চাকরি না করেই কোটি টাকা হাতিয়ে নিল গণপূর্তের ১১ প্রকৌশলী


ইত্তেহাদ নিউজ,অনলাইন : গণপূর্ত অধিদপ্তরে আবারো উঠে এসেছে এক ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র। অভিযোগ রয়েছে, অধিদপ্তরের ১১ জন প্রকৌশলী চাকরি না করেও ব্যাকডেট দেখিয়ে সোয়া তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিষয়টি আদালতের স্থগিতাদেশের মধ্যেই ঘটেছে, যা নজিরবিহীন অনিয়ম হিসেবে তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি করেছে। ইতিমধ্যেই এ ঘটনা রাজধানীর সচেতন মহলে টক অব দ্য সিটিতে পরিণত হয়েছে।
সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী নবম গ্রেডে যোগদানকারীদের পদোন্নতির বিধান থাকলেও, ষষ্ঠ গ্রেডে সরাসরি নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের জন্য এমন সুযোগ নেই। কিন্তু গণপূর্তের এই ১১ প্রকৌশলী নিয়ম ভেঙে নির্বাহী প্রকৌশলী (৫ম গ্রেড) পদে উন্নীত হয়েছেন। বাস্তবে তাদের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী থাকা উচিত ছিল।
অভিযোগ রয়েছে, এই অবৈধ পদোন্নতি ও নিয়োগে প্রভাব বিস্তার করেছেন সাবেক পূর্ত সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকার, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী কবির আহমেদ ভূঁইয়া, রফিকুল ইসলামসহ প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলের কয়েকজন ব্যক্তি। তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা প্রাইজ পোস্টিং দখল করেছেন। বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী মো. শামীম আখতারও এই অনিয়মে ভূমিকা রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
রিটকারী ১৭ জন কর্মকর্তার পদ সংরক্ষণ করতে আদালতের নির্দেশ থাকলেও, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় তা উপেক্ষা করেছে। বরং অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের বিসিএস কর্মকর্তাদের ঊর্ধ্বে জ্যেষ্ঠতা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আদালতের প্রতি প্রকাশ্য অবজ্ঞা ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদোন্নতি কোনোভাবেই বিধিসম্মত হয়নি। তাদের মতে, এর পেছনে বড় কোনো প্রভাবশালী গোষ্ঠীর ইন্ধন ছিল। অন্যথায় এমন ভয়াবহ বিধিভঙ্গ সম্ভব হতো না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের এক কর্মকর্তা বলেছেন, চাকরি না করেই অর্থ তোলা এবং আদালতের স্থগিতাদেশ অমান্য—এ দুটি বিষয়ই দুর্নীতির নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। তার মতে, দুদককে অবিলম্বে তদন্ত করে আত্মসাৎকৃত অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত নিতে হবে এবং দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
এদিকে, প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে আরও নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গণপূর্ত থেকে বেতন নেয়ার পাশাপাশি তিনি একই সময়ে বিআইডাব্লিউটিএ থেকেও বেতন উত্তোলন করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। একজন সরকারি কর্মকর্তা কীভাবে একসাথে দুটি প্রতিষ্ঠানের বেতন নেন—সে প্রশ্ন এখন আলোচনায়।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, অবৈধ উপার্জনের মাধ্যমে কিছু প্রকৌশলী রাজধানীতে প্রভাবশালী ক্লাবের সদস্যপদ নিয়েছেন এবং ঢাকায় স্থায়ীভাবে অবস্থান করছেন, যদিও তাদের পোস্টিং বাইরে। এছাড়া, প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতা নিয়ে পদায়ন ও বদলির জন্য কোটি কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগও উঠেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের অনিয়ম অব্যাহত থাকলে প্রশাসনে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে এবং সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা আরও দুর্বল হবে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।