images 1

কিশোর গ্যাং আতঙ্ক

print news

নোয়াখালীর সেনবাগে মেলায় আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে দুই কিশোর গ্যাংয়ের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় দুই গ্রুপের আরও ছয়জন আহত হয়েছে। বুধবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সেবারহাট বাজারের সায়েন্স ক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মাজহারুল ইসলাম শাওন (১৮) ওই ইউনিয়নের উত্তর রাজারামপুর গ্রামের জমাদার বাড়ির আবুধাবি প্রবাসী কচি মিয়ার ছেলে। সে স্থানীয় উত্তর রাজারামপুর বশিরিয়া আলিম মাদ্রাসার দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল।

নোয়াখালীর মতো এমন ঘটনা দেশের অন্য জেলাতেও প্রায়ই ঘটছে। কেননা, কিশোর গ্যাং কালচার সারা দেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোররা ব্যবহৃত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অপরাধের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে খুনাখুনিসহ নানা অপরাধে কিশোর-তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে। মাদক কারবার ও দখলবাজিতেও তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে।

গত দুই দশকে ঢাকায় কিশোর অপরাধীদের হাতে শতাধিক মানুষ খুন হয়েছে। অধিকাংশ কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার পেছনে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা মদদ দিচ্ছে। ‘হিরোইজম’ প্রকাশ করতেও পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং গড়ে উঠছে। সম্প্রতি কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় ‘বড় ভাই’রা। ঢাকায় আন্ডারওয়ার্ল্ডের খুনাখুনিতে কিশোর ও তরুণদের ব্যবহার করার ঘটনাও ঘটেছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকায় শতাধিক কিশোর গ্যাং সক্রিয়। ঢাকার মিরপুর ও উত্তরা এলাকায় সবচেয়ে বেশি কিশোর গ্যাং সক্রিয়। এ দুই এলাকায় প্রায় অর্ধশত কিশোর গ্যাং সক্রিয়। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা খুনাখুনি, মাদক, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।

‘কিশোর গ্যাং’ মোকাবিলার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে তিনি প্রথাগতভাবে অপরাধী মোকাবিলার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে কিশোর অপরাধীদের ক্ষেত্রে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিতে বলেছেন। আর এ কাজে তিনি অভিভাবক, শিক্ষক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কিশোর গ্যাং বা কিশোর অপরাধীদের যখন মোকাবিলা করা হয়, সে ক্ষেত্রে যেন মনে রাখা হয়, তারা ভবিষ্যতের নাগরিক। প্রথাগত অন্য অপরাধীদের সঙ্গে যেন মিলিয়ে ফেলা না হয়। তাদের জন্য বিশেষ কাউন্সেলিং, কিছু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা—এ ধরনের সুযোগ-সুবিধাগুলোও যেন রাখা হয়।

সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, মূলত দুটি কারণে কিশোররা এসব গ্যাং সংস্কৃতিতে ঢুকে পড়ছে। প্রথমত, মাদক, অস্ত্রের দাপটসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। দ্বিতীয়ত, এখনকার শিশু-কিশোররা পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথেষ্ট মনোযোগ পাচ্ছে না। ফলে কিশোরদের কেউ যখন বন্ধুদের মাধ্যমে কিশোর গ্যাংগুলোতে ঢুকছে এবং মাদক ও অস্ত্রের জোগান সহজেই পেয়ে যাচ্ছে তখন তার প্রলুব্ধ হওয়া এবং অপরাধপ্রবণ হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তাই সংকট নিরসনে বন্ধ করতে হবে সমাজে অপরাধী হওয়ার সুযোগ। পাশাপাশি পরিবারে কিশোরদের একাকী বা বিচ্ছিন্ন না রেখে যথেষ্ট সময় দিতে হবে।

আমরা মনে করি, পরিবার ও সমাজের ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের মাধ্যমে গ্যাং কালচার রোধ করা সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে প্রথমেই এগিয়ে আসতে হবে পিতামাতা তথা অভিভাবকদের। শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে কিশোর অপরাধ দমন করা যাবে না।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....

Check Also

1

একটি গাভী থেকে সফল খামারি রফিকুল-শিউলী দম্পতি

অভাবের সংসারে দেড় বছরের ব্যবধানে জন্ম নেয় ২ সন্তান। তাদের দুধের চাহিদা মেটাতে ঋণ নিয়ে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *