চিত্রনায়িকা ববির কথিত স্বামী পটুয়াখালীর মির্জা আবুল বাশার আটক


মাসুদ রানা,ঢাকা: সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্লান সেন্টারের কম্পিউটার ব্যবসায়ীর অভিযোগের সত্যতা খুঁজতে তদন্তে নামে গুলশান থানা পুলিশ।
গুলশান থানার চৌকস ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) হাফিজুর রহমান(পিপিএম) এর দূরদর্শী নেতৃত্বে কম্পিউটার ব্যবসায়ীর করা অভিযোগের পেক্ষিতে গুলশান-বনানীর চিন্হিত প্রতারক চিত্রনায়িকা ববির কথিত স্বামী মির্জা আবুল বাশার@ মামুন’কে গুলশান-২,রোড নং-৪৪, বাড়ি-২৭ এর ৪র্থ তলা থেকে আটক করে গুলশান থানা পুলিশ। আটকের পর একে একে বেরিয়ে আসে অভিনব কায়দায় মির্জা আবুল বাশারের প্রতারনার তথ্য।
পটুয়াখালী সদর উপজেলার ইসলামাবাদের পশ্চিম আউলিয়াপুরের ফখরুল ইসলামের বড় ছেলে মির্জা আবুল বাশার ওরফে মামুন ।স্থানীয় ভাবে খবর নিয়ে জানা যায় মির্জা আবুল বাশার ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত।শেখ হাসিনাসহ আওয়ামীলীগের অসংখ্য নেতাকর্মীদের সাথে তার গভীর সম্পর্ক ছিলো ।সেই ফ্যাসিস্টের দোষদের সাথে হাত মিলিয়ে নামসর্বস্ত বিটিএল নামক একটি ভূয়া কোম্পানী খুলে দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে প্রতারক মির্জা আবুল বাশার পালিয়ে যেতেন।কাউকে জায়গা দিবেন,কাউকে চাউলের ডিলারশিপ দিবেন,কাউকে তেলের ডিলারশিপ দিবে এমন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নগদ টাকা নিয়ে লাফাত্তা হয়ে যান প্রতারক মির্জা আবুল বাশার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় মির্জা আবুল বাশারের প্রতারনা থেকে রেহায় পাইনি ,সেনা সদস্য,বাংলাদেশ পুলিশ সদস্য,সাংবাদিক ও অসংখ্য নিরিহ মানুষ।অনেকে শেষ সম্ভবল গ্রামের জায়গা বিক্রি করে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নগদ টাকা তুলে দিয়ে নিংস্ব হয়েছে অসংখ্য মানুষ।রাজধানীর বাড্ডা,খিলক্ষেত,বনানী,ভাটারা সহ দেশের বিভিন্ন থানায় একাধীক প্রতারনার মামলা রয়েছে এই প্রতারক মির্জা আবুল বাশারের বিরুদ্ধে।জামিনে বের হয়ে সেই একই কায়দায় প্রতারনা করেন প্রতারক বাশার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় প্রতারক বাশার রাজধানীর আভিজাত এলাকায় টার্গেট করে অফিস নেন।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চটকদারী বিজ্ঞাপন দিয়ে অফিসে এনে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার লোকজন’কে নিজস্ব ডিলারশীপ দিবে বলে মোটা অংকের টাকা নিয়ে হঠাৎ উদাও হয়ে যেতেন প্রতারক মির্জা আবুল বাশার।
প্রতারক বাশার নিজেকে চিত্রনায়িকা ববির স্বামী ও ব্যবসায়ীক পাটনার বলে ও দাবী করেন।
অন্যদিকে চিত্রনায়িকা ববির কাছে প্রতারক বাশার তার স্বামী কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি রেগে যান,স্ত্রী না বলে অশ্বিকার করেন।অথচ গুলশানের একটি বাড়িতে একই ছাদের নিচে দুইজনে থাকেন বলেও অভিযোগ আছে। প্রতারক বাশারের বিটিএল নামক কোম্পানীর গুলশান-২ এর ৪৪ নং রোডের ২৭ নং বাড়ির অফিসে বেশ কয়েকবার ববি’কে পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে প্রতারক বাশার নিজের আওয়ামী লেবাস পরিবর্তন করে বনে যান বিএনপির সক্রিয় কর্মী ।অথচ শেখ হাসিনাসহ আওয়ামীলীগের অসংখ্য কেদ্রীয় নেতাকর্মীর সাথে তার সামাজিক মাধ্যমে অসংখ্য ঘনিষ্ঠ মহুর্তের ছবি পাওয়া যায়।
কে এই প্রতারক বাশার?
জাতীয় পরিচয়পত্রে শুধু আবুল বাশার লেখা থাকলেও তার পুরো নাম মির্জা আবুল বাশার ওরফে মামুন। তার বাবার নাম ফখরুল ইসলাম এবং মায়ের নাম হেমেলা বেগম। গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার ইসলামাবাদের পশ্চিম আউলিয়াপুর। বর্তমানে গুলশান ২ এর ১১৪ নম্বর রোডের ৩৫ নম্বর বাড়িতে থাকেন।
বাশার নিজের বাবাকে একজন স্কুলশিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিলেও প্রতারণার শিকার এ কে এম আলিউল হক জানিয়েছেন, বাশারের বাবা স্কুলের নৈশপ্রহরী। মির্জা আব্বাস নামে তার এক ছোট ভাইও প্রতারণার সঙ্গী। আরেক ভাই ভারতের জেলখানায় বন্দী।
অনলাইনে পণ্য কেনার বিজ্ঞাপন দিয়ে অনেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ফ্রিজ, এসি, সোফা, ল্যাপটপ, কম্পিউটারের মতো মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে বিল পরিশোধ করেননি বাশার। বরং, ইচ্ছাকৃতভাবে টাকা নেই এমন অ্যাকাউন্টের চেক দিয়ে সবার সঙ্গে করেছেন প্রতারণা।
প্রতারণার শিকার বাবুলসহ অনেক ভুক্তভোগীর করা মামলায় সেনাবাহিনীর সহায়তায় গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর প্রতারক বাশারকে গ্রেপ্তার করে খিলক্ষেত থানা পুলিশ।
সেসব মামলায় কারাগারেও যান তিনি। তবে কয়েকদিন পরেই আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসে আবার শুরু করেন প্রতারণা। তবে এবার প্রতারণার অফিস খুলে বসেন রাজধানীর আরেক অভিজাত এলাকা গুলশান-২ এ।
আবুল বাশারের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে পুঁজি খুঁইয়ে পথে বসেছেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাধারণ ব্যবসায়ীরা। মানুষের বিশ্বাস অর্জন ও নিজের অপরাধ আড়াল করতে এই প্রতারক চিত্রনায়িকা ববি’কে তার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সাল থেকে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন মির্জা আবুল বাশার। অনলাইনে পণ্য কেনার বিজ্ঞাপন দিয়ে ফ্রিজ, এসি, সোফা, ল্যাপটপ, কম্পিউটারের মতো মূল্যবান সামগ্রী কিনে আনেন তিনি। এরপর বিক্রেতাকে দাম পরিশোধ না করে ব্যাংকের চেক দেন। কিন্তু সেই চেক ব্যাংকে জমা দিলে টাকা মেলে না।
মাসের পর মাস ঘুরিয়ে চেকের মেয়াদ পার করে জিনিসপত্র নিজের করে নেন বাশার। তারপর এসব সামগ্রী দিয়ে আলিশান অফিস সাজান। এই অফিস দেখিয়ে আরেক পক্ষের কাছে তেল, আটা, ময়দা, চাল, ডাল, লবণসহ নানা ধরনের পণ্যের ডিলারশিপ বিক্রি করেন। ডিলারশিপের জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা অগ্রিম নিয়ে নেন। তবে কখনো পণ্য দেন না। এছাড়া ফেসবুকে নানা ধরনের বিজ্ঞাপন দিয়ে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, পিকআপ ভ্যানও কেনেন। এর বাইরেও পূর্বাচলের প্লট দেখিয়ে ইট, বালি, সিমেন্ট, রড নগদ টাকা ছাড়া ব্ল্যাঙ্ক চেকের মাধ্যমে কিনে নেন বাশার। কিন্তু এই প্রতারক টাকা দেন না কাউকেই।
প্রতারণার এই ফাঁদ পাততে আবুল বাশার গড়ে তুলেছেন এক সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র। তার এই প্রতারণায় জড়িত আছেন তার অফিসের একাউন্স আব্দুল আহাদ।আহাদের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন একই অফিসের মার্কেটিং এর দায়িত্বে থাকা রেজাউল। রেজাউলের মাধ্যমে রাজধানীর বিভিন্ন কম্পিউটার মার্কেট থেকে ভুংবাং বুজিয়ে অফিস পযন্ত নিয়ে আসেন রেজাউল। এর পর দায়িত্ব চলে যায় প্রতারক আহাদের কাছে ।আহাদ বুংবাং বুজিয়ে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন মূল প্রতারক মির্জা আবুল বাশারের কাছে। এর পর থেকে শুরু হয় একটার পর একটা হয়রানি।
প্রতারক মির্জা আবুল বাশারের রয়েছে বাড্ডা এলাকার একটি অপরাধী চক্র। প্রতারণার শিকার ব্যক্তিদের করা মামলায় বাশার একাধিকবার গ্রেপ্তার হলেও আইনের ফাঁক গলে বারবার জামিনে বেরিয়ে এসেছেন। এরপর নতুন জায়গায় অফিস নিয়ে ফের শুরু করেছেন প্রতারণা। প্রতারণা যেন তার নেশা আর পেশা বলছেন ভুক্তভোগীরা।
বাশারের প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী সেনা কর্মকর্তা এ কে এম আলিউল হক বাবুল সাংবাদিক’কে বলেন, “জেল থেকে বের হওয়ার পর বাশারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সে নিজেই স্বীকার করে সে একজন পেশাদার প্রতারক। আমাকে বলে—বাবুল ভাই আমি একজন প্রতারক, আমার কাজই প্রতারণা করা। আমার কাছে এলে কেউ ফেরত যেতে পারে না। আপনিও ফেরত যেতে পারেননি। আমার কাছে আসলে টাকা আপনাকে দিতেই হবে। অনেক লোকজন আমার কাছে আছে। ”
বর্তমানে আবুল বাশার রাজধানীর গুলশান-২ এর ৪৪ নং রোডের ২৭ নং বাড়ির ৫ম তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে অফিস খুলে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বনানী অফিস থাকা কালীন গত ১৫ ডিসেম্বর এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা দামের একটি চাইনিজ টেবিল বাশারের সেই অফিসে পৌঁছে দেন পলাশ চন্দ্র দাশ নামের এক ব্যবসায়ী। সেদিন টাকা বা কোনো কাগজ ছাড়াই জোর করে নিজের ক্যাডারদের ক্ষমতা দেখিয়ে টেবিল রেখে দেন বাশার। এ ঘটনায় বনানী থানায় মামলা করেন পলাশ। ওই মামলায় পলাশের সঙ্গী হয়েছেন আরও সাতজন ভুক্তভোগী। তারা হলেন- সৈয়দ আতিয়ার রহমান (৫৪), মোহাম্মদ সোহাগ হোসেন (২৭), মোছাম্মত মাহবুবা নাসরীন (৪৭), হাসান হা্ওলাদার (২৯), শফিকুল ইসলাম (৩৮), বাবুল চন্দ্র দাশ (৪০) ও আবু বকর সিদ্দিকী (২৭)।
প্রতারক মির্জা আবুল বাশারে বিষয়ে গুলশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন,মির্জা আবুল বাশার একজন পেশাদার প্রতারক বাশারের প্রতারনার শিকার সেনা কর্মকর্তা,পুলিশ কর্মকর্তা,সাংবাদিক,ও অসংখ্য নিরীহ মানুষ,তাই আমি বলতেছি চটকদারী বিজ্ঞাপন ও লোভে পড়ে কোথাও নগদ অর্থ ইনভেষ্ট করবেন না,জেনে বুজে শুনে নগদ টাকা ইনভেস্ট করবেন,এই ধরনের প্রতারক থেকে সাবধান থাকবেন।আমার থানা এলাকা আমার জানা মতে কোনো ধরনের অপরাধ আমি হতে দিবো না এটা আমার ক্লিয়ার মেসেজ।