Untitled 9

সাইবার নিরাপত্তা আইন গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্বেগ থাকাটা তাই স্বাভাবিক

print news

বিভিন্ন মহলের উদ্বেগ সত্ত্বেও বুধবার জাতীয় সংসদে পাশ হয়ে গেল সাইবার নিরাপত্তা বিল। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন বিলটি পাশের জন্য প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাশ হয়।

এ আইনে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার, সর্বোচ্চ শাস্তি কোটি টাকা জরিমানা এবং ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান তো রইলই, বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি এবং পুলিশের ইনস্পেকটর পদমর্যাদার কর্মকর্তার হাতে গ্রেফতারের ক্ষমতাও থাকল। তবে মন্দের ভালো-কেউ মিথ্যা মামলা করলে তা অপরাধ হিসাবে গণ্য করে সাজার বিধান রাখা হয়েছে। অবশ্য সংবিধানে অন্যান্য আইনের ক্ষেত্রেও এমন উল্লেখ আছে।

খবরে প্রকাশ, আইনটি পাশের সময় বিলের বিভিন্ন ধারার সমালোচনা করে সংসদে বিরোধীদলীয় সদস্যরা বলেছেন, মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের স্বীকৃতি সংবিধানেই দেওয়া হয়েছে। অথচ এই বিলের বিভিন্ন ধারায় সংবিধান স্বীকৃত এসব অধিকার খর্ব করার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছে। বিরোধী দলের সদস্যরা এ সময় বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও তল্লাশির বিধান সংশোধনের দাবি জানান। এসব দাবি অবশ্য ধোপে টেকেনি।

শুধু বিরোধী দলই নয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও বলা হচ্ছিল, লোক দেখাতে আইনটিতে শুধু কয়েকটি ধারা পরিবর্তন, সাজার পরিমাণ কমানো এবং জামিনযোগ্য ধারা বাড়ানো হয়েছে। মৌলিক অধিকার, মতপ্রকাশ ও বাকস্বাধীনতার ক্ষেত্রে আগের আইনের বিদ্যমান আশঙ্কার জায়গাগুলো রয়েই গেছে।

মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন বলে আসছিল, আগের আইনের মতোই সাইবার নিরাপত্তা আইনও মূলত ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। তাদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীনরা যেভাবে আগের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তাদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে, নতুন আইনটিও একই উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। আরও অভিযোগ উঠেছে, আইনটি অনুমোদনের আগে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামত নেওয়ার কথা থাকলেও তা যথাযথভাবে নেওয়া হয়নি।

একথা ঠিক, ভার্চুয়াল জগতে ভুল তথ্যের প্রবাহ যাতে অবাধ না হয়, সেজন্য বিশ্বের অনেক দেশেই এ সম্পর্কিত আইন রয়েছে। কিন্তু বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর সুবিধার জন্য তার অপব্যবহার ঘটেছে বলে শোনা যায় না।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে সমালোচিত ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন’ বদলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংসদে পাশ করা হয়েছিল। এবারও জাতীয় নির্বাচনের আগে একই উদ্যোগ দেখা গেল। স্বভাবতই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সদ্য পাশ হওয়া সাইবার নিরাপত্তা আইন সঠিক তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশে হুমকি হয়ে দেখা দেবে কি না, এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্বেগ থাকাটা তাই স্বাভাবিক।

এ অবস্থায় সরকারকে এটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে যে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হলো, তা বিরোধী মত দমন এবং মুক্ত মতপ্রকাশ বাধাগ্রস্ত করতে ব্যবহার করা হবে না। এ লক্ষ্যে আইনটির সংস্কার করার প্রয়োজনীয়তা এখনো রয়েছে। নয়তো আইনটি যে নামেই আসুক, হয়রানির আশঙ্কা থেকেই যাবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন....

Check Also

1

একটি গাভী থেকে সফল খামারি রফিকুল-শিউলী দম্পতি

অভাবের সংসারে দেড় বছরের ব্যবধানে জন্ম নেয় ২ সন্তান। তাদের দুধের চাহিদা মেটাতে ঋণ নিয়ে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *