সংবাদ এশিয়া

ইউক্রেনে পশ্চিমা বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাবে পুতিনের হুঁশিয়ারি

1757062325
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,অনলাইন ডেস্ক  : ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর সেখানে পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষের ‘নিরাপত্তা বাহিনী’ মোতায়েনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বৃহস্পতিবার প্যারিসে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার পরদিনই এ ঘোষণা দেন তিনি।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জানান, ইউক্রেনের ২৬ মিত্র দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে স্থল, নৌ বা আকাশপথে সেনা পাঠিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। তবে কোন কোন দেশ এতে অংশ নেবে তা তিনি বিস্তারিত জানাননি।

পুতিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ইউক্রেনে যে কোনো বিদেশি সেনা মোতায়েন করা হলে তারা হবে হামলার বৈধ লক্ষ্যবস্তু। যদিও আপাতত সেনা পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা নেই, তবে এখন যদি সেনা মোতায়েন করা হয়, রাশিয়া তাদের হামলার লক্ষ্য বানাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

ফলে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা আপাতত ক্ষীণই রয়ে গেছে। গত মাসে আলাস্কায় পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার আভাস দিলেও তা আর এগোয়নি। তবে এর পর থেকেই যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের নেতৃত্বে গঠিত ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’ কিয়েভকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার বিষয়ে কাজ শুরু করেছে।

ম্যাক্রোঁ বলেন, এসব সেনা মোতায়েনের উদ্দেশ্য হবে নতুন কোনো বড় আক্রমণ ঠেকানো, ফ্রন্টলাইনে যাওয়া নয়। জেলেনস্কি প্যারিস বৈঠকের সিদ্ধান্তকে ‘প্রথম কোনো বাস্তব পদক্ষেপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

যুক্তরাষ্ট্র এতে কতটা সম্পৃক্ত হবে তা স্পষ্ট করেনি। ম্যাক্রোঁ জানিয়েছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত আকাশপথে সহায়তা দিতে পারে। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের আকাশসীমায় সর্বোচ্চ সুরক্ষার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

ট্রাম্প বলেন, তার পুতিনের সঙ্গে ‘খুব ভালো আলোচনা’ চলছে এবং শিগগিরই আবার কথা বলবেন। শুক্রবার পুতিনও নিশ্চিত করেছেন, তার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘খোলা সংলাপ’ চলছে।

রাশিয়া দাবি করেছে, তাদের সেনারা ইউক্রেনজুড়ে অগ্রসর হচ্ছে। ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে, প্রথমে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে হবে, তারপর বৃহত্তর শান্তিচুক্তির চেষ্টা। তবে রাশিয়া এতে একমত নয়।

ভ্লাদিভোস্তকে এক অর্থনৈতিক ফোরামে পুতিন বলেন, যদি এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যা দীর্ঘমেয়াদি শান্তির পথ তৈরি করে, তবে আমি বিদেশি সেনার উপস্থিতির কোনো প্রয়োজন দেখি না। তিনি আশ্বাস দেন, দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, রাশিয়া সেসব পূর্ণভাবে মানবে। তবে পশ্চিমা দেশগুলো এ বক্তব্যে আশ্বস্ত হয়নি।

পুতিন আরও জানান, তিনি মস্কোয় ইউক্রেনের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক আয়োজন করতে প্রস্তুত এবং নিরাপত্তা দিতেও রাজি। তবে জেলেনস্কি এ প্রস্তাবকে হাস্যকর আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটা প্রমাণ করে পুতিন আলোচনায় আগ্রহী নন। পরিবর্তে কয়েকটি নিরপেক্ষ রাজধানীকে বিকল্প হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে।

জেলেনস্কি বলেন, আমরা যেকোনো ফরম্যাটে সমর্থন করি— দ্বিপক্ষীয়, ত্রিপক্ষীয়। কিন্তু রাশিয়া আলোচনায় বিলম্ব করার চেষ্টা করছে। পশ্চিমা নেতাদের ধারণা, সময়ক্ষেপণ করে রাশিয়া আরও ভূখণ্ড দখল করতে চাইছে।

চীন ও উত্তর কোরিয়ার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর পুতিন দাবি করেছেন, রুশ সেনারা ইউক্রেনের সব ফ্রন্টে এগিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে রাশিয়া জোর দিয়ে বলেছে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় তারাও ‘গ্যারান্টর’ দেশ হিসেবে থাকতে চায়। তবে কিয়েভ ও তার মিত্ররা এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বিবিসিকে বলেন, বিদেশি সেনা, তারা ন্যাটোর হোক বা না হোক, রাশিয়ার জন্য হুমকি। কারণ আমরা ন্যাটোর শত্রু। তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোর আচরণকে ‘যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার উসকানি’ বলে সমালোচনা করেন।

বাস্তবে খুব কম দেশই ইউক্রেনে স্থলসেনা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তো ইতিমধ্যেই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, সেনা পাঠাবে না। ইউরোপীয় কূটনীতিকদের ধারণা, এখন সেনা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিলে সেটা পুতিনের পশ্চিমবিরোধী বর্ণনাকেই শক্তিশালী করবে।

তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার বলেছেন, পশ্চিমা মিত্রদের এখন ইউক্রেনের প্রতি ‘অটুট অঙ্গীকার’ রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রও সমর্থন করছে। রাশিয়ার ওপর চাপ দিয়ে যুদ্ধ শেষ করতে হবে।

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস জানিয়েছেন, প্রথম কাজ হবে একটি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা, এরপর শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া। ন্যাটো প্রধান মার্ক রুত্তে বলেন, ইউক্রেন একটি স্বাধীন দেশ। সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাশিয়ার নয়।

৪০ মাস ধরে চলা রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের মধ্যে পুতিন সম্প্রতি বলেছেন, ‘গুহার শেষ মাথায় আলো দেখা যাচ্ছে’ এবং সংঘাতের অবসান হলে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কয়েকটি বিকল্প রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি ট্রাম্পের প্রশংসা করে বলেন, তিনি পুতিনকে আলোচনায় এনেছেন এবং কোনো পথই বন্ধ করে দেননি।

রাশিয়া শুরুতে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। পূর্ণাঙ্গ শান্তিচুক্তি ছাড়া যুদ্ধ বন্ধ নয়, এমনও বলছে দেশটি।

ফ্রেঞ্চ প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন এলিসি প্যালেসের একটি সূত্র জানিয়েছে, ইতিহাসে এমন অনেক যুদ্ধবিরতি হয়েছে যেগুলো পূর্ণাঙ্গ চুক্তি ছাড়াই টিকে আছে। উদাহরণ হিসেবে কোরীয় উপদ্বীপের সীমারেখার কথা বলা হয়, যেখানে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে শক্ত বার্তা হিসেবে কাজ করছে। সূত্রটির মতে, ইউক্রেনের জন্যও এমনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.