ভাণ্ডারিয়ায় পরিবার পরিকল্পনা দপ্তর:পারিশ্রমিক-ভ্রমণভাতায় কমিশন বাণিজ্য,তদন্ত কমিটি গঠন


ইত্তেহাদ নিউজ,পিরোজপুর: ভাণ্ডারিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা শিল্পী হালাদার ও পরিবার পরিকল্পনা সহকারী হাসিনা খানমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। দপ্তরের ৪০ জন মাঠকর্মী নানা অভিযোগ তুলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ভাণ্ডারিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা শিল্পী হালদার কর্মস্থলে যোগদানের পর থেকে মাঠকর্মীদের কারণে অকারণে হয়রানি করছেন। বিভিন্ন অজুহাতে তাদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন। টাকা না দিলে তাদের ফাইল আটকে হয়রানি করছেন। কর্মচারীদের পারিশ্রমিক বিল, ভ্রমণভাতা পেতে হলে তাকে ৩৫% হারে কমিশন দিতে হয়। না হলে ভ্রমণভাতা পাশ হয় না।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের অফিসের আসবাবপত্র ক্রয় বাবদ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। সম্প্রতি মাঠকর্মীদের অভিযোগের পরে একটি চেয়ার ও দুটি পর্দা কিনে আসবাবপত্রের টাকা আত্মসাৎ ধামাচাপা দেওয়ার প্রয়াস পেয়েছেন। স্থায়ীকরণ আদেশ জেলা কর্মকর্তার নির্দেশ থাকলেও তার চাহিদামতো অর্থ প্রদান না করলে সে আদেশ সার্ভিসবুকে ওঠানো হয় না। নির্ধারিত নজরানা পেলেই কেবল সার্ভিসবুকে তোলেন।
নিরাপত্তা প্রহরী শাহ আলম নামে এক কর্মচারীর লাম্পগ্রান্ট ও জিপিএফ কাগজপত্র তৈরির জন্য এক লাখ টাকা দাবি করেন। ওই কর্মচারী অর্ধলক্ষ টাকা প্রদান করলেও বাকি টাকার জন্য দীর্ঘদিন ফাইল আটকে রাখেন। পরে স্থানীয়দের চাপ প্রদান করে।
চার সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা হলরুমে উপজেলা মাসিক সভায় তিনি সব মাঠকর্মী ও কর্মচারীদের হুমকি দিয়ে বলেন, যারা মাসিক চাঁদা দেবেন না তারা পেনশন নিয়ে বাড়িতে যেতে পারবেন না। স্টাফরা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি হাতের মাইক ছুড়ে ফেলেন। যা সব কর্মচারী দেখেছেন ও ভিডিও এবং অডিও করে রেখেছেন।
স্থায়ী পদ্ধতি ও দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতির টাকা-পয়সা নিয়ে মাঠকর্মীদের হয়রানি ও কর্মচারীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছেন। তেলিখালী পরিদর্শক সোহাগ হাওলাদার চাকরি বাণিজ্য করে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ভিটাবাড়ীয়ার পরিদর্শক আবদুল মতিন কর্মকর্তার চাহিদা পূরণের জন্য কর্মচারীদের কাছ থেকে চাপ প্রয়োগ করে টাকা তুলে দেন; তার আদায়কারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ভিটাবাড়ীয় পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের আয়া সালমা বেগম চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আ. মতিনের হাতে লাঞ্ছিত হন। এই দুই পরিদর্শক দুর্নীতিগ্রস্ত অফিস সহকারী ও কর্মকর্তার সহায়ক হিসেবে কাজ করছেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত হাসিনা খানম বলেন, আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে দুজন কর্মকর্তা আছেন তারা আমার বিষয় ভালো জানেন। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।
হাসিনা খানমকে বদলি
পিরোজপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক তুহিন কান্তি ঘোষ, পরিবার পরিকল্পনা সহকারী হাসিনা খানমকে ভান্ডারিয়া থেকে নেছারাবাদ বদলির আদেশ প্রদান করেন।
যাহার স্বারক নং ৫৯.১১. ৭৯০০. ০০০. ০৩৪. ২৭. ০০০১. ২৫-৫৪৭, তারিখ ০৭/১০/২৫ তাকে প্রশাসনিক কারণ উল্লেখ করে বদলি করা হয়।
তদন্ত কমিটি গঠন
এঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে উপ-পরিচালক তুহিন কান্তি ঘোষ নির্দেশ প্রদান করেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান হচ্ছেন পিরোজপুর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী পরিচালক (সাধারণ) সিরাজুল ইসলাম। তাকে আহবায়ক করে পিরোজপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক) মো. আবুল কালাম আজাদকে (সদস্য) এবং পিরোজপুর সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. সোহাগ হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। উক্ত তদন্ত কমিটিকে ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদানের নিদের্শ দেওয়া হয়েছে।
বদলি না সেভ ?
অভিযোগ উঠেছে, কর্মচারীদের মধ্যে হাসিনা খানমকে বদলি করে তাকে সেভ করার জন্য দুর্নীতির বিচার না করে তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়। এদিকে তদন্ত কমিটি গত বৃহস্পতিবার ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অফিস পরিদর্শন করে কর্মচারীদের বিভিন্ন সাক্ষাৎ গ্রহণ করেন।
এসময় বিভিন্ন মাঠ কর্মচারীদের তদন্ত কর্মকর্তা হুমকিসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখান যাতে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না করে। এবং তদন্ত টিম ভান্ডারিয়ার আগের দিন রাতে একটি টেবিল ক্রয় করে রাতে কর্মকর্তার কক্ষে প্রবেশ করান। গত অর্থ বছরে একটি টেবিল প্রায় অর্ধলাখ টাকায় ক্রয় করলে সেই টেবিলটি অফিস থেকে ওই রাতে উধাও হয়ে যায়। সঠিকভাবে তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে।
স্বাক্ষর জাল করে বিল ভাউচার উত্তোলন
এদিকে শিল্পী হাওলাদার আসবাবপত্র ক্রয় কমিটির একজন সদস্য ভান্ডারিয়া উপজেলা পল্লি উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন তার স্বাক্ষর জাল করে বিল ভাউচার উত্তোলন করেন। যা তদন্ত করলে উক্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষর তিনি প্রদান করেন নাই। এবং বিল ভাউচারে কোন কিছুই তিনি জানে না। বলে এ জানান।
মাঠ কর্মচারিদের দাবি জেলা তদন্ত ছাড়া যে কোন তদন্ত করলে সঠিক বিষয়টি বেড়িয়ে আসবে বলে তারা মনে করেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কর্মকর্তা শিল্পী হালদার বলেন, অফিসের জন্য মালামাল ক্রয় করা হয়েছে এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। তবে একজন কর্মচারীকে প্রশাসনিক কারণে বদলি করা হয়। তিনি পুনরায় আসতে চাচ্ছেন এ কারণে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন এবং পরে আবার আমার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।