ঝালকাঠির নলছিটি এলজিইডি কার্যালয়ে প্রকৌশলী ইকবাল কবিরের টাকা নেয়ার ভিডিও ভাইরাল


মামুনুর রশীদ নোমানী,বরিশাল : ঝালকাঠির নলছিটি এলজিইডি কার্যালয়ে প্রকৌশলী মোঃ ইকবাল কবিরের টাকা নেয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ ঘটনার পর ইকবাল কবিরকে ফোন করা হলে তিনি ঘটনার ব্যাখ্যা না দিয়ে ক্ষেপে গিয়ে বলেন, ‘টাকা নিয়েছি। কিন্তু ওটা কীসের টাকা, তার কোনো প্রমাণ নেই।
ঝালকাঠির নলছিটিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগে (এলজিইডি) দায়িত্বরত মোঃ ইকবাল কবির নামক প্রকৌশলীর টাকা নেয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় জেলা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।৪৪ সেকেন্ডের ঐ ভিডিওটি ইত্তেহাদ নিউজের হাতে রয়েছে। টাকা নেয়া ওই প্রকৌশলীর নাম মোঃ ইকবাল কবির। ভিডিওটি বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) ভাইরাল হয়। নিজ কার্যালয়ে (সরকারী দপ্তর) বসে নগদ অর্থ গ্রহণ করছেন এই কর্মকর্তা এমন একটি ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে। ৪৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, নিজ দপ্তরের চেয়ারে বসে থাকা প্রকৌশলী ইকবাল কবিরকে অপর পাশ থেকে কিছু টাকা দিচ্ছেন কেউ একজন। টাকা টেবিলে রাখার কিছুক্ষণের মধ্যে হাতে নিয়ে পকেটে রেখে দেন ইকবাল কবির। তবে ভিডিওটির অপর পাশের ব্যক্তিটি কে ও এই টাকা কেন দেয়া হয়েছে এ বিষয়টি জানা যায়নি। এ ঘটনার পর ইকবাল কবিরকে ফোন করা হলে তিনি ঘটনার ব্যাখ্যা না দিয়ে ক্ষেপে গিয়ে বলেন, ‘টাকা নিয়েছি। কিন্তু ওটা কীসের টাকা, তার কোনো প্রমাণ নেই।
ইকবাল কবিরের যত অপকর্ম :
নলছিটি এলজিইডি`র উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ ইকবাল কবিরের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে ঠিকাদার ও সাধারন মানুষ,সাংবাদিক সচেতন ব্যক্তিরা বিভিন্ন দপ্তরে উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন।
জানা গেছে, মোঃ ইকবাল কবির ২০২০ সসালের ২৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে নলছিটি উপজেলায় যোগদানের পর থেকে এ উপজেলায় উন্নয়ন মূলক কাজের কোন তদারকি করেন না। ফলে ঠিকাদারগন ইচ্ছেমত সিডিউল না মেনে কাজ করে যাচ্ছেন ফলে ক্ষতি হচ্ছে উন্নয়ন কর্মকান্ড আর সরকার হারাচ্ছে সুনাম। তিনি একজন অদক্ষ ও অযোগ্য লোকও বটে। তার পক্ষে উপজেলা পরিচালনার দক্ষতার অভাব রয়েছে। এ বিষয়ে ঠিকাদারগন ঝালকাঠী এলজিইডি দপ্তরকে জানিয়েছেন বহুবার।
অফিসের টি/এ বিলের টাকা উত্তোলন করে একক ভাবে আত্মসাৎ করেন। এছাড়াও তার দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ অফিসের লোকজন। অফিসে বসে ঠিকাদারদেরকে ভুল সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন যা উন্নয়ণমূলক কাজ সম্পন্ন করতে সমস্যায় পড়তে হয় ঠিকাদারদের। এতে প্রকল্পের ব্যয়, সময় ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পার্শ্ববর্তী নলছিটি উপজেলার এক ঠিকাদার বলেন, আমি বহুদিন যাবৎ উপজেলা এলজিইডি অফিসে আসি। স্যার আমার সাইডে গিয়ে কাজের মান যাচাই এবং সিডিউল মতো কাজ দেখে আসবেন কিন্তু সে সময় দিতে না পারায় আমার কাজটি পড়ে আছে। এরকম একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ পড়ে আছে উপজেলা প্রকৌশলীর অবহেলার কারণে। অভিযোগের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করে ঠিকাদাররা। বিতর্কিত অসৎ দুর্নীতিবাজ উপজেলা প্রকৌশলী ইকবাল কবিরকে পরিবর্তন করে একজন দক্ষ উপজেলা প্রকৌশলী পদায়ন করার দাবি জানান ঠিকাদারগন।
ইকবাল কবির জড়িয়ে পড়েছেন মামলায় :
নলছিটির একজন সাংবাদিক ও দশ যুবলীগ নেতাকর্মীসহ মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে কল্পিত ও মনগড়া অভিযোগ এনে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী ইকবাল কবির। এ ঘটনায় পুলিশ যুবলীগ নেতা লুৎফর রহমান শাহিনকে আটক করে।
প্রকৌশলী ইকবার কবির নলছিটি থানায় দেয়া লিখিত এজাহারে উল্লেখ করেন, ২৪ জুন রাত ৮টার সময় আমার কার্যালয়ে আসামীরা এসে অনধিকার প্রবেশ করে সরকারি কাজে বাধাঁ প্রদান করে। আমাকে তারা কিলঘুষি মেরে অফিসের মেঝেতে ফেলে দিয়ে হুমকি প্রদান করেন। যারা এসেছেন তারা চলমান টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে চান।যাদেরকে আসামী করা হয়েছে তারা হলেন, ওয়াসিম হাওলাদার, লাইজু রহমান রিয়াজ, মোঃ জকির, মোঃ লুৎফর রহমান শাহিন, মহিউদ্দিন, মোঃ ইলিয়াস, দৈনিক আজকের বার্তার ভ্রাম্যমান সাংবাদিক এম আর কামরুল, আবুল কালাম আজাদ, মোঃ হানিফ হাওলাদার, তৌহিদ গাজী, দুলাল।মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে তখন এলজিইডি নলছিটির উপজেলা প্রকৌশলী ইকবাল কবির বলেছিলেন, আমি মামলা দায়ের করেছি শীর্ষ কর্মকর্তাদের নির্দেশে। টেন্ডার বিষয়ে জানতে চাইলে তাদেরকে আসামী করা হয়েছে কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তারা টেন্ডার ভাগ ভাটোয়ারা হয়ে গেছে জানা সত্বেও এসে হট্টগোল করেছে। প্রতিটি প্রকল্প থেকে বিলের শতকরা তিন ও পাচঁ ভাগ পার্সেন্টেজ নেন তিনি।
মিথ্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে এক সাংবাদিককেও:
বিতর্কিত ও মিথ্যা মামলায় আসামী করা হয় দৈনিক আজকের বার্তার ভ্রাম্যমান সাংবাদিক এম আর কামরুলকে। এ ব্যাপারে সাংবাদিক এম আর কামরুল বলেন, আমি কোন ঠিকাদার বা টেন্ডার প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত নই। তারপরেও আমাকে আসামী করা হয়েছে তা দুঃখজনক। তিনি বলেন ,আমি ইকবাল কবিরকে কল করেছিলাম কেন আইডি ওপেন করা হচ্ছেনা। সাংবাদিক হিসেবে প্রশ্ন করে আসামী হয়েছি। ইকবাল কবির একজন দুর্নীতিবাজ ও অসৎ কর্মকর্তা। নিজের অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ কেলেংকারী ধামাচাপা দেয়ার জন্যই এবং সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ রাখার জন্য আমার নামে মিথ্যা বানোয়াট ও হয়রানীর জন্য মামলা দায়ের করেছেন।
স্থানীয় শাজাহান জানান, মামলায় ঘটনার দিন উল্লেখ করা হয়েছে ২৪ জুন আর মামলা হয়েছে ২৫ জুলাই। এত বড় ঘটনা তা নলছিটির কেউ জানেনা। মিথ্যার একটা সীমা থাকে যা অতিক্রম করেছে ইকবাল কবির। আসামীদের মধ্য একজন সাংবাদিক ছাড়া সকলেই ক্ষমতাশীনদলের অংঙ্গসংগঠন আওয়ামী যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি বলেন, মামলাটি সম্পুর্ন মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী একজন অসৎ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। একটি পক্ষকে সুবিধা দিতে তিনি মামলা দায়েরের মত ন্যাক্কারজনক কর্ম করেছেন যা নলছিটিতে অতীতে ঘটেনি। স্থানীয় লোকজন মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানিয়েছেন।
নলছিটিতে উদ্বোধনের আগেই সেতুর সংযোগ সড়কে ধস :
উদ্বোধনের আগেই ধসে পড়েছে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সরমহল গ্রামের সিংহবাড়ি খালের ওপর নির্মিত সেতুর সংযোগ (অ্যাপ্রোচ) সড়ক। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি। স্থানীয়দের দাবি, কাজের শুরু থেকেই সংযোগ সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ করে আসছিলেন তারা।নলছিটি উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু ও দুই পাশে ১০৪ মিটার সংযোগ সড়কের কাজের জন্য খরচ হয়েছে ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এই সেতুর মাধ্যমে কুশঙ্গল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম সংযুক্ত হবে।স্থানীয়দের অভিযোগ, শুরুর দিকে কাজে ধীরগতি ছিল। কিন্তু যথাসময়ে কাজটি শেষ করতে শেষের দিকে এসে তড়িঘড়ি করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) সঠিক তত্ত্বাবধান না থাকায় ও নিম্নমানের কাজ হওয়ায় বৃষ্টিতে ভেঙে গেছে সেতুতে ওঠার সড়কটি।ইকবার কবির ঠিকাদারদের থেকে ঘুষ নেয়ার কারনেই তদারকি করেন নি।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬ টায় এবং সাড়ে ৬ টায় মোবাইলে কল দিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি। তবে সম্প্রতি তিনি ঝালকাঠী -২ আসনের সংসদ সদস্য’র বরাত দিয়ে বলেন আমি যা করি তা লিডারের নির্দেশে করি। তবে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা জানিয়েছেন ইকবাল কবির একজন অসৎ ও ধুর্ত লোক। লিডারের নাম ভাঙ্গিয়ে অপকর্ম করে যাচ্ছে।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।