রাজউকের অথরাইজড অফিসার ইলিয়াস’র বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে নোটিশ গায়েব’র অভিযোগ


ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : রাজউক জোন-৫/২ এর এরিয়ার মধ্যে রয়েছে তেজগাঁও রেললাইন শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ সরণী- শহিদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সড়ক- কাকরাইল মোড়- কাকরাইল রোড- মাওলানা ভাসানী সড়ক- কদম ফোয়ারা- শিক্ষা ভবনের পশ্চিম সীমানা- শিক্ষা চত্বর- হাইকোর্ট স্ট্রিট- দোয়েল চত্বর কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ-টিএসসি মোড়- নীলক্ষেত সড়ক- নীলক্ষেত বুক মার্কেট দক্ষিন সীমানা- নিউ মার্কেট পিলখানা রোড- গনকটুলি রোড- হাজারীবাগ বাসস্টপ-ঝাউচর বাজার- কেরাণীগঞ্জ উপজেলা সীমানা- বুড়িগঙ্গা নদী আটি বাজার মোড়- আটি বাজার কলাতিয়া রোড- চন্ডিপুর- ধলেশ্বরী নদী-রাজউক সীমানা- সাব-জোন ৫/১ এর দক্ষিন সীমানা- তেজগাঁও ফার্মগেট রেলগেট- তেজগাঁও রেললাইন।
এই বৃহৎ এরিয়ায় অথরাইজড অফিসার মোঃ ইলিয়াস দায়িত্ব পালন করছেন। এই ইলিয়াস হোসেনের সহযোগী হিসেবে রয়েছেন একাধিক ইমারত পরিদর্শক এবং অন্যান্য কর্মকর্তা। এই কর্মকর্তা কাজের ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে নোটিশ বাণিজ্যের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি টাকা। রাজউকের কোন ইমারত পরিদর্শকের ব্যক্তিগত সহকারী না থাকলেও এই ইলিয়াস তার ছোট ভাইকে ইমারত পরিদর্শক এনামুলের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে রেখেছেন।
রাজধানীর ফার্মগেট তেজতুরি বাজার এলাকায় দুইটি অবৈধ ভবনের বিষয়ে গত মে মাসে দুইটি অভিযোগ জমা হলেও ব্যবস্থা নেয়নি এই অথরাইজড অফিসার মোঃ ইলিয়াস।
আগষ্টের শুরুতে পরিচালক ও অথরাইজড অফিসারকে প্রশ্ন করা হয় মে মাসের অভিযোগের পরে অবৈধভাবে নির্মাণাধীন ভবনের বিষয়ে কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা? এমন প্রশ্নের উত্তর আসে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে তথ্য আসে অথরাইজড অফিসার মোঃ ইলিয়াসের সাথে এই দুই ভবন থেকে লেনদেন হয়েছে। এই তথ্য নিয়ে জোন-৫ এর পরিচালকের সাথে কথা বললে তড়িঘড়ি করে ০৮ আগষ্ট এই দুই ভবনের বিদ্যুৎ বিচ্ছন্নের জন্য ডিপিডিসি তে চিঠি প্রেরণ করে রাজউক।
গত ১২ আগষ্ট এই ভবনের বিষয়ে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে রাজউক জোন-৫ এ গেলে অথরাইজড অফিসার মোঃ ইলিয়াস বলেন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের জন্য ডিপিডিসি তে চিঠি দেয়া হয়েছে তাদের সাথে কথা বলতে পারেন।
শুধু এই দুটি ভবনই নয় অথরাইজড অফিসার মোঃ ইলিয়াস এর বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অভিযোগ। পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় হোল্ডিং নং ১৩১/১ এই বাড়িতে এক সপ্তাহের সময় বেধে দিয়ে নোটিশ করেছিল ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে কিন্তু ০৮ মাস পেরিয়ে গেলেও সাত দিন শেষ হয়নি অথরাইজড অফিসার মোঃ ইলিয়াসের, নেয়নি কোন ব্যবস্থা। জানাগেছে মোটা অংকের লেনদেন হওয়ার কারনে নোটিশটি ফাইল চাপা পড়েছে।
ধানমন্ডির কলাবাগানে এক বাড়িতে ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে এক সপ্তাহের সময় বেধে দিয়ে নোটিশ করেছিলেন অথরাইজড অফিসার মোঃ ইলিয়াস। জানাগেছে ১২ লাক্ষ টাকার বিনিময়ে সেই নোটিশটিই গায়েব করে দিয়েছেন এই কর্মকর্তা যার কিছু তথ্য-উপাত্ত রয়েছে প্রতিবেদকের হাতে।
নকশার বাহিরে ২০ ফিট থাকায় নিউ এ্যালিফ্যান্ট রোডের ল্যাবরেটরী রোডে হোল্ডিং নং ১১০,১১১,১১২ এবং একই দিনে হোল্ডিং নং ৮২ যা আবাসিক ভবনের অনুমতি থাকলেও বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে ব্যবহারের কারনে ২০ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মাদ মনির হোসেন হাওলাদারের নেতৃত্বে ভবনের মিটার সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও ভবন আংশিক উচ্ছেদ করে সকল প্রকার নির্মাণ কাজ ও ভবন ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু তথ্যসূত্রে জানাগেছে দুই ভবন থেকে মোঃ ইলিয়াসের সাথে ৩৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সকল নির্দেশ উপেক্ষা করে নির্মাণ কাজ ও ভবন ব্যবহার চালিয়ে যাচ্ছেন ভবন মালিকেরা।এছাড়াও হাতিরপুলের একাধিক ত্রুটিপুর্ন ভবন থেকে টাকা আদায়ের তথ্য রয়েছে।
অথরাইজড অফিসার মোঃ ইলিয়াস এর সাথে এই সকল বিষয় নিয়ে কথা বললে তিনি কাজের ব্যস্ততা দেখান এবং বলেন আপনারা শুধু আমাদের দোষ দেখেন কিন্তু আমাদের ইমারত পরিদর্শকরা কিভাবে সাইট ভিজিটে যায়, কত কষ্ট করে তা দেখেন না। আমাদের ইমারত পরিদর্শকদের জন্য কোন যাতায়াত ব্যবস্থা নেই, তাদের কাজের সুবিধার্তে একটা বাইক পর্যন্ত দেয়া হয়না তা নিয়ে তো আপনাদের কোনদিন লিখতে দেখলাম না।
জোন-৫ এর পরিচালক মোঃ হামিদুল ইসলামের সাথে অথরাইজড অফিসার মোঃ ইলিয়াস এর এই সকল অপকর্ম নিয়ে কথা বললে তিনি বলেন আপনাদের কাছে সু-নির্দিষ্ট তথ্য থাকলে অবশ্যই বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসুন।
অনিয়ম ও দুর্নীতি:
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা কর্মচারীদের ঘুষ, দুর্নীতি এবং অনিয়মের কারণে বার বার আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে। রাজউকের বিভিন্ন কার্যক্রম এবং উন্নয়ন প্রকল্পসমূহে অনিয়ম-দুর্নীতি এখন গেড়ে বসেছে।তারই ধারাবাহিকতায় এবার পাওয়া গেল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)’র অথরাইজড অফিসার মোঃ ইলিয়াসকে। জানা যায়, রাজউকের চাকরিতে যোগদানের পর হতে অল্প সময়ের ব্যবধানে বিশাল ধন সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি। সুত্রে জানা গেছে, ইলিয়াস একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলে ঘুষ বানিজ্যের মাধ্যমে দপ্তরটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
আর এই সিন্ডিকেটের অবদানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শত-শত ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। কখনো কখনো এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ প্রস্তাব পাশ হয়। কিন্তু সেটিও একসময় ধামাচাপা পড়ে যায় এই সিন্ডিকেটের আশীর্বাদে।
এছাড়াও ছাড়পত্র ও নকশার অযুহাত দেখিয়ে মাসের পর মাস ফাইল আটকে রেখে গ্রাহক হয়রানি এই সিন্ডিকেটের নিয়মিত কর্মযজ্ঞ। ঢাকাকে একটি সুন্দর পরিকল্পিত পরিবেশ বান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে রাজউকের পথ চলা শুরু হলেও এই সিন্ডিকেটের কারণে তা প্রশ্ন বিদ্ধ হয়ে উঠেছে।
সূত্র জানায়, অথরাইজড অফিসার ইলিয়াস এর দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি পদে পদে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, অত্র জোনের প্রতিটি উচ্ছেদ অভিযানকে অথোরাইজ অফিসার ইলিয়াস নানা কৌশলে টাকা কামানোর মেশিন হিসাবে পরিনত করেছেন। প্রতিটি উচ্ছেদ কার্যক্রম যেন তার কাছে হয়ে উঠে এক একটি চাঁদ রাত। তার এই সিন্ডিকেটে রয়েছে বেশ কিছু পরিদর্শক, রাজনৈতিক পরিচয় বহনকারী কিছু নেতা, ঊর্ধ্বতন ২/১ জন কর্মকর্তা ও কিছু দালাল চক্র।
স্থানীয় এলাকাবাসির সাথে কথা বলে জানা গেছে, উচ্ছেদ পরিচালনার সময় এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা অত্র এলাকায় নানা কৌশলে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন। এছাড়া উচ্ছেদের তালিকায় থাকা এমন অনেক ভবন রয়েছে- যেগুলো প্রকৃতপক্ষে উচ্ছেদ হয়নি।
এমনও শোনা যাচ্ছে, অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তিনশত টাকার স্ট্যাম্পে অংঙ্গীকারনামায় ভবন মালিকের স্বাক্ষর নিয়ে আসে এই সিন্ডিকেট। যাতে লেখা থাকে মালিক পক্ষ নিজ খরচে আপত্তিকর বা অবৈধ অংশটুকু ভেঙ্গে দিবে। এরপর ইউটিলিটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় দুর্নীতিবাজ এই সিন্ডিকেট। এ নিয়েও পরদিন থেকে বিরতিহীনভাবে সিন্ডিকেটের সদস্যদের সাথে চলে ঘুষের দেন দরবার। কাংখিত চাহিদা পূরণ হলে তবেই মেলে অনুমোদন। মিলে যায় মিটারে পূণ:সংযোগ। এরপর সবই ঠিক হয়ে যায় আগের মতই। এভাবেই দিনের পর দিন বিশাল এই রাজধানীতে শতশত ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে ইলিয়াস সিন্ডিকেটের আশীর্বাদে।
জানা যায়,নিয়ম বহির্ভূত ভবনের নোটিশের ফাইল ধামাচাপা পড়ারও অসংখ্য নজির আছে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। এছাড়া তাদের সহযোগিতায় নকশার পরিবর্তন, বহুতল আবাসিক ভবনকে বাণিজ্যিক ভবন, এমনকি উচ্চতাও বাড়িয়ে নিচ্ছেন অনেকে। নকশার আবেদন ফাইল মাসের পর মাস নিজ জিম্মায় রেখে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ রয়েছে ভুরি ভুরি। এমনও অভিযোগ আছে, সদস্যদের মাধ্যমে রাজউকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন এই ইলিয়াসরা।
উচ্ছেদ কার্যক্রমের আওতায় ক্ষেত্র বিশেষ তিনি নোটিশ প্রদান করেন একটি, দুইটি, তিনটি, কখনো বা চূড়ান্ত নোটিশ। সময় বিশেষ তা আবার ধামাচাপা দেয়া হয়। নেয়া হয়না কোন ব্যবস্থা। এমনকি উচ্ছেদ প্রস্তাব পাশ হওয়ার পরও এমনটি হয়েছে। জানা যায়, ইলিয়াস ও তার সিন্ডিকেটের ঘুষ, দুর্নীতির অন্যতম একটি সাইড হলো আবাসিকের নকশায় অনুমোদিত তলার চেয়ে বেশি তলা করার সহযোগিতা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া।সিন্ডিকেটের গ্রাহক হয়রানি ও বানিজ্য শুরু হয় ছাড়পত্র আবেদনের পর থেকেই।
বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে যেমন কাগজপত্রে ঠুনকো সমস্যা, জমির পাশের রাস্তা কমবেশি, ড্যাপের ঝামেলা ইত্যাদির অযুহাত দেখিয়ে মাসের পর মাস ফাইল আটকে রেখে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন এই ইলিয়াস সিন্ডিকেট। এসব বিষয়ে ইতিপূর্বে কর্তৃপক্ষের নিকট একাধিক ভুক্তভোগী ও প্রতিষ্ঠান অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। ইলিয়াস সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে, তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার বা ব্যবস্থা নেয়ার সাহস করেন না।
সূত্রে জানা যায়, ইলিয়াস নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ করেছেন। গাড়ি, ঢাকায় বাড়ি, প্লট ছাড়াও নিজ এলাকায় করেছেন অঢেল সম্পদ। তার অফিসে গিয়ে দেখা গেছে অনেক গ্রাহক দিনের পর দিন ঘুরছে ফাইল নিয়ে। তার পছন্দের মতন ঘুষ দিতে না পারায় ফাইল পাস হয় না।
গ্রাহকের সাথে খারাপ আচরণের অভিযোগও পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে। অফিসের এক কর্মকর্তা তার খারাপ আচরণের প্রতিবাদ করলে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন ইলিয়াস। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, সৎ কর্মকর্তা কর্মচারীদের দাবি ইলিয়াসের অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে উচ্চপদস্ত কর্মকর্তাসহ দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে ইলিয়াস কিভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হলেন।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।