সরকারি চাকরিতে বাধ্যতামূলক হচ্ছে এনআইডি


অনলাইন ডেস্ক : সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে সরকার। এ ব্যাপারে চারটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।ইসি সূত্র জানায়, জাতীয় পরিচয়পত্রকে বয়সের প্রমাণের দলিল হিসেবে সরকারি কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালায় যুক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে। এতে করে এনআইডি সংশোধনের জটিলতা ও যারা ভবিষ্যতে চাকরিতে যোগদান করবে তাদের ভোগান্তি কম হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৈঠকসংক্রান্ত ইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী বুধবার (৩০ জুলাই) চাকরি (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫ অনুসারে বেতন প্রদানের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) আবশ্যক বিধায় এনআইডির তথ্য আমলে নিয়ে চাকরিতে নিয়োগদান করা; চাকরির ক্ষেত্রে বয়সের প্রমাণক হিসাবে জাতীয় পরিচয়পত্রকে সরকারি কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালায় যুক্ত করা; এনআইডির তথ্যাদি আমলে না নিয়ে চাকরিতে নিয়োগকৃত ব্যক্তিদের এনআইডি সংশোধনে জটিলতা নিরসনসহ একাধিক বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ বিভাগের সচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর ঢাকা মেইলকে বলেন, চাকরি প্রাপ্তির পর বেতন নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রে লিপিবদ্ধ তথ্য (বিশেষ করে জন্ম তারিখ ও নিজ নাম) এর সাথে নিয়োগপত্র/সার্ভিস বহিতে লিপিবদ্ধ তথ্যের মিল না থাকার কারণে অনেকের বেতন পান না। এরপর ভুক্তভোগীরা এনআইডি সংশোধন করতে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে এলে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হন তারা। এজন্য আমরা মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে আলোচনা করব যাতে নিয়োগের ক্ষেত্রে এনআইডি বাধ্যতামূলক করা হয়।
এনআইডি সংশোধনে ‘অযৌক্তিক’ আবেদন ঠেকাতে নতুন পরিকল্পনা
এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা একটা তারিখ নির্ধারণ করব। যে সেই তারিখের পর যদি কেউ তথ্য গোপন করে চাকরিতে যোগদান করে তাহলে তাদের এনআইডি আর সংশোধন করা হবে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা সবাই একমত প্রকাশ করছেন। আগামী আন্তঃমন্ত্রণালয়ের যে বৈঠটি হবে সেখানে এ বিষয়টি চূড়ান্ত হবে বলে আশা করছি।
জানা যায়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০ এর ধারা ১১ বাধ্যতামূলক না থাকার কারণে অনেকেই এ আইনের ব্যবহার করে তথ্য গোপন করে চাকরিতে যোগদান করেন। কিন্তু চাকরি (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫ অনুসারে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর এবং জন্ম তারিখ ব্যবহার করেই Ibas system এর মাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা ও পেনশন নির্ধারণ ও প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া সিম নিবন্ধন, ই-পাসপোর্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, হজ রেজিস্ট্রেশন, কোম্পানি নিবন্ধন ইত্যাদিসহ বিভিন্ন ধরনের নাগরিক সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান একরকম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস (বিএসআর) অনুসারে সরকারি কর্মচারী নিয়োগদানের ক্ষেত্রে বয়স প্রমাণের এনআইডি বাধ্যতামূলক নয়।
এদিকে ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যাদি আমলে নিয়ে চাকরিতে নিয়োগদান ও অন্যান্য সেবা প্রদান’ বিষয়ে সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কর্তৃক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব বরাবর একটি ডি.ও লেটার প্রদান করা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরই ৫ মার্চে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যাদি বিবেচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগকে অনুরোধ জানিয়ে পত্র জারি করে। এরই ধারাবাহিকতায় অর্থ মন্ত্রণালয়, হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, ভূমি মন্ত্রণালয় তাদের অধীনস্থ কার্যালয়গুলো উক্ত পত্রানুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেয়।
এরপরও কিছু প্রতিষ্ঠান সেই আদেশ না মেনে এনআইডি আমলে না নিয়ে চাকরিতে নিয়োগ দেয়। এর ফলে গত ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে ২০টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি/আধাসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠানে নিয়োগদানের ক্ষেত্রে বয়স প্রমাণের ভিত্তি হিসাবে জন্ম সনদ অথবা এসএসসি সনদের পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র বিবেচনায় নেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে পত্র পাঠানো হয়। এবং এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
শর্ত পূরণে ঘাটতি থাকলে বাতিল হবে নিবন্ধন আবেদন
ইসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, বিগত সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পরিচয়পত্র বিবেচনায় না নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বয়স কমিয়ে চাকরিতে যোগদানের কারণে এনআইডি সংশোধনের জন্য ইসিতে আবেদন করেন। এমন কিছু আবেদন আমরা পর্যালোচনা করেছি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নিয়োগ দেওয়ার আগের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও তা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি বা ব্যক্তি তা গোপন করেছে। এ কারণে তারা যতদিন ভাউচার-বিল করে বেতন নিয়েছেন, কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু Ibas-এর মাধ্যমে বেতন প্রদানের করতে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা, যার ফলে চাকরিজীবীদের সামজিক জীবনে পড়েছে বিরূপ প্রভাব। এটি সমাধানের চেষ্টা আমরা করছি।
সার্ভিস বুক ও এনআইডির তথ্য মিল না থাকলে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়-
(১) চাকরি প্রাপ্তির পর বেতন নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রে লিপিবদ্ধ তথ্য (বিশেষ করে জন্ম তারিখ ও নিজ নাম) এর সাথে নিয়োগপত্র/সার্ভিস বহিতে লিপিবদ্ধ তথ্যের তারতম্য হওয়ার কারণে pay Fixation সম্ভব হয় না;
(২) পরবর্তী সময়ে ভুক্তভোগীরা জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের দ্বারস্থ হলে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়;
(৩) সরকারি চাকরির বয়সসীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পরও ভিন্ন ভিন্ন ডকুমেন্টে বয়স কম দেখিয়ে চাকরিতে আবেদনের সুযোগ পেলেও পরবর্তী সময়ে pay Fixation না হওয়ায় ওই সকল ব্যক্তি আর্থিক ক্ষতিসহ মারাত্মক ভোগান্তি ও হয়রানির সম্মুখীন হয়;
(৪) ভোটার তথা পরিচয় নিবন্ধনকালে একটি জন্ম তারিখ ব্যবহার করে। পরবর্তী সময়ে আরেকটি জন্ম সনদ ব্যবহার করে চাকরি লাভ করে। ORG (Office of the Registrar General) এর ওয়েবসাইটে জন্ম নিবন্ধন নম্বর দুটিই সক্রিয় থাকে;
(৫) কতিপয় ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবীর চাহিত জন্ম তারিখ সংশোধন করা হলে তার বয়স ভোটার নিবন্ধনকালে ভোটার হওয়ার ন্যূনতম বয়সের নিচে চলে আসে, সেক্ষেত্রে উক্ত ভোটারের ভোটার হওয়ায় অযোগ্যতার প্রশ্ন সামনে চলে আসে, যা এক ধরনের আইনি জটিলতা সৃষ্টি করে;
সহজ হচ্ছে ভাড়াটিয়াদের ভোটদান
(৬) চাকরিপ্রাপ্তির পর চাহিত জন্ম তারিখ অনুসারে এনআইডি কার্ড সংশোধন করা হলে আবেদনকারীর পিতা/মাতার বয়সের সাথে তার নিজের বয়সের অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে সহোদর ভাই-বোনের বয়সের ক্ষেত্রে chronological disorder দেখা দেয়:
(৭) বিশেষত ১৬-২০তম গ্রেডভুক্ত (৪র্থ শ্রেণি) চাকরির ক্ষেত্রে ব্যক্তির প্রকৃত শিক্ষাগত যোগ্যতা ও জন্ম তারিখ গোপন করে চাকরিতে যোগদানের ফলে যোগ্য ব্যক্তি চাকরি হতে বঞ্চিত হয়;
(৮) নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কর্তৃক নিয়োগ বাতিল চেয়ে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বরাবর এবং এনআইডি কার্ডের তথ্য গোপন করার জন্য নির্বাচন কমিশন বরাবর অভিযোগ ও মামলা দায়ের করাসহ নানা রকম জটিলতার উদ্ভব হচ্ছে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।