বাংলাদেশ বরিশাল

বানারীপাড়ায় কৃষকদল নেতা আব্দুল লতিফের হত্যাকান্ড নিয়ে চলছে বিএনপির রাজনীতি

WhatsApp Image 2025 09 28 at 16.57.08 0d9d4bb1 519x337 1
print news

বরিশাল অফিসবরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার করফাকর গ্রামে এক বিএনপিকর্মীর মারধরে সৈয়দকাঠী ইউনিয়ন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ (৫৫) নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে চলছে রাজনীতি। দুই বিএনপি কর্মীর তর্কাতর্কীর জেরে এই ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে মামলায় আসামী করা হয়েছে কয়েকজন জামায়াতের নেতাকর্মীকে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ইব্রাহীম হাওলাদার বলেন, শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে করফাকর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে স্থানীয় বিএনপি কর্মী দেলোয়ার হোসেন ঘরামীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় আব্দুল লতিফের। একপর্যায়ে দেলোয়ার হোসেন ঘরামী কয়েকটি থাপ্পর মারেন আব্দুল লতিফকে। এরপর আবদুল লতিফ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে উদ্ধার করে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এখানে শুরু থেকেই উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় আল মামুন, ইসমাইল চৌকিদার, হিরু হাওলাদার ও মনির সহ আরো অনেকে। অথচ দায়েরকৃত মামলাটিতে প্রকৃত প্রত্যক্ষদর্শী এসব ব্যক্তিদেরকে স্বাক্ষী রাখা হয়নি।
তিনি বলেন, আবদুল লতিফকে চরথাপ্পর মেরেছে দেলোয়ার। কোন সংঘবদ্ধ হামলার ঘটনা দেখিনি। ওখানে উপস্থিত অন্যান্যরা উভয়কে ছাড়িয়ে দিয়েছে। আমি নিজে আবদুল লতিফকে হাসপাতালে নিতে সাহায্য করেছি। অথচ মামলায় আমাকেও আসামী করা হয়েছে। তাছাড়া জামায়াতের কয়েকজন নেতাকে আসামী করা হয়েছে যারা আদৌ সেদিন ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। এমনকি মসজিদের ইমাম সাহেবকেও আসামী করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, অভিযুক্ত দেলোয়ার একজন বিএনপি কর্মী। গত ৬ সেপ্টেম্বর বিএনপির কমিটি গঠন অনুষ্ঠানে তার ছিল সরব উপস্থিতি। সেই ছবি এখনো অনলাইন ও ফেসবুকে রয়েছে।
করফাকর বায়তুল আমান জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা জাহিদুল ইসলাম বলেন, আবদুল লতিফ ভাই আমার মসজিদের মুসল্লী ছিলেন। আসরের নামাজের পর মারামারির সংবাদ পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। কিন্তু ততক্ষণে লতিফ ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। অথচ আমাকেও এই মামলায় আসামী করা হয়েছে। আমি অত্যন্ত আশ্চার্যম্বিত হয়েছি। তাছাড়া এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে রমরমা মামলা বাণিজ্য। নিহতের পরিবারকে জিম্মি করে মামলায় নীরিহ জামায়াতের লোকদের আসামী করে এই বাণিজ্য করছে একটি মহল। এ ঘটনায় অসংখ্য নির্দোষ পুরুষ এখন বাড়িছাড়া ।
ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী আল মামুন বলেন, যেহেতু মামলা হয়েছে। তাই অযথা এই মুহুর্তে কোন কথা বলে বিপদে পড়তে চাইনা। কেননা এলাকায় অনেকেই এখন আতঙ্কে আছে।
সৈয়দকাঠী ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মোহাম্মদ ফেরদাউস বলেন, ঘটনার দিন আমি ছিলাম উজিরপুরে। সেখান থেকে আমি এলাকায় ফিরে মৃধাবাড়ি মসজিদে আসরের নামাজ পড়ি। এরপর শুনতে পাই করফাকর স্কুল প্রাঙ্গনে মারামারি হয়েছে। আমি আদৌ ঘটনাস্থলেই যাইনি। অথচ আমি সহ জামায়াতের সাবেক ইউনিয়ন আমির, সেক্রেটারি ও ওয়ার্ড সভাপতিকে আসামী করা হয়েছে। তাছাড়া বিএনপি নেতারা আমাদেরকে আসামী করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে এলাকায় দফায় দফায় মিছিল বের করে।
তিনি আরো বলেন, মামলায় বাদীপক্ষকে জবরদস্তি করে জামায়াতের লোকদেরকে আসামী দিয়েছে বিএনপি নেতারা। এতে একদিকে নিরীহ লোকজন হয়ারানি হচ্ছে। অপরদিকে ন্যায়বিচার ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া অভিযুক্ত দেলোয়ার একজন বিএনপি কর্মী। তাকে এখন জামায়াত সাজিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা চলছে।
সৈয়দকাঠী ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক সভাপতি নাজিম উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি ঘটার অনেক সময় পরে আমি খবর পেয়েছি। অথচ আমাকেও আসামী করা হয়েছে। স্থানীয় বিএনপি নেতারা এটিকে নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে। তারা নিহতের পরিবারকে সহযোগিতার আশ্বাস ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জিম্মি করে নির্দোষ লোকগুলোকে আসামী দিয়েছে। জামায়াতের উপরে দায় চাপিয়ে তারা রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা চালাচ্ছে। নিরপেক্ষ তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে। মামলার বাদী ও নিহতের স্ত্রী পারভীন বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, আমি তিনজন আসামীর নাম দিয়েছি। এই তিনজনের মধ্যে জামায়াতের কারো নাম ছিলো না, অন্যান্য নাম অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে পুলিশ ও বিএনপি নেতারা বলতে পারবেন। আমি ন্যায় বিচার চাই।

এ বিষয়ে সৈয়দকাঠী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, যেসব লোকদের আসামী করা হয়েছে তারা অনেকে ঘটনাস্থলে ছিল, অনেকে কাছাকাছি ছিল। কেননা আসামীরা সকলেই করফাকরের বাসিন্দা। আমরা এটা নিয়ে রাজনীতি করার ইচ্ছা থাকলে তো পুরো উপজেলা জামায়াতের লোকজনকে আসামী দিতে পারতাম, তা তো দেইনি।
বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ মৃধা বলেন, আমরা এটা নিয়ে কোন রাজনীতি করছিনা। ভুক্তভোগী পরিবারকে সহযোগিতা করছি। কেননা আবদুল লতিফ ছিল দলের একজন নিবেদিত ব্যক্তি। হত্যাকারী দেলোয়ার বিএনপি করতোনা, সে জামায়াতের সমর্থক বলে মন্তব্য করেন রিয়াজ মৃধা।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আরাফাত হাসান বলেন, মামলাটি তদন্তনাধীন আছে। তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বানারীপাড়া থানার ওসির দায়িত্বে থাকা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শতদল মজুমদার বলেন, হ্যাকান্ডের পর ভুক্তভোগী পরিবার মামলা দিয়েছে। আসামী ও স্বাক্ষীদের নাম তারাই দিয়েছে। তবে কোন নির্দোষ ব্যক্তি আসামী হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই আমরা প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনবো।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.