ইত্তেহাদ নিউজ,অনলাইন : দ্রুত যোগ্য ব্যক্তিদের কমিশনার নিয়োগ দিয়ে তথ্য কমিশনের দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা অবসানের দাবি জানিয়েছে তথ্য অধিকার ফোরাম। পাশাপাশি তথ্য কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা ও পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক সম্পদ বরাদ্দের সুপারিশ দিয়েছে সংস্থাটি।
সংস্থাটি বলছে, কিছু সরকারি কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তথ্য অধিকারের আবেদন গ্রহণ করতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, তথ্য অধিকার আইন বাতিল করা হয়েছে এবং এটি আর কার্যকর নেই। কিছু জেলায় স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা রাজনৈতিক শক্তির হস্তক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকছেন।
আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস উপলক্ষে রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত সেমিনারে এমন অভিমত তুলে ধরে সংস্থাটি।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, টিআইবি পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ইউনেস্কোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি সুজান ভাইজ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. দাউদ মিয়া এনডিসি। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব (সংযুক্ত) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন তথ্য অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক শাহীন আনাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের উপ-পরিচালক রুহী নাজ, সঞ্চালনা করেন নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে রুহী নাজ বলেন, নির্বাচন ও দুর্যোগ সম্পর্কিত তথ্য জানানোর জন্য ফাস্ট ট্র্যাক তথ্য অধিকার মেকানিজম চালু করতে হবে। পরিবেশগত তথ্যকে জরুরি হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করতে হবে। হুইসেলব্লোয়ারদের সুরক্ষা জোরদার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আইন পাস হওয়ার পর গত ১৬ বছরের বেশিরভাগ সময় রাষ্ট্র এটি কার্যকর করার প্রচেষ্টা কম দেখিয়েছে। প্রধান তথ্য কমিশনার এবং তথ্য কমিশন না থাকার কারণে তথ্য কমিশনের কার্যকারিতা ব্যাহত হওয়ায় সরাসরি জনগণের এই অধিকারর প্রয়োগের ক্ষমতাকে দুর্বল করেছে, যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার সুযোগ নষ্ট করেছে এবং পুরো শাসন ব্যবস্থার ক্ষতি করেছে। এ জন্য প্রথম ও সবচেয়ে জরুররি কাজ হলো অবিলম্বে প্রধান তথ্য কমিশার এবং দুজন তথ্য কমিশনারের পদ পূরণ করা।
তিনি যোগ করেন, কমিশন না থাকায় তথ্য চাওয়া নাগরিক এবং তথ্য প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ উভয়েই একটি অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে। তথ্য কমিশন দ্বারা মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাগরিকদের তথ্যের আবেদনের উত্তর দিতে কম আগ্রহী। যারা আবেদনের মাধ্যমে তথ্য চাইবেন, তাদের মাঝে এমন ধারণা জন্ম নেয় যে, আবেদন করে কোনো লাভ হবে না।
ফলে তথ্য অধিকার আইন এবং এটি ব্যবহার করে কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম নজরদারির মাধ্যমে শাসনব্যবস্থা উন্নত করতে নাগরিকদের আগ্রহ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তথ্য কমিশন না থাকায় অনেক সরকারি কর্তৃপক্ষের তথ্য অধিকার আইনের প্রতি মনোভাবে পরিবর্তন এসেছে এবং তাদের মধ্যে তথ্য অধিকারের আবেদনে সাড়া না দেওয়ার একটি প্রবণতা দেখা গেছে, এমনকি আপিলের পরেও তারা গ্রাহ্য করছেন না।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব (সংযুক্ত) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা সমালোচনাকে ভয় পায়। আমরা মনে করি সবকিছু ভালোভাবে করছি। কিন্তু ভালোর মধ্যেও যে দুর্বলতা থাকতে পারে সেটা আমরা জানি না। অনেক সময় বুঝেও না বোঝার ভান করি।
কমিশন গঠন না হলেও তথ্য অধিকার আইন মনিটর করার জন্য আমাদের ওয়ার্কিং গ্রুপ আছে বলে জানান এ সচিব। তিনি বলেন, যেটা কেবিনেট ডিভিশনে আছে। সামগ্রিকভাবে ভালো কিছু আছে। খারাপ যা আছে তা চিহ্নিত করার এখন সময়। সুশাসনে তথ্য অধিকার আইন গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, সুন্দর আইন আছে। কিন্তু এটা বাস্তবায়নের দিক দিয়ে খুবই দুর্বল। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বদলি হচ্ছেন- এটি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের। আবার দ্রুত তথ্য দিতে হবে এই সচেতনতা কর্মকর্তার মধ্যে নেই।
এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. দাউদ মিয়া বলেন, আমি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চাই। কিন্তু যারা তথ্য নিতে আসছেন তারা সঠিকভাবে আসছেন কি না, আবেদনকারী যে তথ্য চাচ্ছেন সেই তথ্যের রেলিভেন্সি আছে কি না তা, আইনে আছে কি না সেটা দেখতে হবে।
তথ্য পাওয়ার আগ্রহ ক্রমাগতভাবে বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ওপেন করে দিতে হবে। কিছু তথ্য প্রাইভেট থাকবে। ইন্টিলেকচ্যুয়াল প্রপার্টিতে একজনের বিনিয়োগ, শ্রম থাকে। সেখানে যে তথ্য জেনারেট হয় সেই তথ্য তো আমি দিতে পারি না।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এ সময় বলেন, এর আগে যে পাতানো নির্বাচন কমিশন হয়েছিল, পাতানোভাবে গঠন করা হয়েছিল। এজন্য আমি তথ্য কমিশনে গিয়েছি। কিন্তু তথ্য পাইনি। কার নাম কে প্রস্তাব করেছে এটা গোপন তথ্য । এটা এখনো পাইনি। আমি আদালতে গিয়েছি। জানি না পাব কি না।
২০১৮ সালের নির্বাচনের জালিয়াতি সুজন তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে উদঘাটন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বহু কষ্ট করে ২০১৮ সালের নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করেছি। আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি ২১৮ টা সেন্টারে শতভাগ ভোট পড়েছে। প্রায় ১২০০ সেন্টারে বিএনপি শূন্য ভোট পেয়েছে। এমনকী আওয়ামী লীগ ও ০ ভোট পেয়েছে দুটো সেন্টারে। যার ফলে স্বৈরাচার বিতাড়নের ক্ষেত্রে যে ন্যারেটিভ তৈরি করা দরকার; যে তারা একদিকে অবৈধ, আরেকদিকে ভোটাধিকার হরণ করেছে, এই ন্যারেটিভগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
টিআইবি পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারি তথ্য সরকারের কর্মকর্তার তথ্য নয়। এ তথ্য জানার অধিকার জনগণের আছে। কিন্তু অনেক সময় জনগণকে তথ্য দেওয়া হয় না। অনেকে বলছেন যারা তথ্য দেয় না তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এ বিষয়ে আইনের নির্দেশনা আছে। কিন্তু যারা তথ্য চায় তাদের শাস্তি দেওয়া হয়।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত