ঘুষ দুর্নীতি আর জাল দলিল বাণিজ্যের মাস্টারমাইন্ড চট্টগ্রাম সদর সাব রেজিস্ট্রার সঞ্জয় কুমার আচার্য


সজীব আকবর: প্রতি কর্মদিবসে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঘুষ দূর্নীতি আর জাল দলিল বাণিজ্যের একছত্র অধিপতি হিসেবে নিজেকে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠা করেছেন চট্টগ্রাম সদর সাব রেজিস্ট্রার সঞ্জয় কুমার আচার্য।।
জমির শ্রেণী পরিবর্তন, খাস জমির দলিল সম্পাদনসহ তার সার্বিক দু নাম্বারী কাজে মোটা অংকের দক্ষিণা পেয়ে সঞ্জয় কুমারকে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রার খোন্দকার জামিলুর রহমান।
ভলিয়ম বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ফেলা। নামজারি ছাড়ায় জমি রেজিস্ট্রি। ভূয়া এনআইডি কার্ড দিয়ে জমি রেজিস্ট্রেশন, ফ্রেশ জমিকে ডোবানালা আর পতিত দেখিয়ে হায়ার ভ্যালু আর আন্ডার ভ্যালুর মারপ্যাচে ফেলে সরকারের কোটিকোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সঞ্জয় কুমার নামে বেনামে গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। তার নামে রয়েছে মানি লন্ডারিংয় ও দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ।
শেখ হাসিনা ও সাবেক ছাত্রলীগের প্রিয়জন হিসেবে পরিচিত ফরিদপুরের সন্তান সঞ্জয় কুমার আচার্য তার চাকরি জীবনের শুরু থেকেই সব অফিসে নিজেকে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় লাইফের সাবেক ছাত্রলীগ ক্যাডার পরিচয় দিয়ে নিজস্ব ক্ষমতার বলয় সৃষ্টি করে গড়ে তুলেন শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেট।
এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে সেই আন্দোলনকে দমন করার মানসে সঞ্জয় কুমার প্রতি রাতেই কতিপয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডারদের সাথে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকতেন। তাছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বানচাল করার স্বার্থে সঞ্জয় কুমার আচার্য দফায় দফায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডারদের মধ্যে মোটা টালা লগ্নী করেন বলে জনশ্রুতি আছে। ৫ই আগষ্ট ২০২৪ সাবিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে দিন পনের নিশ্চুপ ছিলেন সাব রেজিস্ট্রার সঞ্জয় কুমার আচার্য। এরপর পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতেই তিনি এখন আবারো স্বমহিমায় উদ্ভাসিত।।
এদিকে চট্টগ্রাম সদর সাব রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বৈধ দলিল, আরএস ও সিএস খতিয়ান ছাড়াই বিভিন্ন সময়ে জমি অন্যের নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। অভিযোগ উঠেছে—সরকারকে খাজনা না দেওয়া এবং আসল মালিকানা প্রমাণ না থাকলেও সাব রেজিস্ট্রার সঞ্জয় কুমার আচার্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে রেজিস্ট্রি অনুমোদন করে লক্ষ লক্ষ টাকা লুটে নিচ্ছেন।
ভুক্তভোগী শরফুল হক গত ২৩ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বাংলাদেশ ফিন্যান্স ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, চান্দগাঁও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারসহ একাধিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগপত্রে তিনি সাব রেজিস্ট্রারের দুর্নীতির পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতার সহায়তায় ভবন দখল ও উচ্ছেদের বিষয়ও উল্লেখ করেন।
অভিযোগে বলা হয়, প্রকৃত মালিক শাহনেওয়াজ খান ও তার উত্তরসূরিদের নামে খতিয়ান থাকা সত্ত্বেও ওমর ফারুক নামের এক ব্যক্তি জাল কাগজপত্র তৈরি করে নিজেকে মালিক দাবি করেন। পরে অবৈধভাবে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে জায়গা দখল করেন এবং ভুক্তভোগী শরফুল হককে উচ্ছেদ করে সামাজিকভাবে হেয় করেন।
এছাড়া আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ওমর ফারুক ওই সম্পত্তি আওয়ামী লীগ নেতা আরশাদুল আলম বাচ্চুকে দানপত্র দেন। এ কাজে শামিম আরা বেগম, রিপন চৌধুরী, রোওশন আরা বেগম, কেবি আব্দুল জলিল বাহাদুর ও এডভোকেট আলি নওশাদ সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। সাব রেজিস্ট্রার সঞ্জয় কুমার আচার্য ও সাবেক সাব রেজিস্ট্রার মনিরুজ্জামান মূল দলিল, খাজনা খারিজ ও খতিয়ান যাচাই না করেই রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করেন।
শরফুল হক জানান, দখলকৃত ভবনে তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে ‘এমএফসি’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট চালাচ্ছিলেন। কিন্তু গত কয়েক মাস আগে বাচ্চু ও তার সহযোগীরা জোরপূর্বক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ভবন দখল করেন। সিকিউরিটি গার্ড বসিয়ে ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। “আমি ২০০৫ সাল থেকে নিয়মিত ভাড়া দিচ্ছি। এমনকি ২০২১ সালে প্রোপার্টি বিক্রির একটি রেজিস্টার্ড চুক্তিও করেছি। তারপরও গায়ের জোরে আমাকে উচ্ছেদ করা হয়েছে”—অভিযোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। সরাসরি বোঝা যাচ্ছে না আসল বিষয়টি কী। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অন্যদিকে অভিযুক্ত সাব রেজিস্ট্রার সঞ্জয় কুমার আচার্য দাবি করেন, “আমাদের কাছে যে কাগজপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে, তার ভিত্তিতেই রেজিস্ট্রি দেওয়া হয়েছে। খতিয়ান বা অন্যান্য কাগজ সঠিক কি না তা ক্রস চেক করার সুযোগ নেই। কাগজপত্র ঠিক মনে হওয়ায় রেজিস্ট্রি দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।