নেপাল যেতে কেন ভয় পাচ্ছেন পর্যটকরা?


ইত্তেহাদ নিউজ,অনলাইন : বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা নেপালে আসেন হিমালয়ে আরোহন করতে, বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা আসেন তীর্থস্থানে ভ্রমণ করতে, আবার অনেকেই পাহাড়ি এই দেশটিতে আসেন ছুটি কাটাতে।
গত বছর, নেপাল ভ্রমণ করেছেন অন্তত ১০ লাখ পর্যটক। এই বছর, নেপাল আশা করেছিল তারা ১৫ লাখ পর্যটককে স্বাগত জানাবে।
কিন্তু সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে জেনজি’র আন্দোলন, সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনা দেশটিতে পর্যটকদের ঢল থামিয়ে দেয়।
দেশটির কর্মকর্তা এবং পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট নেতারা বলেছেন, সহিংসতা এমন এক সময়ে হয়েছে যখন নেপালে শরতের মৌসুম চলছে।
আর এই সময়টাই নেপালের সবচেয়ে বড় পর্যটন মৌসুম। তাই আন্দোলন বেশ বিরূপ ফেলেছে দেশটির অর্থনীতির অন্যতম বড় এই উৎসে।
আন্দোলনের কয়েক সপ্তাহ পর, নেপালের পর্যটন বোর্ড যদিও দাবি করে আসছে যে, তাদের দেশ ভ্রমণকারীদের জন্য একেবারে নিরাপদ। অথচ ইতোমধ্যেই পর্যটক আগমনের হার ৪০ শতাংশ কমে গেছে।
নেপালের পর্যটন বোর্ডের প্রধান দীপক রাজ জোশী বিবিসিকে বলেছেন, আন্দোলনের আগে, নেপালে প্রতিদিন অন্তত তিন হাজার দুইশ পর্যটকের সমাগম হতো, অথচ এখন এটি নেমে এসেছে প্রায় ১৩শ’র কোঠায়।
নেপালে পর্যটক বাড়ানোর জন্য দেশটির সরকারের প্রচারণা ‘ভিজিট নেপাল ২০১১’ এর সমন্বয়কারী যোগেন্দ্র শাক্যর মতে, যে পরিসংখ্যান আমি ভ্রমণ এজেন্টদের কাছ থেকে পেয়েছি তা হলো, সেপ্টেম্বরের ৮, ৯ এবং ১০ তারিখের পর এই মাসের ৫০ শতাংশ বুকিং বাতিল হয়ে গেছে। অক্টোবরের ২৫ শতাংশ বুকিং বাতিল হয়েছে এবং আরও ২৫ শতাংশ স্থগিত হয়ে আছে।
নেপালের মোট জিডিপির প্রায় আট শতাংশ আসে পর্যটন শিল্প থেকে এবং এই খাত থেকে দেশটি প্রতিবছর প্রায় ৩০০ বিলিয়ন রুপি আয় করে।
এটি দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস। নেপালে চাকরির ১০ শতাংশও নিশ্চিত করে এই পর্যটন শিল্প।
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হোটেল, দোকানপাট ও এয়ারলাইন্স
নেপালের এই আন্দোলনের সরাসরি ও তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে দেশটির আতিথেয়তা খাতে।
নেপালের শীর্ষস্থানীয় হোটেল চেইন কেজিএইচ, এক দিনে প্রায় ৩০০ বুকিং হারিয়েছে।
এই মৌসুমে, বুকিংয়ের হার প্রায় ৭০ শতাংশ হওয়া উচিত। এখন এটি নেমে এসেছে ২০ শতাংশে, বলেছেন কেজিএইচ গ্রুপের প্রধান নির্বাহী রাজন শাক্য।
এটি শুধু হোটেল নয়। সবজির দোকান থেকে শুরু করে পাহাড়ের ট্রেকিং ট্রেইল পর্যন্ত, সব জায়গায় প্রভাব ফেলেছে, বলেন তিনি।
হংকংয়ের ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারলাইন্স সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত নেপালের সব ফ্লাইট স্থগিত করেছে।
কেননা বিক্ষোভকারীরা সেখানকার একটি হোটেল ভাঙচুর করেছে যেখানে ওই এয়ারলাইন্সের ক্রুরা অবস্থান করতো।
পলাতক বন্দিরা নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করেছে
যখন নেপালের পর্যটন কর্তৃপক্ষ বিশ্বকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে যে দেশটি আবার ভ্রমণের জন্য নিরাপদ হয়ে উঠেছে, তখনও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ পুরোপুরি কাটেনি।
এর বড় কারণ, নেপালের ২৭টি কারাগার থেকে হাজার হাজার বন্দি জেনজি আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে পালিয়ে গেছে।
দেশটির কারা ব্যবস্থাপনা বিভাগ, অভিবাসন বিভাগকে এক হাজার সাতশ’র বেশি পলাতক বিদেশি বন্দির নাম কালো তালিকাভুক্ত করতে অবহিত করেছে।
কর্তৃপক্ষের মতে, তাদের মধ্যে ১৫শ জন ভারতীয়, যাদের কাছে পাসপোর্ট বা আধার কার্ডের (জাতীয় পরিচয়পত্র) মতো কোনো পরিচয়পত্র নেই। এখনও প্রায় সাড়ে সাত হাজার বন্দি কারাগারের বাইরে রয়েছে।
জেনজি আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সহিংসতায় শত শত আগ্নেয়াস্ত্রও লুট হয়েছে, যদিও পুলিশ বলছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইতোমধ্যে উদ্ধার করতে পেরেছেন তারা।
নেপালের পর্যটন ও ভ্রমণ শিল্প সংস্থা নেপাল অ্যাসোসিয়েশন অব ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল এজেন্টস (নাট্টা) এর সভাপতি কুমারমণি থাপালিয়া বলেছেন, হাজার হাজার অপরাধী কারাগার থেকে পালিয়ে গেছে এবং পুলিশের অনেক অস্ত্র লুট হয়েছে।
পর্যটনের প্রধান মৌসুম ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে, এই সংকট দীর্ঘ সময় ধরে চলবে কিনা এই ভেবে আমরা উদ্বিগ্ন।
পর্যটন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী দীপক রাজ জোশী জোর দিয়ে বলেছেন যে অতীতে বিদেশি পর্যটকদের কখনো টার্গেট করা হয়নি।
কিন্তু মার্চে নির্বাচন হওয়ার কারণে, পর্যটন অপারেটররা আশঙ্কা করছেন পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হতে পারে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী, ট্যাক্সিচালক থেকে শুরু করে ট্রেকিং গাইড পর্যন্ত সবার কথা একটাই––পরিস্থিতি আবার অশান্ত হয়ে উঠলে তারা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়বেন।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।