বাংলাদেশিদের ভিসা জটিলতা দেশে দেশে


শীর্ষনিউজ: মামুন চৌধুরী দুইবার থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছেন। ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত ভ্রমণের কাজে তিনি সে দেশে গিয়েছিলেন বলে জানান। তবে সম্প্রতি তৃতীয়বার তার ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এতে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ভিসা প্রত্যাখ্যানের কারণও তিনি জানেন না। শুধু থাইল্যান্ড নয়, এশিয়া, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের ভিসা জটিলতা বেড়েছে। ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান হওয়ার হারও বেড়ে গেছে।
বিদেশে নিয়মিত ভ্রমণ করেন এবং পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশিদের জন্য বিগত দুই-আড়াই বছর ধরে ভিসা জটিলতা দেখা দিয়েছে। গত এক বছরে ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার বেশ বেড়েছে বলেও জানান তারা। বাংলাদেশিদের জন্য যেসব দেশের ভিসা সবচেয়ে বেশি প্রত্যাখ্যান করা হয়, তার মধ্যে আছে—সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, মিসরসহ অনেক দেশ।
ভারতের পর্যটন ভিসা বন্ধ
গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে ভারতের সব ধরনের ভিসা ইস্যু বন্ধ করে দেওয়া হয়। বেশ কিছু দিন বন্ধ রাখার পর শুধু চিকিৎসা এবং ডাবল এন্ট্রি ভিসা সীমিত আকারে চালু করা হয়। এখনও শুধু এই দুই ক্যাটাগরির ভিসাই চালু আছে। তবে সম্প্রতি দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কিছু অতিরিক্ত ভিসা দেওয়া শুরু করেছে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন।
ভারতের ভিসা বন্ধ করার প্রভাব পড়েছে ইউরোপের অনেক দেশে
ঢাকায় ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের দূতাবাস নেই। এসব দেশের ভিসা ইস্যু করা হয় দিল্লিতে অবস্থিত ওইসব দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে। তবে সশরীরে সেসব দেশের দূতাবাসে ইন্টারভিউ দিতে হয়। আর সেজন্য দরকার পড়ে ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা। আবার উচ্চশিক্ষায় ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে কিছু দেশের দূতাবাসে একাধিকবার ইন্টারভিউ দেওয়ার প্রয়োজন হয়।
সেক্ষেত্রে আবেদনকারী ভিসার জন্য বেশ কিছু দিন ভারতেই অবস্থান করা লাগে। পশ্চিম ইউরোপের বেশিরভাগ দেশের ভিসা ঢাকা থেকে ইস্যু করা হলেও পূর্ব ইউরোপের বেশিরভাগ দেশের ভিসা দিল্লি থেকে নিতে হয়। ভারতীয় ভিসা সীমিত হওয়ায় এবং পর্যাপ্ত বিকল্প না থাকায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীদের জন্য এটি একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।সম্প্রতি এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে বেলজিয়াম। বেলজিয়ামের ভিসা আগে ঢাকার সুইডেন দূতাবাস থেকে ইস্যু করা হলেও গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে তা একেবারেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আপাতত বেলজিয়ামের ভিসা ইস্যু হবে দিল্লি থেকে এবং সেখানকার ভিএফএসে সশরীরে কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
ইউরোপের ভিসা সেন্টার স্থানান্তরের আহ্বানে সাড়া নেই
ভিসা জটিলতা নিরসনে গত বছরের ডিসেম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৯টি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ওই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, ভিসা সেন্টার দিল্লির পরিবর্তে ঢাকা অথবা প্রতিবেশী কোনও দেশে স্থানান্তর করা গেলে বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ই উপকৃত হবে।
ওই বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন রাষ্ট্রদূতদের জানান, বাংলাদেশিদের জন্য বুলগেরিয়া তাদের ভিসা সেন্টার ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে স্থানান্তর করেছে। তিনি অন্য দেশগুলোকেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণের আহ্বান জানান।
তবে বাংলাদেশিদের জন্য করোনা মহামারিরপর থেকে ইন্দোনেশিয়ার অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এখন স্টিকার ভিসা সীমিত করা হয়েছে এবং ঘোষণা ছাড়াই ভিয়েতনামের ভিসা ইস্যু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত জুন মাসে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রী আরামানথা ক্রিস্টিয়ান নাসির। তিনি জানান, করোনার পর ভিসার ক্ষেত্রে ইন্দোনেশিয়ায় নতুন প্রক্রিয়া ও পর্যালোচনা শুরু হয়। বাংলাদেশের বিষয়টি ফিরে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি তুলেধ রবেন, যাতে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রাপ্তি সহজ হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিকল্প হিসেবে তৃতীয় কোনও দেশে ভিসা প্রাপ্তির ব্যবস্থার চেষ্টা চলছে। এর মধ্যে রোমানিয়ার ভিসা থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে অবস্থিত দূতাবাস থেকে আবেদন করা যাবে, বুলগেরিয়ার ভিসা ভিয়েতনাম, পাকিস্তান এবং কাজাখস্তানের দূতাবাস থেকে দেওয়া হবে। কাজাখস্তানের ভিসা ব্যাংকক থেকে দেওয়া হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, কোনও দেশ ভিসা না দিলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আসলে কিছু করার নেই। ভিসা দেওয়া না দেওয়া একটা দেশের নিজস্ব বিষয়। আবার ভিসা বন্ধ করে দিলে সেক্ষেত্রে আমরা তাগিদ দিতে পারি বা অনুরোধ জানাতে পারি ভিসা চালু করার।
তবে অপর এক কর্মকর্তা জানান, ভিসা সেন্টার স্থানান্তরের বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই। ভিসা অফিস চালু করা সময় এবং ব্যয়সাপেক্ষ বিষয় বলে কয়েকটি দেশ জানিয়েছে।
২০১২ থেকে আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতা
বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের নাগরিকদের অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় ২০১২সালে সব ধরনের ভিসাবন্ধ করে দেয় সংযুক্তআরব আমিরাত সরকার। এক যুগেরও বেশিসময় ধরে আমিরাতের ভিসাজটিলতা কাটেনি, বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশিদেরজন্য কাজের ভিসা ইস্যুও। কাজেরউদ্দেশ্যে ভিজিট ভিসা নিয়ে সেদেশে বাংলাদেশিদের যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার পরসীমিত করা হয় ভিজিটভিসা। ভিজিট ভিসায় গিয়ে ভিসা ক্যাটাগরিট্রান্সফার করার সুযোগ থাকলেওবিগত কয়েক বছর ধরেসেটিও বন্ধ। তাই বিপাকে পড়েছেনসে দেশে থাকা অনেকপ্রবাসী। গত বছর আমিরাতেজুলাই আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কয়েকজন প্রবাসীবাংলাদেশি বিক্ষোভ করায় সব ধরনেরভিসা ইস্যু বন্ধ করে দেয়আমিরাত সরকার। শুধু স্কিল ভিসাবা হাইপ্রোফাইল ভিসা চালু আছেবর্তমানে।
আরব আমিরাতের ভিসা জটিলতা প্রসঙ্গেসে দেশে কর্মরত ছিলেনএমন সাবেক একজন কূটনীতিক বাংলাট্রিবিউনকে বলেন, আমিরাত সরকার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলেআনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা কখনোই করে না। কিংবাভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কোনও তালিকাপ্রকাশ করে না। অনলাইনেভিসা আবেদনের সুযোগ থাকে, তবে ভিসা আবেদনকরলে প্রত্যাখ্যান করে দেয়।
গত জুনে আমিরাত সরকারেরকর্মকর্তা মেজর জেনারেল সুহাইলসায়িদ আল খালিল ভিসাদেওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধার দিকগুলো আবার তুলে ধরেনপ্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ সহকারী লুৎফে সিদ্দিকীর কাছে। লুৎফে সিদ্দিকী গত ১৭ জুনএক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘‘আমিরাতে ভিসা ও অবস্থানেরনিয়মকানুন ভাঙার ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশের বেশিঘটনা ঘটিয়ে থাকে বাংলাদেশিরা। অথচসরকারি হিসাবে আমিরাতে কাজসহ বিভিন্ন কারণে থাকা বিদেশিদের মাত্রআট শতাংশ বাংলাদেশের নাগরিক।’’
ভিসা জটিলতা কেন হচ্ছে
ভিসা জটিলতা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রণালয়, ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে কথা বলে জানাযায়, ভিসা জটিলতা দুইধরনের। একটি হচ্ছে ট্যুরিস্টভিসা নিয়ন্ত্রণ, আর অপরটি হচ্ছেকাজের ভিসা বন্ধ। বাংলাদেশিদেরজন্য অনেক দেশে এখনট্যুরিস্ট ভিসা ইস্যুতে কড়াকড়িআরোপ করা হয়েছে। অতিরিক্তযাচাই-বাছাই করে ভিসা ইস্যুকরা হচ্ছে। তবে অনেক সময়ধরে বেশ কিছু দেশেরকাজের ভিসা বন্ধ আছে।এগুলো কবে খুলবে তারনিশ্চয়তা নেই।
ভিসা জটিলতা কেন হচ্ছে, এমনপ্রশ্নে ট্রাভেল ব্যবসায়ী ফারুক হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘অনেক দেশেই এখনভিসা রেশিও কমিয়ে দিয়েছে। এর প্রধান কারণভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ভিসার আবেদনকরা এবং ভিসা প্রাপ্তিরপর সে দেশে অতিরিক্তঅবস্থান করা, কিংবা তৃতীয়কোনও দেশে চলে যাওয়া।ট্যুরিস্ট ভিসায় বিভিন্ন দেশে অতিরিক্ত অবস্থানএবং সেসব দেশে গিয়েকাজ খোঁজার পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে।এজন্য মালয়েশিয়ায় ইমিগ্রেশনে এখন কড়াকড়ি, থাইল্যান্ডেরভিসা রিজেক্ট হওয়ার হার বেশি, ইন্দোনেশিয়ার,ভিয়েতনাম ভিসা বন্ধ করেদিয়েছে। এই দেশগুলো আমাদেরসবচেয়ে কাছে অবস্থিত এবংমোটামুটি অর্থ খরচ করলেভ্রমণ করা যায়। কিন্তুএসব দেশই আমাদের জন্যকঠিন হয়ে গেছে। ফলেট্রাভেল ব্যবসার অবস্থা খুব একটা ভালোনা।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘ইউরোপেরদেশগুলোর ভিসা রেশিও তেমনভালো না। যেসব দেশেচাহিদা বেশি, সেসব দেশের ভিসারজন্য ভারতে যেতে হয়। সেটাএকটা হয়রানি আসলে। আবার জার্মানির মতোদেশ দুই বছর পরইন্টারভিউ কল করে।’’
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে কাজ করেছেন এমনএকজন সাবেক কূটনীতিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘আমাদের নাগরিকদের সবচেয়ে বড় সমস্যা— অবৈধভাবেঅতিরিক্ত অবস্থান, কিংবা এক দেশে গিয়েসেখান থেকে তৃতীয় কোনওদেশে অবৈধভাবে যাওয়া। একটি দেশ যখনভিজিট ভিসা বা ট্যুরিস্টভিসা যেটাই দেয়, তার প্রধানশর্ত হচ্ছে—সে দেশ ভ্রমণশেষে নিজ দেশে ফিরেযাওয়া। এই কাজটা অনেকেইকরেন না। হয় ভিসারমেয়াদ শেষ হওয়ার পরওসে দেশে অবস্থান করেন,নয়তো তৃতীয় কোনও দেশে চলেযান।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এইকাজে যে দেশ ভিসাদিচ্ছে, সে দেশের কিন্তুক্ষতি হচ্ছে। যেমন- ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া আমাদের অন-অ্যারাইভাল ভিসাদিতো। এখন বন্ধ। কারণওই একটাই। আবার কিছু কিছুদেশে প্রবেশ করার জন্য বাংলাদেশিরাপ্রচুর জাল কাগজপত্র তৈরিকরে, সেগুলো ব্যবহার করা হয়। কোনওদেশে প্রবেশে সে দেশের যেনিয়ম, সেটা তো অনুসরণকরতে হবে। তা নাকরলে, ওই দেশের সংশ্লিষ্টকর্তৃপক্ষ হয় ভিসা দেবেনা, না হলে প্রবেশকরতে দেবে না।’’
জাল কাগজপত্রে ভিসা আবেদনে সতর্ক করেছে থাই দূতাবাস
সম্প্রতি জাল কিংবা ভুয়াকাগজপত্র দিয়ে ভিসা আবেদন বেড়ে যাওয়ায় সতর্ক করেছে ঢাকার থাই দূতাবাস। দূতাবাসথেকে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়— ‘ভুয়া কাগজদিয়ে ভিসার জন্য আবেদন করলে,তা প্রত্যাখ্যান বা বাতিল করাহবে।’
মিসরে অন-অ্যারাইভাল ভিসা দিলেও বাড়িয়েছে শর্ত
মিসর একসময় বাংলাদেশিদের শর্তসাপেক্ষে অন-অ্যারাইভাল ভিসাদিলেও এখন বেশ কিছুশর্ত জুড়ে দিয়েছে। ঢাকারমিসর দূতাবাস থেকে দেওয়া একনির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘‘বাংলাদেশিপাসপোর্টধারীদের জন্য ‘ভিসা অন অ্যারাইভাল’পাওয়ার শর্তগুলো হলো— যাত্রীর পাসপোর্টেরমেয়াদ কমপক্ষে ছয় মাস থাকতেহবে। যুক্তরাষ্ট্র, শেনজেনভুক্ত দেশ, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য,জাপান, কানাডা অথবা নিউজিল্যান্ডের বৈধও ব্যবহৃত ভিসা থাকতে হবে।সঙ্গে অবশ্যই ফিরতি টিকিট ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টেন্যূনতম ৫ হাজার মার্কিনডলার থাকতে হবে।’’
নির্দেশনায় আরও বলা হয়,‘‘গালফ অঞ্চলের দেশগুলোতে বসবাসকারী বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরাও এই সুবিধা পাবেন,যদি তাদের রেসিডেন্ট কার্ডের মেয়াদ কমপক্ষে ছয় মাস থাকেএবং তারা ‘হোয়াইট কালার জব’ (প্রয়োজনে প্রমাণদেখাতে হবে) করেন। এক্ষেত্রে ওপরে উল্লিখিত সবশর্তই প্রযোজ্য হবে। এ ছাড়াআবেদনকারীদের কায়রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাচাই-বাছাইয়ের পর ২৫ মার্কিনডলার ফি দিতে হবে।’’
এর আগের নির্দেশনায় বলাহয়েছিল ছিল— শুধু যুক্তরাষ্ট্র,শেনজেনভুক্ত দেশ, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য,জাপান, কানাডা অথবা নিউজিল্যান্ডের বৈধও ব্যবহৃত ভিসা থাকতে হবে।
যেসব দেশে কাজের ভিসা নিয়ে জটিলতা
আরব আমিরাত ছাড়াও বিভিন্ন দেশে কাজের ভিসাপ্রাপ্তিতে জটিলতা আছে। ২০১৮ সালের৪ আগস্ট এক বাংলাদেশি বাহরাইনেরএক ইমামকে হত্যা করেন। এরপর থেকে বাংলাদেশিদেরজন্য বন্ধ হয়ে যায়বাহরাইনের শ্রমবাজার। ওই ঘটনার পরউল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছেবাহরাইন সরকার।
দুর্নীতির অভিযোগে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ২০১৮ সালে বাংলাদেশেরজন্য বন্ধ হয়ে যায়।এরপর ২০২১ সালের ১৮ডিসেম্বরে নতুন সমঝোতা চুক্তিরমাধ্যমে সেই বাজার খুলতেসময় লেগেছিল তিন বছর। ২০২২সালের আগস্টে দেশটিতে আবারও বাংলাদেশি কর্মী যাওয়া শুরু হয়। সিন্ডিকেটেরদুর্নীতি ও অনিয়মের কারণেচলতি বছরের ৩১ মে বন্ধহয়ে যায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার।এতে বিএমইটির ছাড়পত্র হওয়ার পরও ১৬ হাজার৯৯০ জন কর্মী যেতেপারেননি। তবে শুধু প্লান্টেশনসেক্টরে কর্মী নিচ্ছে মালয়েশিয়া। এই সেক্টরে কর্মীযাওয়ার হার খুবই কম।
গত বছরের ১৭ অক্টোবর বাংলাদেশিকর্মীদের জন্য বন্ধ হয়েযায় ইতালির শ্রমবাজার। গত ১৭ অক্টোবরঢাকায় ইতালি দূতাবাস থেকে পাঠানো একবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বন্ধের কথা জানানো হয়।এতে বলা হয়, বিপুলসংখ্যকজাল নথি বা ডকুমেন্টেরকারণে ইতালি সরকার গত বছরের ১১অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের নাগরিকদের অনুকূলে ইস্যুকৃত সব কর্ম অনুমোদনের(ওয়ার্ক পারমিট) বৈধতা স্থগিত করেছে, যা যথাযথ যাচাইকরণসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্তবলবৎ থাকবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২৪ সালে ইতালিসরকার ‘ল’ ডিক্রি নম্বর-১৪৫’ জারি করে।এর আওতায় ২০২৪ সালের ২২অক্টোবরের আগে ইস্যু করাসব ওয়ার্ক পারমিট স্থগিত করা হয়।
নতুন এই আইনের বিধানঅনুযায়ী, কেবল প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষেরঅনুমোদন পাওয়া সাপেক্ষেই ঢাকায় ইতালিয়ান দূতাবাস ভিসা অনুমোদন বাবাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ফলেস্থানীয় ইতালি দূতাবাসে জমে থাকা ভিসাঅনুমোদনের জন্য প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষেরসঙ্গে যোগাযোগ করে থাকে, যাসময়সাপেক্ষ। তা সত্ত্বেও এরইমধ্যে তারা প্রায় ৪০হাজার মুলতবি আবেদনের মধ্যে ৮ হাজারের বেশিআবেদন নিষ্পত্তি করেছে। আরও প্রায় ২০হাজার সম্ভাব্য আবেদনকারীর ওয়ার্ক পারমিট এবং এ সম্পর্কিতভিসা প্রক্রিয়াকরণের যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শিগগিরই শুরুহওয়ার কথা রয়েছে। ২০২৪সালের ২২ অক্টোবরের পরথেকে ইস্যু করা ওয়ার্ক পারমিটেকোনও স্থগিতাদেশ না থাকায় ২০২৫সালের ফ্লুসি ডিক্রির আওতায় ওই তারিখের পরেযারা আবেদন করেছেন, তাদের মধ্যে কয়েকশ’ বাংলাদেশি অভিবাসী ইতোমধ্যে ভিসা পেয়েছেন এবংআগামী মাসগুলোতে আরও অনেকে পাবেনবলে আশা করা যাচ্ছে।
২০২৩ সালে বাংলাদেশিদের জন্যশ্রমিক ভিসা বন্ধ করেদেয় ওমান। এরপর ২০২৪ সালেরজুনে ওমান সরকার জানায়,বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য আরোপ করাভিসা নিষেধাজ্ঞা থেকে কিছু শ্রেণিকেঅব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফ্যামিলি ভিসা বা উপসাগরীয়দেশগুলোতে বাস করা বাংলাদেশিদেরভিজিট ভিসা দেওয়া হবে।চিকিৎসক, নার্স, প্রকৌশলী, শিক্ষক, হিসাবরক্ষক পেশাজীবীরা ওমানের ভিসার জন্য আবেদন করতেপারবেন। দেশটিতে বিনিয়োগ করা বাংলাদেশিরাও ভিসাপাবেন। সরকারি সফরের জন্য এবং উচ্চআয়ের পর্যটকদেরও ভিসা দেওয়া হবে। এছাড়া লিবিয়া, সুদান, ব্রুনাই, মরিশাস ও ইরাকে কাজেরভিসা এখন সীমিত বাবন্ধ।
বিদেশের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রেভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনএক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ভিসা দেওয়ার বিষয়টিসংশ্লিষ্ট দেশের সার্বভৌম এখতিয়ার। এ ক্ষেত্রে সরকারেরতেমন কিছু করার নেই।তারপরও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দূতাবাসগুলোকে নিয়মিততাগিদ দেওয়া হয়ে থাকে।