বাংলাদেশ ঢাকা

ফেরির তেল চুরি করেই ভাগ্য বদল মানিকগঞ্জের রহিমের

179782 Untitled 23
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,অনলাইন : আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহিম খান। আওয়ামী লীগের জমানায় দলটির অর্থের জোগানদাতা ছিলেন। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট ফেরিঘাটে এক সময়ে ফেরি থেকে তেল চুরি করে সেই তেল ফেরিতে বিক্রি করাই ছিল তার প্রধান পেশা। তেল চুরির মধ্যদিয়েই খুলে যায় তার ভাগ্যের চাকা। ফেরি থেকে তেল চুরি ওপেন সিক্রেট থাকলেও প্রভাবশালী হওয়ায় বিষয়টি মানুষের মুখে মুখে সীমাবদ্ধ থাকতো। তবে তার তেল চুরির রহস্য উদ্‌ঘাটন হয় ওয়ান ইলেভেনে সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। সে সময় শিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর শামস ফেরি থেকে তেল চুরির রহস্য জনসম্মুখে প্রকাশ করেন। তার সম্পদের উৎস নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা থাকলেও কেউ কিছু বলার সাহস রাখেনি। তবে তার উত্থান সম্পর্কে  অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে অনেক অজানা তথ্য। আলোচিত সমালোচিত রহিমের ৯ মাস আত্মগোপনে থাকার পর মাস দুয়েক আগে গ্রেপ্তার হয়। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ৫ই আগস্ট পাটুরিয়া ঘাটে ছাত্রনেতা রফিকুল ইসলাম রফিক হত্যার আসামিসহ তার কাঁধে রয়েছে একাধিক মামলা।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়া ফেরিঘাট সংলগ্ন দাসকান্দি গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিন খানের ছেলে তিনি। কফিল উদ্দিন পথে ঘাটে ও হাট বাজারে ফেরি করে ডিম বিক্রি করে সংসার চালাতেন। টানাপড়েনের সংসারে তার লেখাপড়া বলতে হাইস্কুলের গণ্ডি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। একসময় আরিচা ঘাটে ওয়াজ উদ্দিন আলী নামে এক তেল ব্যবসায়ীর দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন তিনি। দু’জনের গ্রামের বাড়ি ছিল একই এলাকায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ওয়াজ উদ্দীনের দোকানে কাজ করার পাশাপাশি শিখেছেন তেল বেচাকেনার কলাকৌশল। ঘাটে লঞ্চ, ফেরি ও স্টিমারসহ বিভিন্ন নৌযানে তেল সরবরাহের অন্যতম এলাকাই ছিল ঘাট। ব্যবসা কীভাবে করতে হয় সে বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুবাদে রহিম জড়িয়ে পড়েন তেল চুরির কারবারে। সখ্যতা তৈরি করেন বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ ও লঞ্চঘাটের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে। কার্যত ৮০’র দশকের আগে থেকেই তেল চুরির সিন্ডিকেট তৈরি করে ফেরি থেকে অবাধে তেল চুরির রমরমা বাণিজ্য করতে থাকে। তেলের লাইসেন্সও নিজের নামে করে নেন। ওই সময় ভাগ্য পরিবর্তনে তেল ব্যবসায় ছিল তার প্রধান হাতিয়ার। স্থানীয় সব ধরনের প্রশাসন থেকে শুরু করে এলাকার রথি-মহারথিরা ছিলেন তার টাকার কাছে জিম্মি।

সূত্রমতে এরশাদ সরকারের প্রভাবশালী ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করেন। আরিচা ঘাট কেন্দ্রিক সকল প্রকার সরকারি বেসরকারি কাজ ভাগিয়ে নেন। পদ্মা যমুনা থেকে অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন ও মাটি বেচাকেনা তার মাধ্যমেই চালানো হতো। পরে ২০০২ সালে আরিচা ফেরিঘাটটি স্থানান্তর করা হয় পাটুরিয়ায়। রহিমের গ্রামের বাড়ির কাছে ঘাট চলে আসায় তার ভাগ্যের চাকা আরও বেশি করে খুলতে থাকে। শিবালয় থানার প্রশাসনও ছিল তার হাতের মুঠোয়। ঘাটকেন্দ্রিক ঠিকাদারি ও ইজারাসহ সবকিছুই নামে-বেনামে নিয়ন্ত্রণ করতেন। নিজের জেলা পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাটের পাশাপাশি দৌলতদিয়া ও নগরবাড়ীতেও রাজত্ব করতেন একই কায়দায়। সরকার দেশের সড়ক পথে এক সময় যে সমস্ত সেতুর টোল আদায় করতো তখন প্রায় সময় বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কের টোলগুলোর ইজারা বাগিয়ে নিতেন রহিম। বিকাশ পরিবহন, দ্রুতি পরিবহন, এম আর পরিবহনসহ আরও কয়েকটি কোম্পানির পরিবহনের মালিকানাও ছিল তার।

নৌ ও সড়ক পথে শত শত কোটি টাকার ব্যবসা: সূত্র আরও জানায়, তার ব্যবসার পরিধি শুধু মানিকগঞ্জ এবং ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ নয় সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন নৌপথ ও সড়কপথে বড় বড় ব্যবসা রয়েছে। তার ৫ থেকে ৬টি বড় বড় কার্গোজাহাজ রয়েছে। যা ঢাকা-চিটাগাং ও ঢাকা-খুলনা-ভারতের চ্যানেলের নৌরুটে মালামাল বহন করে আসছে। জাহাজগুলো তার বাবা কফির উদ্দিনের নামে বলে জানা যায়। ঢাকা থেকে চাঁদপুর এবং ঢাকা থেকে ভোলা নৌরুটে চলাচল করছে বিশাল আকৃতির একাধিক লঞ্চ। যেটা রয়েছে তার ছেলেদের নামে। তাছাড়া পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে রয়েছে ছোট বড় কয়েকটি লঞ্চ। ছিল স্পিডবোট ব্যবসাও। নৌপথের ব্যবসার পাশাপাশি সড়ক মহাসড়ক অর্থাৎ বরংগাইল, নবীনগর সাভার, চন্দ্রা মোড়, পাবনার বেড়াসহ বিভিন্ন রোডে কয়েকটি সিএনজি ও পেট্রোল স্টেশন রয়েছে। ঢাকার মোহাম্মদপুরে বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় নামে বেনামে ফ্ল্যাট, নিজস্ব অফিসসহ অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক তিনি। ঢাকায় রয়েছে এসএস পাইপের ফ্যাক্টরি। দেশের বাইরেও রয়েছে তার অর্থ সম্পদ। পাশাপাশি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দু’পাশসহ বিভিন্ন অঞ্চলে তার রয়েছে হাজারো বিঘা জমি। মানিকগঞ্জের বাইরে ও বিভিন্ন জায়গায় তার সম্পদের হিসাব নেই। তাছাড়া ২০১৮ সালে গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে মাদক ব্যবসা ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তার নাম উঠে আসে।

রাজনীতিতে ডিগবাজি: রহিম জাকের পার্টির মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু। দীর্ঘদিন জেলা জাকের পার্টির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর সুযোগ বুঝে ডিগবাজি দেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্ষীয়ান নেতা গোলাম মহিউদ্দিনের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ এবং বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদে আছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির তকমা গায়ে লাগানোর পর তার ব্যবসার পরিধি আরও বেড়ে যায়। সড়ক মহাসড়ক, ঘাট, নদী বন্দরসহ প্রায় সব দপ্তরের ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতেন। কর্তা ব্যক্তিদের ম্যানেজ করতে যেখানে যেটা প্রয়োজন সেটার জোগান দিতেন রহিম। নিজের পাশাপাশি তার ছেলেমেয়ের নামে ছাড়াও স্ত্রীর নামে রয়েছে অঢেল অর্থ সম্পদ।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.