এয়ার টিকিট সিন্ডিকেট: ১৩ ট্রাভেল এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল


ইত্তেহাদ নিউজ,অনলাইন : অধিক চাহিদাসম্পন্ন রুটের টিকিট গ্রুপ বুকিংয়ের নামে অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্লক করে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেরা অথবা সাব-এজেন্টের মাধ্যমে উচ্চমূল্যে বিক্রি করার সঙ্গে জড়িত থাকায় ১৩টি ট্রাভেল এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করেছে মন্ত্রণালয়। এয়ারলাইন্স ও জিএসএদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে তারা টিকিটের মূল্য বৃদ্ধি করতো বলেও মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। সোমবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পর্যটন-৩ শাখার নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ ও যুগ্ম সচিব এ কে এম মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত নিবন্ধন সনদ বাতিল আদেশে ওই ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর লাইসেন্স বাতিল করা হয়। লাইসেন্স বাতিল হওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, গোলাম মাহফুজ চৌধুরীর ফোর ট্রিপ লিমিটেড, মোজাম্মেল হোসেন কামালের হাসেম এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, কাজী মো. মফিজুর রহমানের কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, শরীফ ভূঁইয়ার মাদার লাভ এয়ার ট্রাভেলস, এনামুল হকের জে এস ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর, এটিএম এনামুল হকের বিপ্লব ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্ট, শাহীদুল ইসলাম চৌধুরীর সিটিকম ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্সি, অহিদুল ইসলাম চৌধুরীর কিং এয়ার এভিয়েশন, আবুল বাসারের মেঘা ইন্টারন্যাশনাল এয়ার সার্ভিস, আকবর আলীর আত তাইয়ারা ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, মো. মুজিবুর রহমান আখন্দের এন এম এস এস ইন্টারন্যাশনাল, জাহিদুল ইসলাম চৌধুরীর আর বি সি ইন্টারন্যাশনাল।
নিবন্ধন বাতিল আদেশে বলা হয়েছে, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় কর্তৃক চলতি বছরের ১১ই ফেব্রুয়ারি গঠিত এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিতকরণ এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ৬ মাসের মধ্যে এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত ট্রাভেল এজেন্সিকে চিহ্নিত ও পর্যালোচনা করে গত ২৫শে মার্চ প্রতিবেদন দাখিল করে। উক্ত প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্টভাবে উদ্ঘাটিত হয় অধিক চাহিদাসম্পন্ন রুটের টিকিট অগ্রিম টাকা দিয়ে গ্রুপ বুকিংয়ের নামে অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্লক করে রাখা এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেরা অথবা সাব-এজেন্টের মাধ্যমে উচ্চমূল্যে বিক্রি করার ক্ষেত্রে এয়ারলাইন্স ও জিএসএ সিন্ডিকেটের সঙ্গে ট্রাভেল এজেন্সিরও জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত ট্রাভেল এজেন্সি বর্ণিত সময়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে টিকিটের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে মজুতদারি, কালোবাজারি ও প্রতারণামূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রমাণ রয়েছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের গত ২৬শে আগস্ট পত্রে আইন ও বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে শুনানিতে লিখিত জবাবসহ উপস্থিত হতে বলা হয় কিন্তু অভিযুক্ত এজেন্সির মালিক শুনানিতে উপস্থিত হননি এবং ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো প্রতিনিধি চাহিদামত কাগজপত্রাদিসহ শুনানিতে অংশগ্রহণ করেননি। যা নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের আইনানুগ নির্দেশনার প্রতি অবজ্ঞা ও অবহেলার শামিল এবং একইসঙ্গে বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২ এর বিধি ১০ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ২৭শে আগস্ট চিঠির মাধ্যমে পুনরায় আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য চাহিদা অনুযায়ী তথ্যসহ চূড়ান্ত শুনানির সুযোগ প্রদান করা হয় কিন্তু এজেন্সির মালিক বা কোনো প্রতিনিধি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ব্যতীত কাগজপত্রাদিসহ শুনানিতে বিধি-বহির্ভূতভাবে অনুপস্থিত থাকেন এবং আত্মপক্ষ সমর্থনে ইচ্ছুক নন মর্মে প্রতীয়মান হয়। এতে করে অভিযুক্ত এজেন্সি বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২ এর বিধি ১৫ (আচরণবিধি) অনুসারে (খ), (গ), (ঘ), (চ) এবং (হ) উপবিধিসমূহ এবং ট্রাভেল এজেন্সি নিবন্ধন সনদ ইস্যু ফরম-২ (বিধি ৪ এর উপবিধি-২) এর সঙ্গে সংযুক্ত নিবন্ধন সনদের ১, ৬, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর শর্ত লঙ্ঘন করেছে। তাই বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এর ধারা (২/১) (খ) (গ) এর বিধান এবং বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০২২ এ বর্ণিত বিধি ১০ ও ১৫ লঙ্ঘন এবং নিবন্ধনের গুরুত্বপূর্ণ শর্তাবলি লঙ্ঘন করায় জনস্বার্থে ভোক্তা সুরক্ষা ও আকাশ পরিবহন খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য অভিযুক্ত এজেন্সির নিবন্ধন সনদ বাতিল করা হয়। আদেশে বলা হয়েছে, নিবন্ধন সনদের ৭ নং শর্ত অনুযায়ী লাইসেন্স বাতিল হওয়া এজেন্সি কোনোরকম কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও বলা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে নানা উদ্যোগ নিয়েও লাগাম টানা যাচ্ছে না এয়ার টিকিটের সঙ্গে জড়িত মাফিয়াদের। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে অস্বাভাবিকভাবে টিকিটের দাম বাড়িয়ে যাত্রীদের পকেট কাটছে-এ সিন্ডিকেট। মন্ত্রণালয় বিদেশি এয়ারলাইন্সের জিএসএ ও বেশ কিছু ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে ওঠা কারসাজির অভিযোগের সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য-প্রমাণসহ পেয়েছে। তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ ও শোকজও করা হয়েছে। এ নিয়ে নতুন করে বেশ কিছু নির্দেশনাও দিয়েছে মন্ত্রণালয়। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। বরং উল্টো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মনগড়া মূল্যবৃদ্ধি করে যাত্রীদের পকেট কাটছে। টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে বড় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যগামী শ্রমিকসহ অন্য যাত্রীরা। এ ছাড়া ওমরাহ পালন করতে ধর্মপ্রাণ মানুষ বিমানের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির খেসারত দিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শ্রমিক ও ওমরাহ যাত্রীদের টার্গেট করে মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক অন্তত জিএসএ ও অসাধু ট্রাভেল এজেন্সির মালিক মিলে দেশ জুড়ে একটি বড় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। তারা গ্রুপ টিকিটের নামে ভুয়া তথ্য দিয়ে টিকিট ব্লক করে রাখে। একেকটি ফ্লাইটের দুই-তৃতীয়াংশ সিট ব্লক করে রাখে। এভাবে সিট ব্লক করে রাখলে ফ্লাইটে সিট স্বল্পতা দেখা দেয়। তখন টিকিটের দাম বেড়ে যায়। আর দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিন্ডিকেট ব্লক করা টিকিট বিক্রি শুরু করে। এভাবে কেনা দামের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে তারা টিকিট বিক্রি করে। ট্রাভেল এজেন্সির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিছু এজেন্সি গ্রুপ আকারে যাত্রীর নাম ছাড়া টিকিট ব্লক করে রাখে। কিছু ক্ষেত্রে যাত্রীর নাম দিয়ে বুক করলেও যাত্রার আগে নাম পরিবর্তন করে দেয়। অথচ সরকার গত ফেব্রুয়ারি মাসে যাত্রীর নাম ও পাসপোর্ট কপি ছাড়া বুকিং করা যাবে না বলে নির্দেশনা দিয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায়ও বলা হয়েছে যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর ব্যতীত কোনো টিকিট বিক্রি করা যাবে না। টিকিটের গায়েও তা উল্লেখ থাকতে হবে। আগে যারা নাম ছাড়া টিকিট মজুত করতো তারা আবার সক্রিয় এবং এয়ারলাইন্সের টিকিট অগ্রিম নাম ছাড়া ব্লক করে তারা মজুত করছে- তাই আবারো টিকিটের দাম আকাশচুম্বী। নাম ছাড়া টিকিট বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।