দুদক অনুসন্ধান করবে নলছিটির সেই বিতর্কিত প্রকৌশলী ইকবাল কবিরের দুর্নীতি


বরিশাল অফিস : দুদক অনুসন্ধান করবে নলছিটির সেই বিতর্কিত এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী ইকবাল কবিরের দুর্নীতি ,অনিয়ম ও ঘুষগ্রহনের ভাইরাল ভিডিওর। ইবকাল কবিরের বিরুদ্ধে দুদক আয়োজিত গনশুনানীতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার এ সিদ্ধান্ত প্রদান করেন।
দুদকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৩ অক্টোবর দুদক কমিশনার,দুদক মহাপরিচালক,দুদক বরিশাল বিভাগীয় পরিচালকের উপস্থিতিতে ইকবাল কবিরের দুর্নীতি ও জ্ঞাত আয়বহির্ভৃত সম্পদের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় পিরোজপুর আয়োজিত ঝালকাঠি জেলা শিল্প কলা একাডেমি মিলনায়তনে দুদকের গণশুনানিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী,বিশেষ অতিথি হিসেবে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন,ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান,ঝালকাঠির পুলিশ সুপার উজ্জল কুমার রায় এবং দুদকের বিভাগীয় কার্যালয় বরিশালের পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ।
ইকবাল কবিরের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ :
নলছিটি (ঝালকাঠি)উপজেলা এলজিইডির সাবেক উপজেলা প্রকৌশলী ও বর্তমানে চাদঁপুর জেলার হাজিগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ ইকবাল কবিরের ঘুষ গ্রহন,দুর্নীতি, অনিয়ম ও সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেন।
ইকবাল কবির নলছিটি থাকাকালিন সময়ে ঘুস গ্রহন করার ৪৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়।নলছিটির কুলকাঠি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামানকে তার ব্যক্তিগত জমিতে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য চারটি ব্রিজ নির্মান করে সরকারি অর্থ তছরুপ করেছেন।এই চারটি জনসাধারনের কোন কাজে আসবেনা কখনো।তার ঘুস গ্রহনের ভিডিও ভাইরাল হলেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় বা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিরদপ্তর কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অন্ত নাই। তিনি বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করেন। আওয়ামী লীগের ঠিকাদারের কাজ শেষ না হতেই তিনি বিল উত্তোলন করে দিতেন।
ইকবাল কবিরের অফিসে বসে ঘুষ গ্রহণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এসব বিষয়ের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পরও তিনি স্বৈরাচার সরকারের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা সাবেক এমপি আমির হোসেন আমুর ছত্রছায়ায় পদে বহাল ছিলেন। তিনি ২০২৪ সালের ৫ আগষ্টের পরেও আওয়ামী লীগের ঠিকাদারদের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ নিজেই সামলান।
কুশঙ্গল ইউনিয়নে ফয়রা এলাকায় বিঝেপি প্রজেক্টের আওতায় ৪ কোটি ৪৭ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ব্যয়ে নলছিটির শিমুলতলা বাজার থেকে মানপাশা পর্যন্ত রাস্তা ও ৮টি বক্স কালভার্ট এবং ১টি সেতু নির্মাণকাজ হয়। মহিউদ্দিন আহমেদ নামে এক ঠিকাদারের সঙ্গে এ চুক্তি হয়। মূল ঠিকাদার কাজটির জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত ঝালকাঠি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ হাদিসুর রহমান মিলনকে সাব ঠিকাদার নিয়োগ দেন। কাজটি সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও মূল সেতু ও কিছু বক্স কালভার্ট নির্মাণ সম্পন্ন হলেও নির্মাণ করা হয়নি সড়কটি অথচ বিল পরিশোধ করেন ইকবাল কবির।সেতুটি কোনো খাল ছাড়াই নির্মাণ করা হয়। এটা নিছক সরকারি অর্থ অপচয় করা ছাড়া আর কিছু নয়। এত টাকা দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হলেও সেটি কোনো উপকারে আসছে না।
নলছিটি এলজিইডি থেকে আহবানকৃত অনলাইন ওপেন টেন্ডারিং ম্যাথুড (ওটিপি) পদ্ধতিতে ২০২৪ সালের জুন আইডি নম্বর ৮২৩৯১৯,৮২৩৯২৩, ৮২৩৯১৩ এ ২ কোটি ২৮ লাখ টাকার ৩ গ্রুপ কাজ উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের বাউন্ডারি ওয়ালের কাজের টেন্ডার আহবান করেন।উক্ত টেন্ডারে অসংখ্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহন করেন।গুচ্ছ প্রক্রিয়ায় টেন্ডার পাইয়ে দেয়ার কথা থাকলেও গুচ্ছ প্রক্রিয়ায় টেন্ডারের কাজ দিতে ব্যর্থ হয়ে উপজেলা প্রকৌশলী ইকবাল কবির ক্ষিপ্ত হয়ে মামলা দায়ের করেন সাংবাদিকসহ বিশিষ্টজনদের বিরুদ্ধে।
একইভাবে মোল্লারহাটে পুরাতন ব্রিজের বদলে পার্শবর্তী নুতন ব্রীজ ভেঙ্গে ফেলেন ঠিকাদার।উপজেলা প্রকৌশলী এহেন কর্মকান্ডে কোন প্রতিবাদ করেন নি।ঠিকাদার থেকে ঘুষ নিয়ে চেপে যান।নলছিটিতে তার কর্মকালীন সময় ঘুস, দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়া বানিয়েছিলেন নলছিটি উপজেলা এলজিইডি অফিসকে।
২৩ সেপ্টেম্বর জারি করা অফিস আদেশে তাকে নলছিটি থেকে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলায় বদলি করা হয় নলছিটি উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইকবাল কবীরকে।অফিস আদেশে বলা হয়েছে, এই আদেশ জনস্বার্থে জারি করা হইল এবং অবিলম্বে কার্যকর হইবে।ইকবাল কবির ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর নলছিটি উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন।
হাসিনা সরকারের পতনের পর তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ওই বছর সেপ্টেম্বরে তার বদলির আদেশ জারি হলেও সেটি কার্যকর হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান সরকারে এক প্রভাবশালী উপদেষ্টার আত্মীয়ের প্রভাবে সেই আদেশ স্থগিত হয়ে যায় এবং তিনি নলছিটিতেই থেকে যান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা প্রকৌশলী ইকবাল কবীর ২০২০ সালে নলছিটিতে যোগদান করেন। এর পর থেকেই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ ওঠে। তিনি বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করেন। আওয়ামী লীগের ঠিকাদারের কাজ শেষ না হতেই তিনি বিল উত্তোলন করে দিতেন।
সেসময় তার অফিসে বসে ঘুষ গ্রহণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এসব বিষয়ের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পরও তিনি স্বৈরাচার সরকারের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা সাবেক এমপি আমির হোসেন আমুর ছত্রছায়ায় পদে বহাল ছিলেন। এখনো তিনি আওয়ামী লীগের ঠিকাদারদের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ নিজেই সামলান।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।