অনিয়ম-দুর্নীতি ও নারী কেলেংকারীর অভিযোগে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির পরিচালক ইমাম জাফরকে চট্রগ্রামে বদলি


ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি ও নারী কেলেংকারীর অভিযোগে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ইউনিট এফেয়ার্স বিভাগের পরিচালক ইমাম জাফর সিকদারকে চট্রগ্রাম মাতৃসদন কেন্দ্রে বদলি করা হয়েছে।
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ রেডক্রিসেন্ট সদর দপ্তর থেকে এসজিএইচআর-১০২১/২৫ নং আদেশে মোট ৪ জন কর্মকর্তাকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বদলী করা হয়। মহাসচিব ড. কবীর মো: আশরাফ আলম এনডিসি এই আদেশে স্বাক্ষর করেন।
পরিচালক ইমাম জাফর সিকদারের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে এবং বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করেছে সেগুলো হলো-
১. তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আমলে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতি ও নারী কেলেংকারী করেও আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর তদবীরে মুক্তি পেয়ে যান। তিনি নানা কৌশলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে বিগত ১৬ টি বছর রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে লুটপাট করেছেন। হয়েছেন শত কোটি টাকা ও অবৈধ সম্পদের মালিক।
সোসাইটির বহুল আলোচিত চাকরি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে চেয়ারম্যান ম্যানেজিং বোর্ড সদস্য গাজী মোজ্জামেল হোসেন টুকুকে আহবায়ক,এ্যাড. শিহাব উদ্দিন শাহিন সদস্য, মুন্সি কামরুজ্জামান কাজল সদস্য এবং উপ মহাসচিব সুলতাল আহম্মেদকে সদস্য সচিব করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কিন্তু ইমাম জাফর শিকদার তার এলাকার বড় ভাই আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমীর হোসেন আমুকে দিয়ে জোরপূর্বক তদন্ত কমিটি পরিবর্তন করে জাফর শিকদারের সুসম্পর্কের ম্যানেজিং বোর্ড সদস্য মাহাবুবুর রহমান তালুকদারকে আহবায়ক করে নিজের পছন্দের লোক দিয়ে তদন্ত কমিটি সংশোধন করে তদন্ত প্রতিবেদন নিজের পক্ষে নিতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে প্রশ্নপত্রের ফাঁসের ঘটনায় তার কোন শাস্তি হয়নি। বরং নীতি ও আদর্শবান সত কর্মকর্তা উপমহাসচিব সুলতান আহমেদ এর ওপর সকল দায় চাপিয়ে তাকে সংস্থা থেকে বিতাড়িত করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন এই মহাদুর্নীতিবাজ ইমাম জাফর শিকদার।
২. বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যুব স্বেচ্ছাসেবকরা ঢাকা শহরে মোট ১৫ টি হাসপাতালে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন (টিকাদান) কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র ৩ টি হাসপাতালে অভ্যন্তরিন তদন্ত করা হয়েছিল। এতে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা অনিয়ম ধরা পড়ে। পরিচালক ইমাম জাফর শিকদার ফেঁসে যাচ্ছেন দেখে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অন্য ১২ টি হাসপাতালে তদন্তই করতে দেননি। এটা সরকারি টাকা। পরিচালক ইমাম জাফর শিকদারের অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে গত ১৬ মার্চ, ২০২৫ তারিখে হেড অফিসে যুব সদস্যদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। যা ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ নোংরা ঘটনা। মানবিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটি অধ:পতনের শেষ সীমানায় নিয়ে গেছেন এই জাফর শিকদার।
৩. যুব ও স্বেচ্ছাসেবক বিভাগে সহশিক্ষা ফান্ড আছে। সারা বাংলাদেশের ভ্যানচাকল, রিক্সা চালক, দিনমজুরের ঘামে উপার্জিত টাকায় তাদের সন্তানদের স্কুল ফি থেকে আসে এই ফান্ড। সেখানেও কয়েক কোটি টাকার দুর্নীতি। ইমাম জাফর শিকদারের দুর্নীতির সহযোগী মোঃ আলাউদ্দিন, এ্যাড. খুরশিদ আলম, লিগ্যাল বিভাগ, আসিফ আলমাস এবং আদিফ, পিএন্ডডি বিভাগ। মাস্তান হিসেবে তিনি কয়েকজন ড্রাইভার এবং পিওনকে ব্যবহার করেন। এখানে উল্লেখ্য পরিচালক ইমাম জাফর শিকদার আওয়ামী সরকারের ১৬ বছরের ১৫ বছর ৬ মাস যুব ও স্বেচ্ছাসেবক বিভাগের পরিচালক/ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমীর হোসেন আমুর আস্থাভাজন হওয়ার তাকে কেও এই বিভাগ থেকে সরাতে পারেনি।
৪. নারী লোভী চরিত্রহীন ইমাম জাফর শিকদার চাকুরীর প্রথম থেকেই যখন যে ডিপার্টমেন্টে গেছেন সেখানেই তার কমপক্ষে একজন করে সুন্দরী সহকর্মী লাগে। মহিলা সহকর্মীদের বিভিন্ন অবৈধ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তার সাথে তিনি দেশের মধ্যে বিভাগীয় জেলায়, এমনকি বিদেশ সফরের মাধ্যমেও অবৈধভাবে দেহ ভোগ করে থাকেন। জাফর শিকদার যখন যুব ও স্বেচ্ছাসেবক বিভাগে যোগদান করেন তখন তৎকালিন নারী সহকর্মী সহকারী পরিচালক (এডি) নুজাত বারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তাদের দুজনের অবৈধ সম্পর্কের কথা অফিসে এবং সব জায়গায় জানাজানি হলে তিনি নিজে বাঁচার জন্য নুজাত বারীকে তার স্থায়ী চাকুরী ছেড়ে দিতে বাধ্য করেন। নুজাত বারী তার কুকর্মের কথা অনেক সহকর্মীকে জানিয়ে গেছেন। কিন্তু ইমাম জাফর শিকদার তার এই অবৈধ যৌনচারীতা এখনও সোসাইটিতে চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০২২ সালের ০৫ মার্চ তৎকালীন জাতীয় সদর দপ্তরস্থ যুব প্রধান তাজনুর আহম্মদ শেঁওত্তি ঐ সময়ে যুব ও স্বেচ্ছাসেবক বিভাগের পরিচালক জাফর শিকদারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, দুর্নীতি ও অনিয়মের লিখিত অভিযোগ দেন। পরে পরিচালক ইমাম জাফর শিকদারের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়। কিন্তু ইমাম জাফর শিকদার আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের দুর্দান্ত ক্ষমতাশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য আমীর হোসেন আমুকে দিয়ে ফোন করিয়ে তদন্ত পর্যন্ত করতে দেননি।
৫. পরিচালক ইমাম জাফর সিকদার শেখ মুজিবের ছেলে হিসাবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। শেখ হাসিনাকে আপা ডাকতেন। তখন তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমুর একান্ত লোক ছিলেন। এখন তিনি বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ লোক হিসাবে পরিচয় দিচ্ছেন। মর্দা কথা ইমাম জাফর সিকদার যাতে সব সময়ই রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সদর দপ্তরে থাকেন এবং নিয়োগ, বদলি সহ বিভিন্ন ধরনের ঠিকাদারি ফাইল নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, এই জন্যই যখন যে দল ক্ষমতায় আসে তখন সেই দলের রঙ ধারণ করেন।
৬. সোসাইটির যুব স্বেচ্ছাসেবক প্রোগ্রামের পরিচালক থাকা অবস্থায় ইমাম জাফর শিকদার কোনো ধরনের কর্মসূচির আয়োজন না করেই যুব ও সহশিক্ষা কার্যক্রমের মিথ্যা তথ্য দেখিয়ে অবৈধভাবে সহশিক্ষার টাকা উত্তোলন করেন। শুধু তাই নয়, নিজে ফেঁসে যাবেন বুঝতে পেরে ইমাম জাফর শিকদার বাকি ১২ হাসপাতালের তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত করেন। সোসাইটির অভ্যন্তরীণ তদন্তে এত অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণের পরও ইমাম জাফর শিকদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
৭. রেড ক্রিসেন্টে ইমাম জাফর শিকদার যোগদানের পর থেকে বেনামে ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টেন্ডার বাণিজ্য করে আসছেন। এস আলম প্রগ্রেসিভ এবং ফারহান ইঞ্জিনিয়ারিং নামের বেনামি তিন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি কাজ বাগিয়ে নিতেন। সোসাইটির জাতীয় সদর দপ্তরে সহশিক্ষা কার্যক্রমের অর্থ দিয়ে প্রথম পর্যায়ে ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ট্রেনিং সেন্টার করার জন্য নামফলক উদ্বোধন করা হয়। পরে অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ৪ থেকে ৫ কোটি টাকার বাজেট পরিবর্তন করে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ট্রেনিং সেন্টার করার জন্য টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
৮. রেড ক্রিসেন্টে যোগদানের পর থেকে তিনি নিয়োগ বাণিজ্য করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সিভি পাঠানোর পর যার সঙ্গে তার বেশি টাকার চুক্তি হয়, তাকেই তিনি নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজে ভর্তি এবং হলি ফ্যামিলি হাসপাতালসহ রেড ক্রিসেন্টের সব অঙ্গপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও ভর্তি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। ইমাম জাফর শিকদার সোসাইটির সাবেক চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তার ফুপাতো ভাই এ এস এম জাহিদুর রহমানকে সোসাইটির প্রশিক্ষণ বিভাগের উপসহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ দেন। আরেক ফুপাতো ভাই সাইদুর রহমান সোহানকে কোস্টাল ডিআরআর প্রকল্পে প্রোজেক্ট অফিসার পদে নিয়োগ দেন। এ ছাড়া সাইদুর রহমানের স্ত্রী হামিদা বানুকে ডিসিআরএম বিভাগের স্লিপ প্রকল্পে কোনো নিয়োগ প্রক্রিয়া ছাড়াই ফাইন্যান্স অফিসার পদে নিয়োগ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
৯. ইমাম জাফর শিকদারের দুর্নীতির সব কাজের সহযোগী অফিস সহায়ক সুমন মিয়া। সুমনকে তিনি যে বিভাগে বদলি হয়ে যান সেখানে নিয়ে যান। এ ছাড়া গাড়িচালক সোহরাব চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন দুই বছর আগে। সোসাইটির গাড়ি না থাকায় অনেক চালক বসে বসে বেতন নিচ্ছেন। এমন অবস্থায় ইমাম জাফর শিকদার তার অবৈধ কাজে সহযোগিতার জন্য ৬৫ হাজার টাকা বেতনে সোহরাবকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছেন। ডিসিআরএম বিভাগের চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ: রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ডিসিআরএম বিভাগের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা দাতাদের অর্থে ৩০টি প্রকল্প চলমান। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে দুস্থ ও অসহায় মানুষকে সহযোগিতার কথা থাকলেও সেই টাকা আত্মসাৎ করে ইমাম জাফর শিদকার নিজে নিচ্ছেন।
১০.ইমাম জাফর শিদকার সোসাইটিতে যোগদানের পর অবৈধ উপায়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এবং তার নামে-বেনামে বিপুল সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ঢাকায় ৩ হাজার স্কয়ার ফুটের ফ্ল্যাট, যার দাম প্রায় ৩ কোটি টাকা, কক্সবাজারে হোটেলের শেয়ার ও ১টি ফ্ল্যাট, পুলিশ প্লাজায় ১টি ফ্ল্যাট, উত্তরার দিয়াবাড়ীতে ১টি ফ্ল্যাট এবং রেড ক্রিসেন্ট সুরমা ভবনে রয়েছে ১টি ফ্ল্যাট। এ ছাড়া রয়েছে বরিশাল, পটুয়াখালীতে জমি-বাড়ি, বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা ও ব্যক্তিগত ২টি গাড়ি।
১১. একাধিক সুত্রে জানাগেছে,৫আগষ্ট গণঅভ্যত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর পরিচালক ইমাম জাফর শিকদার নিজেকে বিএনপির প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক স্বরাট্র মন্ত্রী মো: আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে আত্মীয় দাবী করে রেডক্রিসেন্ট সদর দপ্তরে ত্রাসের সৃষ্টি করেছেন। তিনি এই মর্মে হুমকি দিয়েছেন যে, বর্তমান চেয়ারম্যান ও পরিষদের মাত্র এক মাস মেয়াদ আছে। এরপর তিনিই চেয়ারম্যান হবেন। তার ফাইলও নাকি মন্ত্রণালয়ে প্রসেস হচ্ছে। চেয়ারম্যান হতে পারলে তিনি সবকটাকে সাইজ করবেন। কারো কারো চাকুরী খেয়ে ফেলারও হুমকি দিয়েছেন। তার এ ধরনের কর্মকান্ডে রেড ক্রিসেন্ট সদর দপ্তরে মব আতংক দেখা দেয়।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।