স্বাস্থ্যের ঠিকাদার মিঠু কারাগারে,রিমান্ড শুনানি ১৮ সেপ্টেম্বর


ইত্তেহাদ নিউজ,অনলাইন : আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বাস্থ্য খাতে সিন্ডিকেট করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারে জড়িত অভিযোগে বিতর্কিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে তাকে রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় স্বাস্থ্য খাতের আলোচিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে রিমান্ড শুনানির জন্য আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।
ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা-উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, তার (মিঠু) বিরুদ্ধে দুদকে মামলা রয়েছে। দুদকের চাহিদাপত্র সূত্রে বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে তাকে গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজই তাকে দুদকে হস্তান্তর করা হবে।
সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা মিঠু দেশে ফেরার পর চলতি মাসের শুরু থেকে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। শ্যামলীতে তার মালিকানাধীন ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও বসছেন নিয়মিত।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, নতুন করে স্বাস্থ্যের কেনাকাটায় অরাজকতা তৈরিতে নতুন করে নানা তৎপরতা শুরু করেছেন মিঠু। এ ছাড়া দেশের সম্পদ বিক্রি করে দুবাই ও মালয়েশিয়ায় ব্যবসার বিস্তারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও কাজ করছেন তিনি। নানা কৌশলে দেশের অর্থ-সম্পদ বিদেশে পাচারের জন্য একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে গোপন বৈঠকও করেছেন।
বিষয়টি জানার পর তাকে গ্রেপ্তারে তৎপরতা শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।এতে যোগ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)। মিঠুর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সম্প্রতি মামলাও করেছে সংস্থাটি।
সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে মিঠুর বিরুদ্ধে কৃষি জমি ক্রয়, জমি লিজ, প্লট, ফ্ল্যাট এবং বাড়ি নির্মাণে বিনিয়োগসহ ১৮ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদের প্রমাণ মিলেছে। এ ছাড়া তার বিভিন্ন কোম্পানিতে শেয়ার/বিনিয়োগ, গাড়ি ক্রয়, বিভিন্ন ব্যাংক স্থিতি, স্বর্ণালংকার, আসবাব ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রীসহ মোট ৫৭ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার ২৩৮ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদসহ সর্বমোট ৭৫ কোটি ৮৫ লাখ ৩১ হাজার ৭৩৮ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্যপ্রমাণ মিলেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনাকালীন দেশে স্বাস্থ্যখাতে মিঠুর ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য সামনে আসে। এতে তাকে নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। মামলা-গ্রেপ্তার থেকে বাঁচতে ২০২০ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান মিঠু। কিন্তু ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মিঠুর প্রায় ৫০০ কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে। এ পরিস্থিতিতে দেশে ফিরে আসেন এবং প্রথমে গ্রামের বাড়ি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুর গ্রামে গা ঢাকা দেন। অবস্থা বুঝে এর কিছুদিন পর ঢাকায় এসে স্বাস্থ্য খাতে ফের আধিপত্য বিস্তারের পাঁয়তারা শুরু করেন। এ নিয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন মন্ত্রী ও আমলার সঙ্গে দফায় দফায় তার বৈঠক হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে তৎপর হয় দুদক। সংস্থাটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে মিঠুর সম্পদ জব্দ ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত। পরিস্থিতি প্রতিকূল দেখে ফের আত্মগোপনে চলে যান মিঠু। পরবর্তীতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সিগন্যালে মিঠু গোপনে দেশ ছেড়ে পালান বলে গুঞ্জন ওঠে। এরপর কয়েক বছর তার আর কোনো খোঁজ মেলেনি। সরকার পরিবর্তনের পর পরিস্থিতি বুঝে সম্প্রতি মিঠু দেশে ফেরেন। এরপর রংপুরে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন এবং চলতি মাসের শুরু থেকে ঢাকায় তৎপরতা শুরু করেন।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।