটিংয়ের উদ্দেশ্য ছিল আঞ্চলিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত ও তার সমাধানসহ ওই অঞ্চলের উন্নয়নে কর্ম পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা।’

বরিশাল জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক বিশিষ্ট আইনজীবী মজিবর রহমান নান্টু বলেন, জেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক হিসাবে মন্ত্রিপরিষদের সেই বৈঠক দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব কেরামত আলীকে প্রধান করে বরিশাল বিভাগ বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তৎকালীন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আব্দুল বাতেনকে প্রধান করা হয় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটির। পরে অবশ্য ঘাতকের বুলেটে জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর থমকে যায় সব কার্যক্রম।

বিভাগ-বিশ্ববিদ্যালয় না এলেও বরিশালে ঠিকই এসেছিল বিআইডব্লিউটিএ’র সদর দপ্তর। বিএনপি চেয়ারপারসনের বর্তমান উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক যখন হয় তখন আমি বরিশাল জেলা যুবদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। আমার স্পষ্ট মনে আছে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএ’র কাজ তো নদ-নদী আর উপকূলীয় এলাকা নিয়ে। তাহলে তার সদর দপ্তর কেন ঢাকায় থাকবে? নদ-নদী এলাকার মানুষের কষ্ট করে যাতে ঢাকায় যেতে না হয় সেজন্য এটি তাদের কাছাকাছি থাকা উচিত।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা খালিদ নেওয়াজ জানান, নগরীর রাজা বাহাদুর সড়কে বিআইডব্লিউটিএ’র বাংলোবাড়ি ‘হিম নীড়’-এ করা হয়েছিল সচিবালয়। বান্দ রোড এলাকায় থাকা বিআইডব্লিউটিএ স্টেট-এর ভেতরে অফিস করা হয় পরিদপ্তরগুলোর। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের জন্য বেশ কিছু বাড়িও ভাড়া করা হয়। সচিবসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আসতেন বরিশালে। সাধারণ মানুষও খুব সহজেই এসব অফিসে গিয়ে তাদের কাজগুলো করতে পারত।

এভাবে নদ-নদী আর উপকূলীয় এলাকার মানুষ ১৯৮০ সাল থেকে টানা প্রায় ১৮ বছর সুবিধা পায় বিআইডব্লিউটিএ’র সদর দপ্তরের। এরই মধ্যে সদর দপ্তর বরিশাল থেকে ঢাকায় নেওয়ার তোড়জোরে নামেন আমলাদের একটি অংশ। বরিশালে সদর দপ্তর থাকায় কাজের অসুবিধা হচ্ছে অজুহাতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারকে বোঝাতে শুরু করেন তারা। বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের সময় অবশ্য এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার সাহস পাননি এসব আমলা। এরশাদ শাসনামলেও খুব একটা উচ্চবাচ্য হয়নি বিষয়টি নিয়ে। শেষ পর্যন্ত ১৯৯৮ সালের দিকে বরিশাল থেকে সদর দপ্তরটি ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন বর্তমানে ভারতে পালিয়ে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর রাতারাতি গুটিয়ে নেওয়া হয় সবকিছু। সেইসঙ্গে কপাল পোড়ে বরিশালের মানুষের। যে ‘হিম নীড়ে’ চলত বিআইডব্লিউটিএ’র সদর দপ্তর, সেখানে এখন নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর। নৌপরিবহণ সংস্থার যাবতীয় কাজে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে এখন আবার ছুটতে হয় ঢাকায়।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমতউল্লাহ বলেন, প্রশাসনিক বিকেন্দি করণ এখন সময়ের দাবি। তাহলে একদিকে যেমন ঢাকার ওপর চাপ কমবে, তেমনি সাধারণ মানুষও হয়রানির শিকার হবে না। বিআইডব্লিউটিএ’র সদর দপ্তর আবার বরিশালে আনা হোক। তাহলে ভোগান্তি কমবে উপকূলীয় এলাকার মানুষের।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.