ফিচার

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সৌন্দর্য হারাচ্ছে শাপলার বিল

লাল শাপলা
print news

বাসস : নাম লাল শাপলার বিল হলেও এ যেন গোলাপি আর সবুজের রঙের মাখামাখি। দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন গোলাপ আর সবুজের চাদরে ঢাকা বিল। কাছে গেলেই চোখ জুড়ায় বিস্তৃত বিলের জলে ফুটে থাকা লাখ লাখ শাপলা। এ দৃশ্যে নিমিষেই মুগ্ধ হচ্ছেন পর্যটকরা।

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের উত্তর সাতলা এবং আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের বাগধা ও খাজুরিয়া গ্রামের প্রায় ১০ হাজার একর বিস্তীর্ণ জলাভূমিতে বিছিয়ে আছে লাল শাপলার বিল।

প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া বিলটি সাতলার ‘লাল শাপলার বিল’ নামেই পরিচিত। প্রতিবছর নয়নাভিরাম এই বিলের দৃশ্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঘুরতে আসেন হাজার হাজার দর্শনার্থী। ছোট ছোট নৌকা নিয়ে পর্যটকরা ঘুরে বেড়ান বিলের জ্বলে। ছবি আর সেলফি তুলে সেই স্মৃতি বাঁধিয়ে রাখেন অ্যালবামে।

সাতলার বিলে পর্যটকদের পদচারণা প্রায় এক যুগ ধরে। প্রতিবছর জুলাই মাস থেকেই বিস্তীর্ণ জলাভূমির টলটলে পানির ওপর ভাসতে শুরু করে অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা শাপলা ফুল। যা থাকে অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। পুরো সময়টাতেই লাল শাপলার সমারোহ থাকে বিলজুড়ে। এই সময়টাতে ছুটির দিনসহ সপ্তাহের সাত দিনই পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকে সাতলা-বাগতা সড়কটি।

ভোরের আলোয় সাতলা বিল পরিণত হয় সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে। বিলের টলটলে পানিতে সবুজ পাতার ওপর মাথা উঁচু করে সৌন্দর্য ছড়ায় লাল শাপলা। তারই মাঝে বক, পানকৌড়ি, মাছরাঙা, ফিঙে, শালিক, দোয়েল, চড়ুই পাখিদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো বিল। যা দেখে নিমিষেই দূর হয় ক্লান্তি। তাই লাল শাপলার প্রকৃত রূপ দেখতে সূর্যোদয়ের পর পরই পর্যটকরা ভিড় করছে শাপলার বিলে।

সাতলার বিলে লাল শাপলার সৌন্দর্য কাছ থেকে উপভোগের জন্য কমপক্ষে ১৫টি স্পটে রয়েছে চার শতাধিক ছোট-বড় নৌকা। নৌকাযোগে বিলের মাঝে শাপলা দেখতে যান পর্যটকরা। প্রতি ঘণ্টায় নেওয়া হয় ৫০০ থেকে হাজার টাকার বেশি। এনিয়ে ক্ষোভ আছে পর্যটকদের মধ্যে। তাদের অভিযোগ, এক সময় ২০০ থেকে ৩০০ টাকার নৌকা ভাড়া এক হাজার টাকা ছুয়েছে। অনেকটা জিম্মি করেই ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ পর্যটকদের।

সাতলার লাল শাপলার বিল শুধু পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে না, এই বিল ঘিরে কর্মস্থানও গড়ে ওঠেছে স্থানীয়ভাবে। সরকারি-বেসরকারিভাবে আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় এলাকায় বসবাসকারী পরিবারগুলো পর্যটকদের কাছে ঘর এবং নৌকা ভাড়া দিয়ে বাড়তি আয়ের পথ খুঁজে নিয়েছেন।

ইতোপূর্বে সতলা-বাগধা সড়কটি ভাঙাচোড়া থাকলে সেই ভোগান্তি কেটে গেছে। তবে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সৌন্দর্য হারাচ্ছে শাপলার বিল। বিলে মাছ চাষ করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এ কারণে মাছে খেয়ে ফেলছে শাপলা। আবার পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে শাপলা দিয়ে সাজানো হচ্ছে নৌকাগুলো। ফুল ছিড়ে খোপায় বাঁধছেন নারী পর্যটকরা।

সাতলার বিলে ঘুরতে আসা পর্যক কলেজছাত্রী মারিয়া বলেন, আমি বরিশালে থাকি। অনেক দিন ধরেই শুনছিলাম সাতলার লাল শাপলার বিলের গল্প। এখানে এসে সত্যিই ভালো লাগছে। এতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আগে দেখিনি। তবে এখানকার ফুলগুলো ছিড়ে ফেলছে ঘুরতে আসা পর্যটকরা। এটা না করলে আরও ভালো হতো।

মাদারীপুর থেকে শাপলার বিলে ঘুরতে এসেছেন নবদম্পতি শাহীন ও তামান্না। তারা বলেন, গভীর রাতে বাসে রওয়ানা হয়েছি। এখানে এসে শাপলার বিলের সৌন্দর্য দেখে সব ক্লান্তি দূর হয়েছে। তবে এখানে পর্যটকদের জন্য হোটেল বা আবাসনের ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো। আরও অনেক পর্যটক আসতে পারতো।

অপরদিক সাতলার বিলে নৌকা ভাড়া নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন পর্যটক সঞ্জিব এবং অঞ্জলি দম্পতিসহ প্রায় সকল পর্যটক। তারা বলেন, একসময় মাত্র দেড় থেকে দুইশত টাকায় যতক্ষণ মনচায় ঘোরা যেতো। এখন সিন্ডিকেট করে মাত্র ১ ঘণ্টা ঘুরতে হলে দিতে হয় সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে হাজার টাকার বেশি।

তবে যে ভাড়া নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত নয় বলে দাবি করেছেন নজরুই ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন এবং আরিফসহ অন্য নৌকা চালকরা। তারা বলেন, সাতলার বিল ঘিরে অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তিন-চার মাস যখন ক্ষেত-খামারে কাজ থাকে না তখন শাপলার বিলে পর্যটকদের নৌকায় ঘুরিয়ে আমরা উপার্জন করছি। তবে শুক্র ও শনিবার পর্যটক বেশি আসে। বাকি ৫ দিন তেমন পর্যটক আসে না। তাই ওই দুই দিনে নৌকা ভাড়ায় যা আসে তা দিয়ে আমাদের পুরো সপ্তাহ সংসার চলে। বর্তমানে যে বাজার মূল্য তাতে যা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে সেটা বেশি নয়।

উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো আলী সুজা জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শাপলা বিলের সৌন্দর্যসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে দর্শনার্থীদের জন্য একটি বিশ্রামাগার, ঘাটলা নির্মাণ করা হয়েছে। আরও কিছু কাজ চলমান রয়েছে। এতে শাপলার বিলে দর্শনার্থীদের আগমন আরও বাড়বে আশা করা যায়।

এ বিষয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন জানান, বিলকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা বিশ্রামাগার ও ঘাটের উন্নয়ন করা হয়েছে। সড়ক পথে মানুষের ভোগান্তি লাঘবে এলজিইডিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, শিগগির আমরা সব কাজ সম্পন্ন করতে পারবো।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.