Razzak

ঘু‌রে আস‌তে পা‌রেন মা‌নিকগঞ্জ’র সাটু‌রিয়ার বালিয়াটী জমিদার বাড়ি

print news

সাটু‌রিয়া প্রতি‌নি‌ধি,মা‌নিকগঞ্জ : ছু‌টির দি‌নে ঘু‌রে আস‌তে পা‌রেন মা‌নিকগঞ্জ জেলার সাটু‌রিয়া উপ‌জেলার বালিয়াটী জমিদার বাড়ি।মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটী ইউনিয়নে বালিয়াটী জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। মানিকগঞ্জ জেলার মধ্যে যতগুলো ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে তার মধ্যে বালিয়াটী জমিদার বাড়িটি অন্যতম।প্রাসাদটি মানিকগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার উত্ত‌রে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।বালিয়াটী প্রাসাদটি বালিয়াটী জমিদার বাড়ি নামেই বেশী পরিচিত।বালিয়াটীর জমিদাররা উনিশ শতকের প্রথমার্ধ থেকে শুরু করে বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত প্রায় একশত” বছরের প্রাচীনতম পূরাকীর্তির নিদর্শন রেখে গেছে যা জেলার পূরাকীতিকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছে।পূরার্কীর্তির ইতিহাসে বালিয়াটী জমিদার বাড়িটি এক অনন্য সৃষ্টি।জানা যায়,খ্রিস্টীয় উনিশ শতকের দিকে এই জমিদার বাড়ি নির্মিত হয়।বালিয়াটী জমিদার বাড়ির পূর্বপুরুষ গোবিন্দ রায় সাহা ছিলেন একজন ধনাধ্য লবণ ব্যবসায়ী।এই বাড়ির উওর-পশ্চিম পাশে লবনের একটা বড় গোলাবাড়ি ছিল।এ জন্যই এই বাড়ির নাম রাখা হয়েছিল গোলাবাড়ি।গোবিন্দ রায় সাহার পরবর্তি বংশধরা হলেন,দাধী রাম,পণ্ডিত রাম,আনন্দ রাম,ও গোলাপ রাম।এই পরিবারের স্মরণীয় অন্যান্য ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন নিত্যানন্দ রায় চৌধুরী,বিন্দাবন চন্দ্র,জগন্নাথ রায়,কানায় লাল,কিশোরি লাল,ঈশ্বর চন্দ্র রায় চৌধুরী প্রমুখ। ঢাকার জগন্নাথ মহাবিদ্যালয় (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাদেরই বংশধর বাবু কিশোরিলাল রায়। আনুমানিক ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে বালিয়াটী জমিদার বাড়িটির গোড়াপওন হয়।বালিয়াটি জমিদার বাড়ি নামে পরিচিত এই প্রাসাদ চত্বরটি প্রায় ১৬,৫৫৪ বর্গমিটার জমির উপর ছড়িয়ে থাকা ৭টি দক্ষিণমুখী দালানের সমাবেশ। এই দালানগুলো খ্রিষ্টীয় মধ্য ঊনবিংশ শতক থেকে বিংশ শতকের প্রথমভাগের বিভিন্ন সময়ে জমিদার পরিবারের কয়েকজন সদস্যের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। সামনের চারটি প্রসাদ ব্যবহৃত হত ব্যবসায়িক কাজে। এই প্রসাদের পেছনের প্রাসাদকে বলা হয় অন্দর মহল যেখানে বসবাস করত তারা।বালিয়াটী জমিদার বাড়িতে সাতটি প্রাসাদতুল্য ইমারতে মোট ২০০টি কক্ষ রয়েছে।বালিয়াটী জমিদার বাড়িতে মোট চার‌টি প্রবেশ পথ র‌য়ে‌ছে।প্রতিটি প্রবেশ পথের চূড়ায় রয়েছে একটি ক‌রে সিংহ মূর্তি।যাকে বলা হয় সিংহদ্বার। প্রবেশ করতেই ভিতরে নানা রকমের ফুলরাজী সমৃদ্ধ প্রাচীন সুন্দয্য যেন দৃষ্টি নন্দিত।স্থানীয়দের মতে বালিয়াটী জমিদার বাড়ির মূল প্রবেশদ্বার কাঠের তৈরী ছিল।বালিয়াটী জমিদার বাড়িতে পূর্ব বাড়ী,পশ্চিম বাড়ী,উওর বাড়ি,মধ্য বাড়ি এবং গোলা বাড়ি নামে ৫টি বড় ভবন রয়েছে।জমিদার বাড়ির এই বিভিন্ন অংশ জমিদারদের উওরাধিকাররা তৈরী করেন। জমিদার বাড়ির প্রথম সাড়িতে চারটা ভবন রয়েছে।এগুলো নির্মাণশৈলী প্রায় একই রকম।চারটা জমিদার বাড়িই প্রায় ৫০ফিট উঁচু একটা প্রাসাদ র‌য়ে‌ছে।প্রাসাদ গু‌লো এতই কারুকার্যে ভরা যে,দর্শণার্থিরা প্রতি মুহূতেই বিস্মিত হয়। আট ইঞ্চি করে সিঁড়ির উত্থান আর বিশাল স্তম্ভ চুন,সুরকি ও ইট দিয়ে তৈরি।

প্রতিটা স্তম্ভ ছয় ফিটের অধিক যা গ্রিক স্থাপত্যের মতোই কারুকার্য মন্দিত। মাঝখানের দুটি প্রাসাদ দুই তলা এবং দুই পাশ্বের দুইটা প্রসাদ তিন তলা।আগে এর একটি প্রাসাদে কলেজ ছিল,কিন্তু বর্তমানে সেটি পরিত্যক্ত ভবন বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে আর কলেজটি অন্যএ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।২ নম্বর প্রাসাদের ভবনটির ভেতরে জাদুঘরের অবস্থান।দ্বিতীয় তলায় একটি রংমহল ও রয়েছে।এখানে জমিদারদের ব্যবহারিত নিদর্শনাদি দর্শনার্থিদের জন্য রাখা হয়েছে।নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে জমিদারদের ব্যবহারিত অসংখ্য সিন্দুক,আয়না,ঝাড়বাতি, লণ্ঠন,বল্লম,শ্বেত পাথরের তৈরি টেবিল,পালঙ্ক,আলনা,কাঠ ও বেতের চেয়ার সহ আরো অনেক মূল্যবান নিদর্শন।মজলিস কক্ষে মূল্যবান ঝাড়বাতি রয়েছে।মজলিস কক্ষের দেওয়ালে হাতে আঁকা ছবি রয়েছে।এর অন্দর মহলে রয়েছে তিনটি অট্রালিকা।এখানে ছিল অথিতিদের থাকার জায়গা,রন্ধনশালা,পরিচারকদের থাকার জায়গা।৩ নাম্বার প্রাসাদের দরজা বন্ধ।সামনের দিকে হাটলেই চোখে পরবে জমিদার বাড়ির পুকুর। ৬টা সিঁড়িঁ পুকুরে নেমে গেছে। শান বাধানো ছয়টি ঘাট রয়েছে পুকুরের চার পাশে,যা দেখতে সত্যিই মনোমুগ্ধকর ।

বালিয়াটীতে ১৯২৩ সালের দিকে জমিদার কিশোরি রায় চৌধুরী নিজ ব্যয়ে একটি এলোপ্যাথিক দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করে। যা বর্তমানে সরকারিভাবে পরিচালিত হচ্ছে। জমিদার হীরালাল রায় চৌধুরী সাটুরিয়া থেকে বালিয়াটীর প্রবেশ পথের পাশে উওর কাউন্নরা গ্রামে দীঘির মাঝখানে একটি প্রমোদ বাগানবাড়ি নির্মান করেন,সেই বাগান বাড়িতে সুন্দরী নর্তকী বা প্রমোদ বালাদের নাচগান ও মদ্যপান চলত।বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর প্রাসাদটির রক্ষণাবেক্ষণ করছে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূএে জানা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে দর্শনাথীদের সুবিধার জন্য পায়ে হাঁটার পথ ও টয়লেট নির্মন করে।তার পরে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে আরো সংস্কারের কাজ হয়।এর মধ্যে ২৫ লাখ টাকা ব্যয় হয় পুকুর পাড় বাঁধাই ও সৌন্দর্যবর্ধনে। বাকি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় হয় ভবন সংস্কারে।২০১৭ সালে আবারো ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় করে বাড়িটির সংস্কারের কাজ করা হয়। বালিয়াটী জমিদার বাড়িতে দেশি দর্শনার্থীরা ২০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ঢুকতে পারবে।

এছাড়া সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থীরা ১০০ টাকা এবং বিদেশি দর্শনার্থীরা ২০০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ঢুকতে পারবে। বালিয়াটী প্রাসাদটি রবিবার পূর্ণদিবস ও সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....

Check Also

hh

অনন্য রূপ সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন গ্রাম

মোঃ আল আমিন : প্রতিদিনের কর্মব্যস্তময় জীবন থেকে ছুটি নিয়ে আমরা বাই ঘুরতে যেতে পছন্দ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *