খুলনা কৃষি অঞ্চলে স্মার্ট প্রযুক্তি প্রকল্পের নামে চলছে প্রকল্প পরিচালকের অর্থ লোপাট


ফকির শহিদুল ইসলাম,খুলনা : বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ দেশ বাংলাদেশ। একারণে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় কাজ করছে। জলবায়ু পরিবর্তন যাতে আমাদের খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত বা বাধাগ্রস্থ করতে না পারে এ জন্য জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলায় কৃষি সহনশীল, পতিত ও অনাবাদী জমিকে চাষের আওতায় আনার কাজ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। বর্তমান সরকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে নানা মুখি প্রকল্প গ্রহন করেছে । এরই ধারাবাহিকতায় কৃষি অঞ্চল খুলনার কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের জীবন মান ও ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধির কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য সারা দেশের প্রন্তিক পর্যায়ে কৃষকদরে আধুনিক প্রযুক্তির প্রশিক্ষন এবং প্রশিক্ষনলব্ধ জ্ঞানের মাধ্যমে কিভাবে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মুল্য প্রাপ্তি। খুলণাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা লবণাক্ত । উপকুলী এলাকায় জলবায়ুর অভিযোজন মোকাবিলায় খুলনা কৃষি অঞ্চলের (খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং নড়াইল জেলার) ২৮টি উপজেলা ও ২টি মেট্রোপলিটন এলাকার পানি ব্যবস্থাপনা, মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা ও উচ্চমূল্যের আধুনিক জাতের ফল এবং সবজি আবাদ সম্প্রসারণের মাধ্যমে উৎপাদন ১ লাখ মেট্রিকটন সবজি এবং ফলের উৎপাদন ৩০ হাজার মেট্রিক টন বৃদ্ধিতে গ্রহন করা হয়েছে ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্প। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে জুলাই ২০২১ থেকে জুন ২০২৪ইং তিন বছর মেয়াদে ৪৯,৭১০ কোটি টাকা ব্যায়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিন বছরের এই প্রকল্পে ইতিমধ্যে মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত অর্থ বরাদ্ধ পেয়েছে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা । যা মোট ব্যায়ের প্রায় ৭৫ ভাগ । প্রকল্পের বরাদ্ধের টাকা নিজ ইচ্ছামত খরচ করছেন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শেখ ফজলুল হক মনি। তার বিরুদ্ধে প্রকল্পের শুরু থেকে প্রকল্পের ক্রয় প্রক্রিয়া ও কাজের নামে কোটি টাকা লোপাট করার অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পে ১০০টি ০,৫ হর্স পাওয়ারে সোলার পাম্প কথা উল্লেখ থাকলেও তিনি ১৮০ ওয়াটের পাম্প ,সোলার প্যানেল ৪৫ ডিগ্রি এ্যাঙ্গেলে স্থাপনের কথা থাকলে তা তিনি করেননি । প্রকল্পে প্রদর্শনী,গার্ডেন টিলার,বুম স্প্রেয়ার,ফুট পাম্প,মিনি কর্নার,সোলার পাম্প,মিনি পুকুর,পলিনেটসহ ২১টি প্রযুক্তি নিয়মের প্রতিটি কাজে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা । যা দুদক অনুসন্ধান করলে বেড়িয়ে আসবে আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এছাড়াও দাকোপের মাঠ দিবসে যেয়ে দেখা যায় মিনি পুকর পানিতে ভরা । তিনি মাঠ দিবসে আগের রাতে স্যালো মেশিনদ্বারা মিনি পুকরে পানি ভরে রাখেন । পরিচালক শেখ ফজলুল হক মনি তিনি নিজ গ্রামের আত্মীয় দিয়ে দাকোপ, পাইকগাছা, বটিয়াঘাটা, কয়রা, শ্যামনগর উপজেলায় ১০০ টি পুকুর এসকেভেটর দ্বারা খননের কাজ করেছেন। আর্থিক বিধি বিধান না মেনে কোটেশন (ৎভয়) করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ১৬/০৫/২০২২ খ্রিঃ তারিখে ১২.০১.০০০০.০১৮.০২.০০৩.২২.৮৬ স্মারকে ৩০ (ত্রিশ) উপজেলায় ১৬৬ ব্যাচ ট্রেনিং ও ১৫৫ টি মাঠ দিবসের বরাদ্দ প্রদান করেন। যেখানে ১৬৬ ব্যাচে ৪৯৮০ জন কৃষকের প্রশিক্ষণ উপকরণ বাবদ (ব্যাগ, কলম, প্যাড) ২৯,৮৮,০০০ (উনঅত্রিশ লক্ষ আটাশি হাজার টাকা) কোটেশন ছাড়াই নিজেই ক্রয় করে সরবরাহ করছেন, যা অত্যন্ত নিম্ন মানের, যা ক্রয় করতে খরচ হয়েছে মাত্র কয়েক হাজার টাকা। এছাড়া হ্যান্ড আউটের নামে ৭,৪৭,০০০/- (সাত লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার টাকা) সে নিজেই ক্রয় করে সাপ্লাই দিচ্ছেন। এছাড়া তিনি মাঠ দিবস ও কৃষক প্রশিক্ষণে না যেয়েই সম্মানী নিয়েছেন মাত্র ০২ (দুই) মাসে অর্থাৎ ৬০ দিনে কিভাবে একজন প্রকল্প পরিচালক ৩০ উপজেলায় ১৬৬ ব্যাচ প্রশিক্ষণ ও ১৫০ টি মাঠ দিবস, ক্যাডার অফিসারদের ০২ দিন ব্যাপী ট্রেনিং, এসএসএএও ট্রেনিং, অফিস স্টাফদের ট্রেনিং, উপজেলা জেলায় কর্মশালায় সব জায়গা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার সম্মানী নিতে পারে, এ যেনো আলাউদ্দিনের চেরাগের মত টাকা নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩৫,০০,০০০/- (পয়ত্রিশ লক্ষ টাকা) টাকার প্রাইভেট কার ন্ত্রীর নামে ক্রয় সরকারের কাছ থেকে প্রতি মাসে রেন্ট এ কার নামে ৭০,০০০/- (সত্তর হাজার) টাকা নিচ্ছেন। এভাবে কোটি কোটি টাকা অনিয়ম করে আত্মসাৎ করছেন। ধূর্ত প্রকৃতির এই কর্মকর্তা নিজের আখের গোছানোর জন্য ইতোমধ্যে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের পিছনে মোটা অংকের টাকা খরচ করে কর্মশালার আয়োজন করেন এবং তাদের চোখে ধোঁয়া দিয়েই কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছেন। যেনো তারা বিষয়টি না বুঝতে পারে। এছাড়া প্রকল্পে তিনি অভিযোজনের নামে বিরাট অংকের সেড তৈরি করবেন ও বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় করবেন যাতে ক্লাইমেটের সাথে কোনো সম্পর্ক নাই এবং যাহা ইতোমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে ভর্তুকিতে বিভিন্ন প্রকল্পে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি প্রকল্প থেকে মাঠ পর্যায়ে দেওয়া বিভিন্ন প্রযুক্তির সাথে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনের কোনো
সম্পর্ক নাই। এ বিষয় কথা বলতে প্রকল্প পরিচালক শেখ ফজলুল হক মনির ব্যাবহৃত সেল ফোন ০১৯১২১৫২৪২৪ নন্বরে কয়েক বার কল দিলে রিসিপ করেননি । পরবর্তীতে তিনি ফোন ব্যাক করলে তার কাছে এ প্রতিবেদক জানতে চান প্রকল্পের কাজে বিভিন্ন অনিয়ম,মিনি পুকুর খনন ও প্রশিক্ষনের নামে অর্থ লোপট, প্রকল্পের মালামাল ক্রয়ে দুর্নীতি করেছেন । জবাবে তিনি বলেন আমার বিরুদ্ধে রির্পোট করেন বলে লাইনটি কেটে দেন । এরপর কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি কল রিসিপ করেননি । উল্লেখ্য, ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিযোজন প্রকল্পটি খুলনা কৃষি অঞ্চলের ৪টি জেলার মোট ২৮টি উপজেলা ও দুটি মেট্রো এলাকায় মোট ২১টি প্রযুক্তি নিয়মে ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্প কার্যক্রম পরিচালনা করবে ।সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে তিন বছর মেয়াদে ৪৯,৭১০ কোটি টাকা ব্যায়ে ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন স্মার্ট প্রকল্পের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে, প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রদর্শনী-৯৪০০, মিনি গার্ডেন টিলার-২৬০টি, পাওয়ার বুম স্প্রেয়ার-২০০টি, ফুট পাম্প স্প্রেয়ার-১০০০টি, মিনি কর্ণ সেলার (মটরসহ)- ৮০০টি, ইসি মিটার (ব্রান্ডেড)- ২০০টি, সোলার পাম্প ০.৫ হর্স পাওয়ার-১০০টি, এলএলপি ৮.৫ অশ্ব ক্ষমতা সম্পন্ন-৫০০টি, মিনি পুকুর খনন (২০০ বর্গমিটার)- ৭০০ টি, ব্রো-পিট খনন (১৫ ফুট চওড়া ৬ ফুট গভীরতা)- ২০ কিমি, পলি নেট হাউজ (২০ শতক) ৮ টি। প্রকল্পের উদ্দেশ্য, ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার ও পতিত জমি চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় ফসলের নিবিড়তা ১৭০% থেকে ১৭৫% উন্নীতকরণ, পানি ব্যবস্থাপনা, মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও উচ্চমূল্যের আধুনিক জাতের ফল এবং সবজি আবাদ সম্প্রসারণের মাধ্যমে উৎপাদন ৮%-১০% বৃদ্ধিকরণ। স্থানীয় অভিঘাত সহনশীল টেকসই জাত সম্প্রসারণ ও অভিযোজন কৌশলের মাধ্যমে ফসলের বৈচিত্রায়ন ।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।