ভ্রমণ

চরফ্যাশনের নদী, নৌকা, মাছ ও জীবন

dsc 0451
print news

ঢেউয়ের উত্থান-পতন, পাড়ের ভাঙা-গড়া নিয়ে নদী নিজেই এক অনন্য জীবন। এই চঞ্চল নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে মানুষের কত বিচিত্র জীবন, জীবিকা ও সংস্কৃতি। আমাদের দেশেই যেমন উত্তর-দক্ষিণ ভেদে নদীকেন্দ্রিক জীবনের কত ফারাক, কত বৈচিত্র্য।

ঘুরে আসলাম দ্বীপ জেলা ভোলার চরফ্যাশন, মনপুরা ও নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপ ও হাতিয়া।  আজ প্রথম পর্বে থাকছে চরফ্যাশন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।

চরফ্যাশনে ভ্রমণ। ছবি : রোকনুজ্জামান রোকন

ঢাকা থেকে লঞ্চে রাতে মনোরম যাত্রাশেষে ভোরের  আলো ফোটার সাথে সাথে পৌঁছে যাই আমাদের প্রথম গন্তব্য চরফ্যাশনে। শহরে পৌঁছেই চোখে পড়ল সুউচ্চ, সুরম্য জ্যাকব টাওয়ার। রাত হলেই আলোর ঝলকানিতে এটি হয়ে ওঠে মনোমুগ্ধকর, এটিকে ঘিরে গড়ে ওঠে আড্ডা, কোলাহল। নিজের উচ্চতার সাথে জ্যাকব টাওয়ার যেন চরফ্যাশনকেও পৌঁছে দিয়েছে অনন্য উচ্চতায়।

মেঘনা এখানে মিলে একাকার হয়ে গেছে বঙ্গোপসাগরের সাথে। আর মেঘনার তরঙ্গের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে এখানকার মানুষের জীবনের তরঙ্গ। এখানে নদীই জীবন, জীবনই নদী। নদীকে এখানকার জীবন থেকে আলাদা করে দেখার কোনো উপায়ই নেই। দেখতেও চাই না।

চরফ্যাশনে ভ্রমণ। ছবি : রোকনুজ্জামান রোকন

এখানকার মানুষের জীবনের সাথে নদীর ঘনিষ্ঠতা বুঝতে গেলে যেতে হবে ফিস ল্যান্ডিং স্পটগুলোতে। সামরাজ ঘাট, মাদ্রাজ ঘাট, কচ্ছপিয়া ঘাট, বকসি ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাট বেড়ানো হলো, এর সাথে জড়ানো মানুষদের সাথে কথা হলো। এগুলোর মধ্যে সামরাজ ঘাটই সবচেয়ে বড়।

ঘাটগুলোতে পা ফেললে তিনটি জিনিসই চোখে পড়বে বেশি; মানুষ, হরেক রকমের চেনা-অচেনা মাছ এবং ছোট বড় শত শত নৌকা। সামরাজ ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক আলাউদ্দীন ভাইয়ের কাছ থেকে জানা গেল, এই ঘাটে আড়তদার আছে প্রায় শখানেক, মাছ ধরার নৌকা প্রায় দুই হাজার। একেকটি নৌকায় কাজ করে গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন করে জেলে। মাছ ব্যবসা, পরিবহন, এর সাথে সংশ্লিষ্ট অন্য কাজ, যেমন বরফকল ইত্যাদির সাথে কাজ করে হাজার হাজার মানুষ।

চরফ্যাশনে ভ্রমণ। ছবি : রোকনুজ্জামান রোকন

এ তো গেল কেবল এক ঘাটের কথা, অন্যগুলোতেও কম বেশি অনেক। এককথায় একটি নদী, হাজার হাজার নৌকা এবং লাখ লাখ মানুষের জীবন এখানে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন: ঘুরে আসুন ‘বাংলার কাশ্মীর ও দার্জিলিংয়ে’

যত দূর চোখ যায়, কেবল পানি, রোদের আলোয় চমকে ওঠা ঢেউ, ঘাটে ভেড়ানো রঙিন পতাকা ওড়ানো শত শত নৌকা, বিস্ময়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় যেন নেই।

চরফ্যাশনে ভ্রমণ। ছবি : রোকনুজ্জামান রোকন

ঘাটে মাছভর্তি নৌকা ভিড়ছে, নিলামে মাছ বিক্রি হচ্ছে, শোরগোল এবং ব্যস্ততা জমে উঠেছে। কোনো নৌকা আবার কয়েক দিনের জন্য ছেড়ে যাচ্ছে নদীতে, নদী থেকে সাগরে। পাড়গুলোতে বসে জেলেরা জাল মেরামত করছে নিষ্ঠার সাথে। আসলে সবাই নিষ্ঠার সাথেই কাজ করছে। তা না হলে এই প্রবল তরঙ্গের সাথে উঠবে না জীবনের তরঙ্গ। সালাম এখানকার মানুষদের এই সংগ্রামকে, অনন্ত ভালোবাসা মানুষের জীবন হয়ে ওঠা মাইটি মেঘনাকে। নদীকে ভালোবাসুন, নদী আপনাকে ভালোবাসবে। প্রকৃতিকে ভালো রাখুন, প্রকৃতি আপনাকে ভালো রাখবে।

চরফ্যাশনে ভ্রমণ। ছবি : রোকনুজ্জামান রোকন

যেভাবে যাবেন

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন দক্ষিণের গন্তব্যে ছেড়ে যায় অনেক লঞ্চ। আমরা রাত ৮টায় ছেড়ে যাওয়া এমভি ফারহান ৫-এ চড়ে ভোরে পৌঁছে গিয়েছি চরফ্যাশনের বেতুয়া ঘাটে। সেখান থেকে গাড়িতে কয়েক মিনিটের ড্রাইভে হোটেলে। সিঙ্গেল এসি কেবিন , ফ্যামিলি কেবিন । তা ছাড়া যাওয়া যাবে প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণির ডেকে। রয়েছে ফোন করে কেবিন বুকিং দেওয়ার ব্যবস্থাও। দ্বীপের একস্থান থেকে আরেক স্থানে যাতায়াত করেছি ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে।

চরফ্যাশনে ভ্রমণ। ছবি : রোকনুজ্জামান রোকন

রাত্রিযাপন

চরফ্যাশনে থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল রয়েছে, আমরা ছিলাম হোটেল গ্রিন প্যালেসে। অফ সিজনে গেলে এমনিতেই পেয়ে যাবেন।

আরও পড়ুন: ভাসমান পেয়ারা বাজার

খাওয়াদাওয়া

মাছের দেশে গিয়ে হরেক রকমের মাছের স্বাদ নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ইলিশ, পোয়া, বাটা, চিংড়ি, চেউয়া, নদীর পাঙাশসহ বিভিন্ন রকমের মাছের স্বাদ নিয়েছি, খেয়েছি ভোলার বিখ্যাত মহিষের দুধের দই। আপনারাও অবশ্যই খেতে ভুলবেন না। তবে পরামর্শ থাকবে মাছ ঘাটের হোটেলগুলোয় না খাওয়ার, বেশির ভাগই স্বাস্থ্যকর নয়। পছন্দমতো মাছ কিনে হোটেলে দিলে রান্না করে দেবে ওরাই।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *