পিরিয়ড ট্যাক্স :স্যানিটারি প্যাডের ওপর সরকারি করারোপ বৈষম্যমূলক

ইত্তেহাদ নিউজ,অনলাইন :কৈশোরের অসহায় অভিজ্ঞতা পুঁজি করে ঐতিহাসিক এক লড়াইয়ে নেমেছেন মাহনুর ওমর। পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে বেড়ে উঠা এই তরুণ আইনজীবী সম্প্রতি পাকিস্তানে নারীদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানগত বৈষম্যের বিপক্ষে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন।
দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে মাহনুর বলেছিলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দেখেছি, সমাজে নারীরা নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়। বিশেষ করে তাদের স্বাস্থ্য অধিকারের ক্ষেত্রে।’
মাহনুর বলেন, ‘যদি আমাদের আইনচর্চার লাইসেন্স থাকে, তবে কেন সেটি নারীদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যবহার করব না?’মাসিক স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত পণ্যগুলো নারীর মৌলিক স্বাস্থ্য চাহিদার অংশ। কিন্তু এগুলোকে বিলাসপণ্য হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করে অন্যায্যভাবে উচ্চ হারে কর আরোপ করা হচ্ছে।
২৫ বছরের মাহনুর সম্প্রতি লাহোর হাইকোর্টে একটি আবেদন করেছেন। যেখানে বলা হয়েছে, স্যানিটারি প্যাডের ওপর সরকারি করকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে হবে।’ তার দাবি, এই কর আসলে নারীর ওপর আরোপিত বৈষম্যমূলক ‘পিরিয়ড ট্যাক্স’। এই পদক্ষেপ দেশজুড়ে লিঙ্গসমতা ও নারীর স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
আবেদনে বলা হয়েছে, মাসিক স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত পণ্যগুলো নারীর মৌলিক স্বাস্থ্য চাহিদার অংশ। কিন্তু এগুলোকে বিলাসপণ্য হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করে অন্যায্যভাবে উচ্চ হারে কর আরোপ করা হচ্ছে।
মাহনূর জানান, ‘মাসিক একটি স্বাভাবিক জৈব প্রক্রিয়া, অথচ আমরা আমাদের মেয়েদের এ বিষয়ে শিক্ষা দিই না। অনেক কিশোরী প্রথমবার পিরিয়ড হলে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। আর অনেক মা নিজের মেয়ের সঙ্গেও এই বিষয়ে কথা বলতে ভয় পান। যদি আমরা পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে পারি, তাহলে মাসিক স্বাস্থ্য নিয়েও কেন পারব না?’এই দাবি তুলে মাহনুর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা ও বিদ্রূপের শিকার হয়েছেন। তবে দমে যাননি।
মাহনুর বিশ্বাস করেন মানুষের মানসিকতা একদিন বদলাবে। ‘নারীদের বিষয়ে আমাদের সমাজে এক ধরনের শূন্যতা আছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, এই মামলা জিতলে নারীর স্বাস্থ্য উন্নত হবে, রোগ কমবে, আর সমাজের মানসিকতাও বদলাবে।’
লাহোর কোর্টে করা আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে স্যানিটারি প্যাডের ওপর প্রায় ৪০% কর আরোপ করা হয়। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের ওপর ১৮% বিক্রয়কর এবং আমদানি করা উপকরণের ওপর প্রায় ২৫% শুল্ক।
মাহনূরের মতে, এই করগুলো দেশটির সংবিধানের ৩, ১৪, ২৫ ও ৩৭ অনুচ্ছেদের অধীনে নারীর সমতা, মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়ের অধিকারের লঙ্ঘন।
তার মামলাটি দেশে ‘ট্যাক্সে লিঙ্গবৈষম্য’ ও ‘স্বাস্থ্য পণ্যে অসম প্রবেশাধিকার’ নিয়ে জাতীয় আলোচনা জাগিয়েছে। বিভিন্ন পেশার নারী এতে সমর্থন জানিয়েছেন।
লাহোর হাইকোর্ট ইতোমধ্যে ফেডারেল সরকার, ফেডারেল বোর্ড অব রেভিনিউ (এফবিআর) ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নোটিশ দিয়েছে জবাব দিতে।যদি আদালত এই করকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে, তাহলে এটি একটি ঐতিহাসিক নজির তৈরি করবে।সরকারকে বাধ্য করবে স্যানিটারি প্যাডকে ‘অত্যাবশ্যক পণ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে এবং সব কর তুলে নিতে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।


