বাংলাদেশ ইত্তেহাদ স্পেশাল চট্টগ্রাম

৯ বছরে ২০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ

২০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণকাজে সময় লাগছে ৯ বছর
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,অনলাইন : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণকাজে সময় লাগছে ৯ বছর। এরইমধ্যে সাত বছর পেরিয়ে গেছে। সড়কের কাজ শেষ করতে আরও দুই বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৮ সালে আশুগঞ্জ-নবীনগর সড়ক নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে দেখা দেয় নানা জটিলতা। প্রকল্প প্রস্তাবে ত্রুটির কারণে প্রকল্প সংশোধন করতে হয়। এরপর ঠিকাদারের গাফিলতিতে সময় পার হওয়ার পর সড়ক নির্মাণকাজে বাধা এখন ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা। স্থানীয়রা জানান, জেলার দুই উপজেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা ছাড়াও ঢাকার সঙ্গে নবীনগরের যোগাযোগকে সহজ করবে এই সড়ক। ৫০-৬০ কিলোমিটার পথ ঘুরে কুমিল্লা হয়ে আর ঢাকা যেতে হবে না তাদের। তবে সড়ক নির্মাণে দীর্ঘসূত্রিতায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এখন মানুষ। ২০১৭ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেকের সভায় ৪২১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার এই মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন পায়। এরপর ২০১৮ সালে সড়ক নির্মাণকাজে হাত দেয় সড়ক বিভাগ। কিন্তু কাজের শুরুতে ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ সঠিক না হওয়ায় দেখা দেয় জটিলতা। এরপরই ১৮৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৬০৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকার সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব পেশ করা হয়। নতুন প্রকল্প প্রস্তাব পাস হলেও কাজ এগোয়নি তেমনভাবে। প্রকল্পের মেয়াদ প্রথম দফায় তিন বছর, পরে আরও দুই বছর করে মোট সাত বছরে তিতাস ও পাগলা নদীতে দু’টি বড় সেতুসহ ৮টি সেতু, ১৩টি কালভার্ট এবং সাব বেইজসহ ৯ কিলোমিটার রাস্তার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে এ বছরের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আরও দুই বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এখন কাজ আটকে আছে অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ায়।

লালপুর সিএনজি স্টেশনের কাছে মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিনের বাড়ির মুখে এসে বন্ধ সড়কের কাজ। ওদিকে, লালপুর পশ্চিমপাড়ায় হোসেন ডাক্তারের বাড়ির মুখে এসে থেমে গেছে সড়ক। মধ্যেখানে জমির ওপর দিয়ে সড়ক নির্মাণ হলেও তা ব্যবহার করতে পারছেন না কেউ সড়কের দুই মুখে থাকা এসব বাড়িঘর উচ্ছেদ না হওয়ায়। অধিগ্রহণের টাকা না পাওয়ায় জায়গা খালি করে দিচ্ছেন না বাড়ির মালিকরা। গত দুই বছর ধরে এভাবেই পড়ে আছে সড়ক। বাইশমৌজা থেকে লালপুর পর্যন্ত সড়ক সংযোগ স্থাপিত না হওয়ায় জেলার অন্যতম বাইশমৌজা গরুর বাজারে আসা শত শত ক্রেতা-বিক্রেতা, এলাকার মানুষের ভোগান্তি চরমে। ওই অংশে গ্রামের ভেতরের সরু পথ দিয়ে শত শত যানবাহন চলতে গিয়ে ভীষণ যানজট সৃষ্টি করছে।

কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের সাতঘরহাটির আবু কাউসার জানান, মঙ্গলবার হাটের দিনে লালপুর থেকে বাইশমৌজা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে যানজটের কারণে দুই ঘণ্টাও সময় লেগে যায়। মহল্লার ভেতর দিয়ে শত শত মিনি ট্রাক, সিএনজি অটোরিকশা, ইজিবাইক, মাইক্রো চলাচল করার ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ কয়েক মিনিটের পথ। লালপুর পশ্চিমপাড়ার তানভীর মাহমুদ বলেন, আমরা গ্রামের হয়েও ঘর থেকে বের হতে পারি না। মঙ্গলবারে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। প্রচুর গাড়ি আসা-যাওয়া করে। কিন্তু রাস্তার কাজের কোনো খোঁজখবর নেই। তানভীরদের ৪ শতাংশ ভিটেবাড়ি রাস্তার জন্য অধিগ্রহণে পড়েছে। জমি, বাড়িঘরের ক্ষতিপূরণ না দেয়ার কারণে রাস্তা হচ্ছে না বলেও জানান তিনি। বাইশমৌজা গ্রামের কবির খান বলেন, টাকা-পয়সা না পেলে মানুষ কি জায়গা ছেড়ে দেবে। উচ্ছেদ হবে। জনগণের টাকা পরিশোধ করলে জনগণ যার যার জায়গায় চলে যাবে। শুধু ঘোরাচ্ছে। একটু একটু করে রাস্তা করে, এটাতো জনগণের হয়রানি।

আমতলীর রুবেল মিয়া বলেন, আল্লাহ্‌ জানেন কবে এই রাস্তার কাজ শেষ হবে। লালপুরের বাকের আহমেদ খান বলেন, দ্রুত রাস্তার কাজ শেষ করলে মানুষ উপকৃত হবে। এখানে অনেক মিল-কারখানা গড়ে উঠবে। সরজমিন সড়কের কৃষ্ণনগর-বাইশমৌজা অংশের গাজীরকান্দি ও কিশোরপুরে দেখা গেছে, রাস্তা থেকে ব্রিজ পাহাড়ের মতো উঁচুতে। এতে যানবাহন ওঠা তো দূরে থাক, মানুষের ওঠাই কষ্টকর। লালপুর থেকে আশুগঞ্জর দিকে নোয়াগাঁও ও ত্রিমোহনায় প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে সড়কের কোনো আলামত নেই।
সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮ সালের ১লা জুলাই থেকে সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ২০২৭ সালের ৩০শে জুন পর্যন্ত সড়ক বাস্তবায়নের সময় রয়েছে। এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাগজপত্রে কাজের অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ৭৮ ভাগ। আর্থিক অগ্রগতি ৬২ দশমিক ৮৩ ভাগ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম জানান, ভূমি অধিগ্রহণ হয়নি। এটাই মূল সমস্যা। সড়ক নির্মাণে মোট ৫৩ একর ১৭.৪৫ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে। পাঁচটি এলএ (ল্যান্ড অ্যাকুইজিয়েশন) কেইসের মাধ্যমে এই জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে জানিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জেসমিন সুলতানা বলেন, মামলাগুলোর একেকটি ধাপে আমরা কাজ করছি। মোটামুটি সবগুলোতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। বেশ কিছু কমিশনার স্যারের অফিসে আপত্তির জন্য সময় দেয়া হয়েছে। আপত্তির শুনানি সাপেক্ষে এখানে ৭ ধারা নোটিশ জারি হবে। তারপর ৮ ধারা নোটিশ জারির পর যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, তারা টাকা পেয়ে যাবেন। এর মধ্যে একটি মামলায় আগামী ১৫ দিনের মধ্যে টাকা দেয়া শুরু হবে। বাকিগুলোতে টাকা প্রদানে আরও তিন মাস সময় লাগবে।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.