বাংলাদেশ বরিশাল

দ্বন্ধ-কোন্দলে নষ্ট হচ্ছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ,বাড়ছে সংকট

বিশ্ববিদ্যালয় etihad news
print news

মামুনুর রশীদ নোমানী,বরিশাল : বরিশালবাসীর একটি স্বপ্ন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।কীর্তনখোলার তীর ঘেষে নিরিবিলি পরিবেশে স্থাপিত হয়েছিল। যেখান থেকে শুরু হয়েছিল সেখানেই রয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির আয়তন। শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দ্বন্ধ-কোন্দলে নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ।বাড়ছে সংকট।নেতৃত্ব নিয়ে সব সময় দু’গ্রুপ থাকে মুখোমুখি অবস্থানে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে দিন দিন ক্লাশ রুম, হল,লাইব্রেরী ,ল্যাবসহ সকল ক্ষেত্রে সংকট বাড়ছে। ১৩ বছর পেরিয়ে ২২ ফেব্রুয়ারী’২০২৪ তারিখ ১৪ বছরে পদার্পন করতে যাচ্ছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে যেসব উন্নয়ন হয়েছে তার পরে তেমনটি উন্নয়ন হয়নি। শিক্ষার্থীরা এজন্য দায়ী করেছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কোন্দল এবং অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষ প্রশাসনকে।বিশ্ববিদ্যালয়টির নানান ঘটনায় প্রতিনিয়ত শিরোনাম হচ্ছে গনমাধ্যমে ।

সংকট যখন সবখানে:

বরিশাল -পটুয়াখালী সড়কের কর্নকাঠী নামক স্থানে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।বাহির থেকে দেখা যায় সুন্দর পরিবেশ।তবে ভিতরে কোন্দল আর দ্বন্ধের পাহাড়। স্বেচ্ছাচারিতা আর অনিয়ম। শিক্ষার্থীবান্ধব নেই পরিবেশ।চার মাস যাবৎ নেই ভিসি।একজন রয়েছেন রুটিন দ্বায়িত্বপালনের জন্য।তিনি দিতে পারছেন না নীতি নির্ধারনী সিদ্ধান্ত।
শিক্ষকদের বসার স্থান সংকট,শিক্ষার্থীদের ক্লাশ রুম,হল,ল্যাব,সেমিনার,লাইব্রেরী সংকট চরমে।অথচ ৬ টি অনুষদের অধীনে ২৫টি ডিপার্টমেন্ট থাকলেও মাত্র একজন অধ্যাপক রয়েছে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

দ্বন্ধ-কোন্দল চরমে:

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হওয়ার পরে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান্য পায় বাউফল উপজেলা।নিয়োগ শেষে যখন শুরু হয় বরিশার জিলা স্কুলের ভবনে তখন থেকেই শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মাঝে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়।তবে এ গ্রুপিং কোন দলীয় গ্রুপিং নয়। এ গ্রুপিং আধিপত্য বিস্তারের জন্য।হয় মারামারিও। বর্তমানে শিক্ষকদের মধ্য দুটি গ্রুপ রয়েছে এর একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাতেন ও জাফর।এরা প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূইঁয়ার অনুসারী।অপর গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আরিফ ও খোরশেদ।এরা সাবেক ভিসি ড.ছাদেকুল আরেফিন অনুসারী। অপরদিকে কর্মকর্তাদের মাঝেও দুটি গ্রুপ সক্রিয় তাদের একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাহাউদ্দিন গোলাপ।যিনি বরিশালের সাবেক মেয়র সাদিক অনুসারী। অন্য গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রকৌশলী মো: মুরশীদ আবেদিন। যিনি সাদিক বিরোধী অনুসারীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

শিক্ষক সংকট:

৬ টি অনুষদের অধীনে ২৫টি ডিপার্টমেন্টে শিক্ষক এখন হাতেগোনা।দীর্ঘদিন যাবৎ শুন্য রয়েছে অসংখ্য পদ।এদিকে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের মধ্য বিদেশে রয়েছেন উচ্চ ডিগ্রী নেয়ার জন্য। বিদেশ থাকা শিক্ষকদেরও সংখ্যা কম নয়।

ভিসি নাই ১০৩ দিন :

ভিসি না থাকায় কোন সংকট কাটছেনা বরং দিন দিন সংকট বাড়ছেই। শূন্য পদ পুরণে প্রয়োজন একচন ভিসি। নেই সেশনজট কমানোর উদ্যোগ । বর্তমানে রুটিন দ্বায়িত্বপালনকারী ভিসি ডিপিপি জমা দিলেও কবে নাগাদ তা বাস্তবায়ন হবে তা কেউ পরিস্কার করে বলতে পারছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নেই এখন কোন শিক্ষার পরিবেশ। ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কোর ৪৫তম। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ভিসি ড.ছাদেকুল আরেফিন চলে যাবার পর ভিসি নিয়োগ না হওয়ায় পদোন্নতি আটকে আছে ফলে একাডেমিক কার্যক্রমের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে জানান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেডিং এ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৪৫ তমে দাড়িয়েছে যা দক্ষিণাঞ্চলের এক মাত্র সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠের জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। অথচ পুর্বে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কোর ছিল ৮ম। ওয়েবমেট্রিক্সের র‌্যাংকিংয়ে  শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৬৮ তম স্থান দখল করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ব র‌্যাংকিং ৯ হাজার ৮৩২তম।

সমস্যায় জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয় :

প্রতিষ্ঠার এক যুগ এক বছর পেরিয়ে ১৪ বছরে পদার্পন করলেও নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো শেষ হয়নি প্রথম প্রকল্পের কাজ। ফলে ক্লাসরুম সংকট, আবাসিক সংকট, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস সংকট ও চরম। সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের জন্য মানসম্মত পৃথক অডিটোরিয়াম নেই, নেই পর্যাপ্ত গবেষণাগার। লাইব্রেবিতে প্রয়োজনীয় বইয়ের সংকটসহ পরিবহন সুবিধা এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর পাশাপাশি সর্বাগ্রে প্রয়োজন দক্ষ, যোগ্য, নিবেদিতপ্রাণ, আদর্শবান শিক্ষক। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাতে শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে। প্রফেসর মাত্র একজন, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরের সকল পদ শূণ্য। সবখানে নেই নেই শ্লোগান।এদিকে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। একজন শিক্ষককে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কোর্স পরিচালনা করতে হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীরা গুণগত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তাদের ওপর জেঁকে বসেছে সেশনজটের কালো থাবা। কবে কাটবে এই সেশন জট তা বলতে পারছেন না কেউ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সংকটের শেষ নেই। লাইব্রেরীতে গেলে পাঠ্য বইও পাওয়া যায় না। ক্লাস রুম না থাকায় দাড়িয়ে থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের। বিজ্ঞানাগার নেই মান সম্মত। আবাসন ব্যবস্থা অতি সীমিত। ছোট্ট একটি খাটে ২ জনকে থাকতে হয়। এর উপর সেশন জট দেখা দিয়েছে বিভিন্ন বিভাগে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সহকারী অধ্যাপক বলেন, এখানে শিক্ষক সংকট তীব্র। অনেক বিভাগে ১, ২ এবং ৩/৪ জন করে শিক্ষক রয়েছে। ক্লাস রুমের অভাব প্রকট। ল্যাব ফেসিলিটিজ পর্যাপ্ত নেই। আবসিক সমস্যা দুর করা দরকার। প্রশাসনের দুর্বলতার কারনে প্রথম ধাপের উন্নয়ন কাজ এখনও শেষ হয়নি। এর দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, অভিযোগগুলো শতভাগ সত্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ক্রান্তিকাল চলছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস :

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ৩ জানুয়ারি বরিশালের বেল’স পার্কের বিশাল জনসভায় ঘোষণা দেন, ঢাকার বাইরে পরবর্তী যে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হবে সেটি হবে বরিশালে।কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু ও পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ থমকে যায়। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালের ২৩ নভেম্বর শুক্রবার বরিশাল সার্কিট হাউজে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদের সভায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব গ্রহীত হয়। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তার মৃত্যুতে এ উদ্যোগ আরেকবার থমকে যায়।১৯৯৩ সালে বিএনপি সরকার পৃথক বরিশাল বিভাগ প্রতিষ্ঠা করলে, নতুন বিভাগে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়। বিএম কলেজ অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস বিএম কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরের ঘোষণা দেন। এর প্রেক্ষিতে, বিএম কলেজের উচ্চমাধ্যমিক কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। কিন্তু বরাবরই বাস্তবায়নের অভাবে বরিশালের মানুষের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। পরবর্তীতে নব্বইয়ের দশকের শেষে আওয়ামীলীগ সরকার বাংলাদেশের বৃহত্তর জেলা সদরগুলোতে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ২০০০ সালে “বরিশাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়” প্রতিষ্ঠার প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। ২০০১ সালের ১৫ জুলাই বরিশাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণীত হয়। এতে বলা হয়, বৃহত্তর বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নে বরিশাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (Barisal Science and Technology University) নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে, বরিশাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। পূর্বে অনুমোদিত প্রকল্পের অধীনে পটুয়াখালীতে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়, কিন্তু বরিশালের প্রকল্পটি বাতিল করে পরবর্তীতে একটি পূর্ণাঙ্গ সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এসময় আবারো ব্রজমোহন কলেজকে  বিশ্ববিদ্যালয় করার তোড়জোড় শুরু হয়। তবে, বরিশালবাসীর একাংশের দাবি ছিল স্বতন্ত্র পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের, বিএম কলেজের ঐতিহ্য নষ্ট করে নয়। এসময় বিএনপি সরকার স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব অনুমোদন করে। তৎকালীন বিএনপি নেতা মজিবর রহমান সরোয়ার, এমপি ১৯৭৯ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়ার মন্ত্রীসভায় গৃহীত প্রকল্পের স্মরণে “শহীদ জিয়াউর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়” নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। তৎকালীন  প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ প্রস্তাব অনুমোদন করেন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০০৬ সালের “শহীদ জিয়াউর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় আইন” প্রণয়ন করে। একই বছর বিএনপি সরকার বরিশাল শহরের সন্নিকটে কড়াপুরে নবগ্রাম রোডের পাশে ডেফুলিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য স্থান নির্ধারণ করে ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। কিন্তু ক্ষমতার পট পরিবর্তনের কারণে সেই প্রচেষ্টা আর এগোয়নি।

পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি জোরালো হয়। ২৯ নভেম্বর ২০০৮ সালে তৎকালীন ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন সরকার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব একনেকে পাস করে, কিন্তু একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।

ইতিহাসের নানা বাঁক পেড়িয়ে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যায় প্রতিষ্ঠার কাজ পুনরায় শুরু হয়। ঐ বছর ২৮ মার্চ একনেক সভায় পুনরায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৯৫ কোটি টাকা। ৯ অক্টোবর তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বরিশাল সফরে এসে মৌখিকভাবে সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের কর্ণকাঠি গ্রামে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য স্থান পরিদর্শন ও নির্ধারণ করেন। কর্নকাঠিতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন নির্ধারণ এবং জমি অধিগ্রহণে তৎকালীন সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণ উদ্যোগী ভূমিকা রাখেন ও “শহীদ জিয়াউর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়” এর পরিবর্তে “বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়” নামকরণের প্রস্তাব করেন।

২০১০ সালের ১৬ জুন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধিত  আইন পাস হয়, ও পরবর্তী সময়ে প্রাথমিকভাবে বরিশাল জিলা স্কুলের পরিত্যক্ত কলেজ ভবনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য বরিশাল শহরের সন্নিকটে কীর্তনখোলা নদীর পূর্ব তীরে নির্মাণাধীন দপদপিয়া সেতুর কাছে কর্ণকাঠী গ্রামের ৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বরিশাল সফরে এসে দেশের ৩৩তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে “বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়” এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়-এর প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ড. মো. হারুনর রশীদ খানকে ৪ বছরের জন্য ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ও ভর্তি শুরু হতে লেগে যায় আরও এক বছর। ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি  শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি ৪টি অনুষদের ৬টি বিভাগের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ৬টি বিভাগে ৪০০ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হয় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ।

কীর্তনখোলা ও খয়রাবাদ নদীর মোহনায় প্রেমময় ক্যাম্পাস :

দপদপিয়া ব্রিজ পাড়ি দিলেই দেখা মেলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের। কীর্তনখোলা ও খয়রাবাদ নদীর মোহনায় গড়ে ওঠা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরূপ সৌন্দর্য্যে যে কোন মানুষকে মায়ার বাঁধনে এক মুহূর্তেই মোহিত করে ফেলে। চোখ মেললেই দেখা মেলে অনন্য এক স্থাপনার। যেখানে হাজারো স্বাপ্নিক চোখের মেলা। ৫০ একরের মায়াবী এই ক্যাম্পাসের দুটি একাডেমিক ভবন, দুটি প্রশাসনিক ভবন, লাইব্রেরি ভবন, টিএসসি, ছেলেদের জন্য দুটি আবাসিক হল, মেয়েদের জন্য দুটি হল, উপাচার্যের বাসভবন, শিক্ষক- কর্মকর্তাদের জন্য দুটি ডরমিটরি, দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, মন্দিরের নজরকাঁড়া সৌন্দর্য আপনাকে যেন কোন এক প্রাচীন রাজভূবনে নিয়ে যাবে। ঋতুভেদে প্রকৃতি যেমন নব নব রূপে সজ্জিত হয়, তেমনিভাবে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যও নব রূপে ফুটে উঠে। শরতে শুভ্র সাদা কাশফুল ছেয়ে যায় ক্যাম্পাস, বসন্তে পলাশ ফুলে রঙ্গিন হয়ে উঠে মুক্তমঞ্চের আঙ্গিনা,শীতে কুয়াশায় চাদর মুড়ি দেয় ক্যাম্পাস। পড়ন্ত বিকেলে ক্যাম্পাসে ডানা মেলে টিয়েপাখি, বন্য কবুতরের দল। শালিকের কিচিরমিচির, ভোলা রোডের নিসর্গ সৌন্দর্য্যে যেকোন মানুষকে এক মুহূর্তেই ভুলিয়ে দেয় নিঃসঙ্গতা। মুক্তমঞ্চে দলে দলে শিক্ষার্থীদের আড্ডা-গানে মুখরিত হয়ে উঠে, তালতলা, লন্ডন ব্রিজে প্রেমিকের প্রেম নিবেদনে প্রেমময় হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। পরিবেশবান্ধব সবুজ ক্যাম্পাস হিসেবে সমাদৃত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

এ ব্যাপারে বরিশাল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি ও ডেপুটি রেজিষ্ট্রার বাহাউদ্দীন গোলাপ বলেন,দক্ষিন জনপদের মানুষের স্বপ্ন ছিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।সকলে চেষ্টা করে যাচ্ছে সংকট দুরীকরনের জন্য।তিনি রুটিন দ্বায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়াকে ভাইস চ্যান্সেলর পদে নিয়োগের দাবী জানিয়ে বলেন,তার চেনা জানা এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। তিনি একজন দক্ষ তাকে নিয়োগ দেয়া হলে সকল সংকট দ্রুত কেটে যাবে।

এ ব্যাপারে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মুরশীদ আবেদিন সাংবাদিকদের বলেন, ববি অকাঠামো উন্নয়নে পিছিয়ে আছে। নতুন উপাচার্য সব ধরনের সংকট কাটাতে উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী এসব উন্নয়ন কাজ অনেক আগেই শেষ হওয়া উচিৎ ছিল। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন ববি’র সাথে একই সময় শুরু হয়েছিল। সেখানকার কাজের প্রথম ধাপ অনেক আগে শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের উন্নয়ন কাজও অনেকটা শেষের পথে। কিন্তু ববি’র প্রথম ধাপের কাজই শেষ হয়নি।

এ ব্যাপারে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক ফয়সাল মাহমুদ রুমি বলেন,বিশ্ববিদ্যালয়ে সংকট আছে তা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করি সকল সংকট দ্রুত কেটে যাবে।

 

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *