ইত্তেহাদ নিউজ,অনলাইন : চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে প্রতিনিয়ত ঘটছে ভয়াবহ জালিয়াতির ঘটনা। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেও জিপিএ-৫ পাওয়ার নজির রয়েছে। কখনো আবার মেয়ের পরীক্ষা দিচ্ছে ছেলে শিক্ষার্থী। জালিয়াতি করে পুনঃনিরীক্ষণে বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রাপ্ত নম্বর।
কেবল তা-ই নয়, শিক্ষা বোর্ডের গুদাম থেকে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে পাবলিক পরীক্ষায় ব্যবহৃত লাখ লাখ অলিখিত খাতা ও লুজ শিট (অতিরিক্ত খাতা)। তবে সবকিছুই নিছক ‘ছোটখাটো’ ভুল হিসাবে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যদিও পৃথক ঘটনাগুলো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে তদন্ত কমিটি।
যেসব জালিয়াতি প্রকাশ্যে এসেছে, সেগুলো কেবল সংশোধন করেই ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে। ফলে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতরা বরাবরের মতো থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সূত্র জানায়, গত বছরের এসএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী আইসিটি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেই জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করেছিল। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বিষয়টি যাচাই-বাছাই করতে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের দুজন প্রোগ্রামার চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে আনা হয়।
তাদের অনুসন্ধানে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। তারা ওই দুই পরীক্ষার্থীর বিষয়ে যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে নতুন করে আরও ১৫ জনের তথ্য পান। যারা আইসিটি বিষয়ে পরীক্ষা না দিয়েই জিপিএ-৫ পেয়েছিল। ওই সময় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। পরে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করা ১৭ জনের ফলাফল বাতিল করে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
পুনঃনিরীক্ষণে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হয় ১৯ শিক্ষার্থীর : এবারের এসএসসি পরীক্ষার পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফলে খাতার নম্বরের সঙ্গে সার্ভারে প্রকাশিত নম্বরের গরমিল পাওয়া যায়। খাতার চেয়ে সার্ভারে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের বিশেষজ্ঞ দল আনা হয়। তারা যাচাই-বাছাই করে ১৯ শিক্ষার্থীর ৩৪টি খাতায় এমন ব্যবধান পেয়েছেন। যেখানে খাতার চেয়ে সার্ভারে ১০-২০ নম্বর পর্যন্ত বেশি দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় শিক্ষাবোর্ডের উপপরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা) অধ্যাপক মুহাম্মদ একরামুল হককে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
১০ লাখ টাকার বিনিময়ে মেয়ের পরীক্ষা ছেলে দেওয়ার অভিযোগ : গত ৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদের কাছে নাঈম চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে খাগড়াছড়ির শহীদ লে. মুশফিক হাইস্কুলের পরীক্ষার্থী সাদিয়া জাহান লাভলী, রোল নং-৭১৪৭৬৮, রেজিস্ট্রেশন নং-২১১৪৪৬৯২১৭-এর নাম পরিবর্তন করে পিয়াল আশরাফ শান্তর নামে প্রবেশপত্র তৈরি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সন্তোষজনক না হওয়ায় চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবু ছালেহ মোহাম্মদ নঈম উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে অধিকতর তদন্ত চলমান রয়েছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী বলেন, পিয়াল আশরাফ শান্ত ২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে গণিতে ফেল করেছিল। ওই বছর তার প্রবেশপত্রে সব তথ্য ঠিক ছিল কিন্তু ছবি এসেছিল মেয়ের। তখন সে সংশোধন করেছিল। এবার যখন একটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে ফরম ফিলআপ করেছে, তখন আবারও মেয়ের নামে চলে এসেছে। পরীক্ষার সময় প্রবেশপত্রে হাতে লিখে তা সংশোধন করে দিয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরে কম্পিউটার শাখার ভুলের কারণে তার রেজাল্টেও মেয়ের নাম চলে এসেছে। এখানে ১০ লাখ টাকা ঘুস নেওয়ার যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন।
এ প্রসঙ্গে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, পুনঃনিরীক্ষণে তিনটি জিনিস দেখা হয়। যোগফল ভুল হয়েছে কিনা, সবগুলো উত্তরের নম্বর দেওয়া হয়েছিল কিনা এবং ওএমআরে দেওয়া যোগফল অর্থাৎ ঠিকমতো বৃত্ত ভরাট হয়েছে কিনা। এবারের পুনঃনিরীক্ষণে এগুলো যাচাই-বাছাই করার সময় কিছু গরমিল পাওয়া যায়। পরে কুমিল্লা বোর্ডের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে ১৯ জন শিক্ষার্থীর ৩৪টি বিষয়ে গরমিল ধরা পড়েছে। সেগুলো সংশোধন করা হয়েছে।
গুদাম থেকে পরীক্ষার সাড়ে ১০ লাখ খাতা ও লুজ শিট গায়েব: চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের গুদাম থেকে ৬ লাখ খাতা এবং সাড়ে ৪ লাখ লুজ শিট উধাও হয়ে গেছে। গুদামে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বিশেষায়িত খাতা থাকার কথা ছিল ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ১৮৯টি। কিন্তু গণনার পর ১০ লাখ ৪৭ হাজার খাতা পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৭৯০টি অতিরিক্ত খাতা বা লুজশিটের স্থলে পাওয়া যায় সাড়ে ৮ লাখ খাতা।
গায়েব হয়ে যাওয়া খাতা ও লুজ শিটের কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে পুরো শিক্ষাবোর্ড। ফল জালিয়াতি করার ক্ষেত্রে এসব খাতা ব্যবহার হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর আগে ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় নিজের ছেলের ফল জালিয়াতি করেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের তৎকালীন সচিব অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্রনাথ। পরে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা বিচারাধীন।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের গুদামে কী পরিমাণ খাতা মজুদ আছে, তা গত ৩০ বছরেও হিসাব করা হয়নি। আমি যোগ দেওয়ার পর এই স্টক মেলানোর জন্য একটি কমিটি করেছি। তারা প্রাথমিকভাবে সাড়ে ১০ লাখ উত্তরপত্র ও লুজ শিট কম থাকার বিষয় জানিয়েছে। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেলে বিস্তারিত জানা যাবে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার থানায় জিডি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমার সময়ের প্রতিটি ঘটনার পৃথক কমিটি করা হচ্ছে। প্রতিবেদন সন্তোষজনক না হলে অধিকতর তদন্ত করা হচ্ছে। অপরাধী যদি বোর্ডের হয় তাহলে বোর্ডের আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর বোর্ডের বাইরের হলে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত