বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দেবিদ্বারের মাটিতে প্রথম শহীদ হন রুবেল


অনলাইন ডেস্ক : ২০২৪ সালের ৪ঠা আগস্ট। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে কুমিল্লার দেবিদ্বারে। ছাত্র-জনতার সঙ্গে সকাল থেকে আওয়ামী লীগের থেমে থেমে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছিল। দুপুরে ছাত্র-জনতা অবস্থান নেয় সদরের নিউমার্কেটে। ছাত্র-জনতাকে হটাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। হামলার মুখে ছাত্র-জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে ছোট আলমপুর ও বারেরা ফুলগাছ তলার দিকে সরে গিয়ে অবস্থান নেয় ছাত্র-জনতা। এ সময় দেবিদ্বার আজগর আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অদূরে বাসচালক আবদুর রাজ্জাক রুবেল গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা তাকে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দেবিদ্বারের মাটিতে প্রথম শহীদ হন রুবেল।
শহীদ আবদুর রাজ্জাক রুবেলের স্ত্রীর নাম হ্যাপী আক্তার। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে যা হারিয়েছি, কোনো কিছুর বিনিময়েই সেই অভাব পূরণ হওয়ার নয়। সরকার যতই অনুদান দিক। যতই সাহায্য সহযোগিতা করুক। আমার সন্তানদের যতই প্রতিষ্ঠিত করে দিক। তাদের বাবার অভাব কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে না। আমার স্বামীর কোনো শত্রু ছিল না। সে বাস চালাতো। গুলি করার পরও যদি তারা থেমে যেত, তাহলে হয়তো সে বাঁচতো। কিন্তু না, তাকে যেভাবে পেরেছে কুপিয়ে, পিটিয়ে মারা হয়েছে।
শহীদ আবদুর রাজ্জাক রুবেলের মা হোসনে আরা বেগম। বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা আমার বুকের ধন কেড়ে নিলো। সংসারটা সে আগলিয়ে রাখতো। চার মেয়ের পর এই পোলা হইছিল। ছোটবেলায় ওর বাপ মারা যায়। আমি হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে পুত পালছি। কিছু অমানুষ গুলি করে, কুপিয়ে, পিটিয়ে আমার মানিক জানরে মাইরা ফেললো! আহারে, আমার পোলার দমটা জানি কেমনে বের হইছিল। এক বছর হইছে, আমার রুবেল আর ‘মা’ কইয়া ডাক দেয় না। রাস্তাঘাটে কতো মানুষ দেখি, কিন্তু আমার পোলারে দেখি না।
রুবেলের স্ত্রী হ্যাপী আরও বলেন, আমার ছেলেটা জন্মের আগেই বাবাকে হারিয়ে এতিম হলো। এখন সে ‘বাবা বাবা’ বলে ডাকে। আমি তাকে বাবার মুখ কোথায় দেখাবো? কীভাবে এই শোক ভুলবো? আমার মেয়েটার বয়স এখন পাঁচ বছর চলছে। সে এখনো জানে না তার বাবা কোথায়? স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। যখন দেখে অন্যদের বাবা স্কুল থেকে নিয়ে যায়, তখন বাসায় ফিরে কান্নাকাটি করে আর বলে ‘মা, আমার বাবা কোথায়? বাবা আমাকে কেন নিতে আসে না?’ আমি মিথ্যা বলি, ‘তোমার বাবা বেড়াতে গেছে।’ কিন্তু আর কতোদিন এই মিথ্যা সান্ত্বনা দেবো?
রুবেলের মা হোসনে আরা বেগম ছলের স্মৃতিচারণ করে বলেন, মারা যাওয়ার দিন পোলা দুপুরে ফোন দিছিল। কইছিল ‘মা, আমি ভাত খাবো, হ্যাপীরে কও ভাত বাড়তে।’ আমি রান্না করে বসে ছিলাম, ভাবছিলাম, আইবো একসঙ্গে খামু। কিন্তু পুত তো আইলো না, লাশ হইয়া আইলো। দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাসনাত খান জানান, দেবিদ্বারে গেজেটভুক্ত শহীদের সংখ্যা ৯ জন, আহত আছেন ৪৬ জন। এর বাইরে শহীদ ও আহত যারা রয়েছেন, তাদের যাচাই-বাছাই চলছে। শহীদ পরিবারগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অনুদান দেয়া হচ্ছে। তাদের কবর সংরক্ষণের বিষয়েও পরিবারগুলোর মাধ্যমে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।