বরিশাল বেতার চলছে কপি কাট পেস্ট দিয়ে : মানহীন অনুষ্ঠান প্রচার

print news

মামুনুর রশীদ নোমানী, বরিশাল : অনিয়ম- দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে চলছে দক্ষিনাঞ্চলের কোটি মানুষের একমাত্র বরিশাল বেতার কেন্দ্রটি।ফলে উপকারভোগীরা বেতারের সুফল থেকে হচ্ছেন বঞ্চিত।এখানের শীর্ষ কর্মকর্তারা আখের গোছাতে ব্যস্ত।সরকার যে উদ্দ্যেশ্যে বরিশাল বেতার কেন্দ্রটি স্থাপন করেছিল তা পদে পদে ব্যাহত হচ্ছে।

৮ এপ্রিল’২৪ তারিখ সকাল ৮ টা ৪০ মিনিটে ঘোষক পাঠ করলেন এখন প্রচারিত হবে “পরিবেশ ভাবনা” পরিচালনায় কে এম মনিরুল আলম।অথচ অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হলো জাহিদ হোসেনের পরিচালনায়। এভাবেই ভুল চার্ট আর ভুল টেপ ও সিডির কারনে ঘোষিত অনুষ্ঠানের বিপরীতে প্রচারিত হয় অন্য অনুষ্ঠান।উল্লেখিত একটি ঘটনা নয় এভাবে অসংখ্য অনুষ্ঠান ভুলভাবে প্রচারিত হচ্ছে। যেন কেউ দেখার নেই।সবাই উদাসীন।

সূত্র জানায়, টেপ চার্টে ভুল থাকায় জাহিদ হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্টান প্রচারিত হয়েছে ৮ এপ্রিল ২৪ তারিখ সকালে এমনটা নয়। এমন ভুল হচ্ছে প্রতিনিয়ত। লাইব্রেরীর দ্বায়িত্বে ফারুক ও নিপা দীর্ঘদিন একই স্থানে থাকার ফলে তাদের কাছে ভুল কোন ব্যাপারই না। তাদের উপর আশির্বাদ রয়েছে আঞ্চলিক পরিচালকের। বার বার ভুল প্রোগ্রাম প্রচারিত হলেও নেই কোন শাস্তির ব্যবস্থা। টেপ চার্টে গান ভুল ও শিল্পি ভুল হওয়ার ফলে ভুলই প্রচারিত হয়।কারন কপি কাট পেস্ট করার ফলে টেপ চার্ট সংশোধন না করায় ভুল প্রোগ্রাম প্রচারিত হয়। ভুল অবস্থায় অনুষ্ঠান প্রচার হওয়ার পরে ফলে ঘোষকরা বারবার দুঃখিত বলতে বলতে ক্লান্ত। লাইব্রেরীতে দুটি কম্পিউটার থাকলেও চেক না করেই সিডি সরবরাহ করা হয় স্টুডিওতে। যার কারনে ভুল প্রোগ্রাম প্রচারের ঘটনা ঘটছে বলে সুত্র জানায়।এভাবেই ভুল দিনের পর দিন চলছে। একই প্রোগ্রাম বারবার একাধিক অধিবেশন ও প্রতিদিন প্রচার করার কারনে বরিশাল বেতার হারিয়েছে তার ঐতিহ্য ও সুনাম। শ্রোতারা ফিরিয়ে নিয়েছে মুখ। বরিশাল বেতারের অফিসিয়াল ঘোষনা আছে এক শিল্পীর গান দিনে একবার বা অধিবেশনে একবার যাবে অথচ টেপ লাইব্রেরীয়ানের খামখেয়ালিতে একই শিল্পীর গান তিনবার, চারবারও প্রচার হয়। আঞ্চলিক পরিচালকের নির্দিষ্ট কিছু শিল্পি আছে তাদের গান প্রতিনিয়ত প্রচারিত হয়।অথচ বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পীদের গান প্রচারে অনিহা সংশিষ্টদের। তারা থাকে অবহেলিত । অনুষ্ঠানের সময়সূচীর জায়গা পুরন করা হয় অর্থ কামানোর জন্য ।ফলে কপি কাট পেস্ট করা হয় নির্দষ্ট ঐসব শিল্পীদের গান দিয়ে।

মুখচেনা লোকদের বারবার প্রোগ্রাম দেয়ার অভিযোগ :

সম্পর্ক আর অর্থের জন্য একই লোকদের বার বার প্রোগ্রাম দেয়া হয়।তাদের উদ্দ্যেশ্য প্রতিমাসে দশ হাজার টাকা সম্মানী নিতে হবে। ফলে এসব কারনে মানহীন অনুষ্ঠান প্রচার হচ্ছে বরিশাল বেতারে। এখানে অনুষ্ঠানের মান বিবেচনা করা হয়না। মুখ দেখে দেয়া হয় প্রোগ্রাম এমনি দুজনের নাম প্রচারিত হচ্ছে বেতার জুড়ে। তারা হলেন বরিশালের জাহিদ হোসেন ও ঝালকাঠির শামিম আহসান।
এবাবে অসংখ্য লোকজন আছে তাদের মত।

আরও পড়ুন :

অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর বরিশাল বেতার : চলছে জোড়াতালি দিয়ে

 

বেতারে সাপ আতংক:

এদিকে বেতারে কর্মরতরা প্রবেশ করে সাপ আতংক নিয়ে।বেতারের অভ্যান্তরে সাপের যেন খামার। সাপ নিধন বা নিয়ন্ত্রনে নেয়নি কোন ব্যবস্থা বেতার কর্তৃপক্ষ।ফলে কর্মরতরা সাপ আতংকে থাকেন বেতারে কর্মরত থাকাকালীন অবস্থায়।

নেই স্টুডিউতে ভালো মানের টেবিল ও চেয়ার ।পুরনো ও ঘুনেধরা টেবিল চেয়ারই ভরষা স্টুডিওতে কর্মরতদের। টেবিলের কোনায় পুরনো স্টিল দিয়ে জোড়াতালি দেয়ার কারনে প্রতিদিন কাপড় ছিড়ে যাচ্ছে । ফলে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন অনেকেই। দামী কাপড় ছিড়ে যাওয়ার কারনে অনেকেই মন খারাপ নিয়ে বের হচ্ছেন বেতার ভবন থেকে। এ ছাড়া স্টুডিওর ভিতরে পরিবর্তন করা হয়নি কার্পেট। পুরনো কার্পেট দিয়েই চালানো হচ্ছে।পরিস্কার করা হয়না দীর্ঘদিন। গন্ধে বিটঘুটে এক পরিবেশ বিরাজ করছে স্টুডিওর মধ্যে।

পানিতে কষ্ট:

সকালে পানি না থাকার অভিযোগ নিত্য দিনের । পানির কথা বলা হলে বলা হয় সকাল ৯টার আগে পানি দেয়া যাবেনা।এছাড়া বাথরুম পরিস্কার করা হয়না । নেই হারপিকও। মুল সড়ক থেকে বেতার ভবন পর্যন্ত সড়ক নির্মান করা হয়নি প্রতিষ্ঠার এত বছরেও।বেতারে এমন হাজারো সমস্যা থাকলেও সমাধানের নেই কোন ব্যবস্থা। শীর্ষ কর্তাদের ভাবটাই আলাদা।তারা মনে করেন এটি তাদের বাপ দাদার সম্পদ এমনটাই জানিয়েছেন বেতারে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। স্টুডিওর ভিতরে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের ফলে নারী কর্মরতরা বিব্রত বলে একটি সুত্র জানায়। বেতারের গুরুত্বপুর্ন একটি স্থান হলো ডিউটি রুম।এখানে বসানো হয় অনভিজ্ঞদের ফলে ঘটছে নানান অঘটন। আমন্ত্রিতদের দশ হাজার টাকার বেশী সম্মানী হলে কোন প্রশ্ন ওঠেনা।অথচ ঘোষক ঘোষিকারা কত সম্মানী নিল সে হিসেব করা হয় বারবার। এছাড়া উৎস কর কর্তন করা হয় সকলের থেকে অথচ এসব ক্ষেত্রে মানা হয়না কোন গেজেট।এদিকে শিল্পী সম্মানী বাড়ানোর জন্য নেই বেতার কর্তৃপক্ষের কোন আগ্রহ।

টাকার বিনিয়মে শিল্পী ও গীতিকার নিয়োগ:

আঞ্চলিক পরিচালক কিশোর রঞ্জন মল্লিকের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে শিল্পী ও গীতিকার নিয়োগের অভিযোগ রয়েছে। শিল্পী দশহাজার এবং গীতিকার দশ থেকে বারো হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে নিয়োগ দিয়েছেন বলে একটি বিশ্বস্ত সুত্র জানায়। এছাড়া অনেকের টাকা ফেরৎ দিয়েছে।তাদের এনলিস্ট করেনি।ব্রাম্মনবাড়িয়ায় বাড়ি এক শিল্পীর। সে দশহাজার টাকায় শিল্পী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।তিনি বরিশালে ঔষধ কোম্পানীতে কর্মরত। এভাবে অসংখ্যদের তালিকাভুক্ত করেছেন।আঞ্চলিক পরিচালকের রয়েছে একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বরিশাল বেতারে অনিয়ম,দুর্নীতি করে যাচ্ছেন তিনি।

কে এই কিশোর রঞ্জন মল্লিক :

১৯৯৯ সালে বরিশাল বেতারে সহকারী পরিচালক পদে যোগ দেন কিশোররঞ্জন মল্লিক। ৫ বছর পর তাকে বদলি করা হয় রংপুর বেতারে। সেখান থেকে উপ-পরিচালক হিসেবে ২০০৭ সালে ফেরেন বরিশাল বেতারে। এখানেই আঞ্চলিক পরিচালকের দায়িত্ব। আর এরপর থেকেই হয়ে উঠেন বেপরোয়া। বেতারের সবকিছু জিম্মি হয়ে পড়ে তার কাছে। বার্তা ও অনুষ্ঠান বিভাগের সবাই হয়ে যান অসহায়। সেই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে উঠতে থাকে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ। যার সঙ্গে যুক্ত লাখ লাখ টাকার হাতবদল।বেতারের প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কিশোর রঞ্জন মল্লিকের এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে গেলেই হয়রানি হেনস্থা করেন তিনি। বাড়ি গোপালগঞ্জ হওয়ায় সর্বপ্রথম ভয় দেখান প্রধানমন্ত্রীর দেশের লোক হিসেবে, প্রোগ্রাম বন্ধ করে দেয়ার হুমকি সহ মামলার ভয় দেখান। একই সঙ্গে চলে মহাপরিচালকের নাম ভাঙিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দূরবর্তী স্টেশনে বদলি ও অস্থায়ী কর্মচারীদের চুক্তি বাতিলের ভয় দেখানো।

এ ব্যাপারে আঞ্চলিক পরিচালক কিশোর রঞ্জন মল্লিকের মোবাইলে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

উল্লেখ্য,দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে ১৯৯৯ সালের ১২ জুন বরিশাল বেতার কেন্দ্রটি একটি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।যে উদ্দ্যেশে বেতার কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছিল সে উদ্দ্যেশ্য আজ বিফলে।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Banner