গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগ ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে বরগুনার সাবেক জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানকে লিগ্যাল নোটিস


বরগুনা প্রতিনিধি : এক নারীর সঙ্গে বরগুনার সাবেক জেলা প্রশাসক ও বর্তমানে যুগ্ম সচিব হাবিবুর রহমানের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তিন পর্বের ভিডিওতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও তিনটি ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে বরগুনায়।এরমধ্যেই জোর করে গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগ এনে রাজিয়া সুলতানা রাকা নামে এক নারীর পক্ষ থেকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে একটি লিগ্যাল নোটিস পাঠানো হয়েছে হাবিবুর রহমানকে।ব্যারিস্টার মহিউদ্দীনের মাধ্যমে পাঠানো ওই লিগ্যাল নোটিসে বলা হয়েছে, রাজিয়া সুলতানা রাকার সঙ্গে হাবিবুর রহমানে পরিচয় গাজীপুরে কোনো একটি অফিসিয়াল প্রোগ্রামে। সেই থেকেই হাবিবুর রহমান তাকে অযাচিতভাবে ফোন দিতেন এবং কথা বলতেন। কথা বলতে বলতে একসময় বন্ধুত্ব। অতঃপর প্রেমের সম্পর্ক হয়। এরপর হাবিবুর রহমান ওই নারীকে বলেন, তার স্ত্রীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক নেই, দাম্পত্য জীবন অসুখী। তাকে ডিভোর্স দিয়ে রাকাকে বিয়ে করবেন।লিগ্যাল নোটিসে আরও বলা হয়, চলতি বছরের ৩ মে রাজিয়া সুলতানা রাকা কুয়াকাটায় বেড়াতে যান। সেখান থেকে হাবিবুর রহমান তাকে উন্নত মানের হোটেলে রাখাসহ নানা রকম কথা বলে বরগুনায় নিয়ে যান। কিন্তু পরে জেলা প্রশাসকের বাংলোতে নিয়ে ওঠানো হয়। সেখানে তার সঙ্গে রাত যাপন এবং দৈহিক সম্পর্ক হয়। সেই সময়ে হাবিবুর রহমান তাদের অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করেন। রাকা ঢাকায় ফিরে গেলে ধারণ করা ওই ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে আবারও তাকে ১৭ জুন বরগুনায় নেওয়া হয়। তখন আবারও তাদের মধ্যে দৈহিক সম্পর্কের ঘটনা ঘটে। এরপর রাকাকে গাড়িতে বরিশাল বিমানবন্দরে পৌঁছে দেওয়া হয়। সেখান থেকে বিমানে বরিশাল থেকে ঢাকায় যান তিনি। পরে রাকা গর্ভবতী হন। এ ঘটনার তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হয়। একপর্যায়ে হাবিবুর রহমান তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দুজনের সম্মতিতে ঢাকা রায়েরবাজারে অবস্থিত লিনা মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে রাকা গর্ভপাত করেন। রাজিয়া সুলতানা রাকা এ ঘটনায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ অথবা তাকে বিয়ে করার জন্য লিগ্যাল নোটিস দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই হাবিবুর রহমান গুরুতর অসুস্থ হন এবং তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেওয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, হাবিবুর রহমানের চারিত্রিক কারণে স্ত্রীর সঙ্গে পারিবারিক গ-গোলের ঘটনায় তিনি মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে অচেতন হয়ে গিয়েছিলেন।
বরগুনার জেলা প্রশাসক থেকে সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে হাবিবুর রহমান বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের সীমান্ত-১ শাখায় যুগ্ম সচিব পদে কর্মরত। তিনি আড়াই বছর বরগুনার জেলা প্রশাসক ছিলেন। এ বিষয়ে তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন কল রিসিভ করেননি।দীর্ঘদিন ধরেই সাবেক জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানে বিরুদ্ধে নারী আসক্তির গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। বিভিন্ন এলাকা থেকে মেয়েদের আনা হতো তার মনোরঞ্জনের জন্য।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের এক ব্যক্তি সময়ের আলোকে বলেন, সাবেক জেলা প্রশাসকের বাংলোতে প্রায়ই নতুন নতুন মেয়েদের দেখা যেত। এসব মেয়েকে বিমানে এবং কালো গাড়িতে আনা-নেওয়া করা হতো। জেলা প্রশাসনের ৪-৫ ব্যক্তির সহযোগিতায় এসব অনৈতিক কাজ চলত। এদের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফয়সাল আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পিজুস চন্দ্র দে, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শুভ্রা দাস, সাবেক নাজির মাসুদ করিম এবং বর্তমান নাজির তানসেনের নাম শোনা যায়। এ ৫ ব্যক্তির প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতায় জেলা প্রশাসনে ওই সময় অন্যায়-অনিয়মের রাজত্ব তৈরি হয়েছিল। মোহা. রফিকুল ইসলাম নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর অনিয়মের অভিযোগে জেলা নাজিরের পদ থেকে মাসুদ করিমকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কালো গাড়িতে করে রাকাকে ডিসির বাংলোতে আনা-নেওয়ার পুরো দায়িত্ব পালন করেন বর্তমান নাজির তানসেন। এ ছাড়া হাবিবুর রহমানের মনোরঞ্জনের জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে আনা মেয়েদের দেওয়া যাতায়াত ভাতা, শাড়ি, পোশাক, টাকা এবং অন্যান্য উপঢৌকনের পুরো ব্যয়ভার নেজারত থেকে দেওয়া হতো।এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশসাক (সার্বিক) ফয়সাল আহমেদ বলেন, আমি কোনো ভিডিও দেখিনি, শুনিনি এবং এ বিষয়ে কিছুই জানা নেই বলে ক্ষুব্ধ হয়ে ফোনের লাইন কেটে দেন।নতুন জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন কল রিসিভ করেননি।তবে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনায় আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে এবং জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমার মক্কেল অভিযোগকারী প্রাথমিকভাবে আইনি পদক্ষেপ অনুযায়ী লিগ্যাল নোটিস পাঠিয়েছেন। সেখানে ৫ কোটি টাকার ক্ষতির কথা উল্লেখ করেছেন। অভিযোগকারীর অনুকূলে পর্যাপ্ত কাগজপত্র রয়েছে। অবস্থা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
* দেশ বিদেশের সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।