বাংলাদেশ ঢাকা

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রকৌশলীর পদায়ন,অবশেষে হেরে গেলেন সচিব

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর
print news

শীর্ষনিউজ: স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন নির্বাহী প্রকৌশলীর পদায়নকে কেন্দ্র করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং তাঁর মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকসুদ জাহেদীর মধ্যে ছোটখাটো এক ধরনের যুদ্ধ হয়ে গেছে। উপদেষ্টা এবং সচিবের মধ্যকার সরাসরি এ যুদ্ধটি হয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নোয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদায়নকে কেন্দ্র করে। ৫০ লাখ টাকা ঘুষের পাল্টাপাল্টি তদবিরে সচিব হেরে গেছেন উপদেষ্টার কাছে। অভিযোগ উঠেছে যে, প্রকৌশলী আহসান হাবিবের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে তাকে নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদায়নের ব্যবস্থা করেন সচিব। এরপরের দিনই উপদেষ্টা সেই পদায়ন বাতিল করে নিজের পছন্দের কর্মকর্তাকে চেয়ারে বহাল রাখেন। অবশ্য সচিবের তদবিরটি ছিল সম্পূর্ণ অবৈধ, তাই শেষ পর্যন্ত তিনি এটি টিকিয়ে রাখতে পারেননি বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এবং সচিব জাহেদী উভয়েই একই রাজনীতির তরিকার। আসিফ মাহমুদ যদিও জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক, কিন্তু সরকারের মধ্যে তিনি জামায়াতের ভূমিকাই পালন করছেন। অন্যদিকে হাসিনাপুত্র জয় এবং সাবেক ফ্যাসিস্ট প্রতিমন্ত্রী পলকের দোসর, সচিব রেজাউল মাকসুদ জাহেদীও এখন পুরোপুরি জামায়াত। আর এ কারণে উভয়ের ক্ষমতাও ব্যাপক। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা ইতিমধ্যে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

পাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তা পদায়নের সাধারণ নিয়ম হলো, অনিয়ম-দুর্নীতি বা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে কোনো কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার বা বদলি করা হলে পুনরায় তাকে একই পদে পদায়নের সুযোগ নেই। কিন্তু সেটিই করেছিলেন সচিব রেজাউল করিম জাহেদী। প্রকৌশলী মো. আহসান হাবিবকে ইতিপূর্বে জনস্বাস্থ্যের নোয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক (চ.দা.) পদ থেকে ঠাকুরগাঁও বদলি করা হয়েছিল গুরুতর আর্থিক দুর্নীতি-অনিয়মসহ অন্যান্য কেলেঙ্কারির কারণে। অভিযোগ উঠেছে যে, সচিব রেজাউল মাকসুদ জাহেদী প্রকৌশলী আহসান হাবিবের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে গত ১৫ অক্টোবর তাকে আগের পদেই অর্থাৎ নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদায়নের ব্যবস্থা করেন। একই প্রজ্ঞাপনে নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে বদলি করা হয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এই বদলির আদেশ জারির পর পরই প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম যোগাযোগ করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে। পদে বহাল থাকার জন্য ভিন্ন মাধ্যমে তিনিও পাল্টাভাবে ৫০ লাখ টাকা দেন উপদেষ্টাকে। ফলে পরদিনই, ১৬ অক্টোবর উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের নির্দেশে এই বদলির আদেশ বাতিল হয়ে যায়। এরফলে সাইফুল ইসলাম নোয়াখালীর চেয়ার দখলে রাখতে সক্ষম হলেন। ঠাকুরগাঁও থেকে আহসান হাবিবের নোয়াখালীতে যাওয়া আর হলো না। তাঁর ৫০ লাখ টাকাই মার গেলো।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির তালিকায় প্রকৌশলী মো. আহসান হাবিবের অবস্থান অনেক পেছনে। কিন্তু আওয়ামী আমলে তখনকার শীর্ষ দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্ট মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করে চলতি দায়িত্বে নোয়াখালীতে জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদায়ন নেন আহসান হাবিব। এই পদে পদায়ন পাওয়ার পর আহসান হাবিব ব্যাপকহারে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তার আমলে নোয়াখালী জনস্বাস্থ্যের এমন অনেক কাজের বিল পরিশোধ হয়েছে যেগুলোর কোনো কাজই বাস্তবে হয়নি। টেন্ডার আহ্বানের পর ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে বিল পরিশোধ হয়ে গেছে। ঠিকাদার এবং প্রকৌশলী আহসান হাবিবের মধ্যে টাকার ভাগ-বাটেয়ারা হয়েছে।

নোয়াখালীতে যা করেছেন প্রকৌশলী আহসান হাবিব
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় দুর্নীতি ও লুটপাটের প্রমাণাদি ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই অবৈধভাবে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়া নোয়াখালীর সাবেক প্রকৌশলী আহসান হাবিব পুনরায় নোয়াখালী যাওয়ার জন্য এতটা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। আহসান হাবিব ইতিপূর্বে নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী পদে থাকাকালে তার হাত দিয়ে চঊউচ-৪ প্রকল্পের ৪৬৪ নং প্যাকেজের ১০টি বিদ্যালয়ের জন্য ১ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকার চুক্তি হয়। তিনি মাত্র ৩টি বিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার কাজের বিপরীতে ১ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা বিল, পারফরম্যান্স জামানত ১০ লক্ষ ও বিল রিটেনশন মানি ১৫ লক্ষসহ অবৈধভাবে উত্তোলন করেন।প্যাকেজ নং ৯৭৮ এবং ২৩৯১ এর সেনবাগ উপজেলার নলুয়া ও কালিকাপুর বিদ্যালয়ে কোন প্রকার কাজ না করেই বিল উত্তোলন করে ঠিকাদার ও নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব ভাগাভাগী করে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাত করেন।

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী নেতা ও ঠিকাদার মোজাম্মেল এখন কানাডায় পলাতক। কাজ না করার ফলে উক্ত ৩টি প্যাকেজের ২৪টি বিদ্যালয়ের হাজার হাজার কোমলমতি শিশু উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বহুল আলোচিত এই প্রকৌশলী নোয়াখালী থাকা অবস্থায় নারী কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তৎকালীন সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সুপারিশে মুক্তি পান। তাছাড়া নোয়াখালীর সাবেক এই প্রকৌশলী পাবনা ও নেত্রকোনায় থাকাকালীন বিভিন্ন ঠিকাদারের কাছ থেকে কাজ দেওয়ার কথা বলে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন মর্মে সংশ্লিষ্ট জেলার ঠিকাদাররা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দাখিল করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিতর্কিত প্রকৌশলী আহসান হাবিব অবৈধভাবে আয় করা অঢেল অর্থে পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। আহসান হাবিব নোয়াখালীতে থাকাকালে অবৈধ অর্থের প্রভাবে গোপনে তৃতীয় বিয়ে করেন। তৃতীয় স্ত্রী তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। এতে তিনি গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে তৎকালীন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের তদবিরে জেল থেকে ছাড়া পান।

 

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.