images 10

মেহেদী পাতার ঔষধি গুণ!

print news

আদি যুগ থেকে মেহেদির সঙ্গে পরিচয় মানুষের। ছেলে ও মেয়ে উভয়ই মেহেদির রং-এ নমস্কার নিজেদের রাঙাতে ভালবাসে। আর যদি মেহেদি হয় উপাদেয় পানীয়। তাহলে তো কথাই নেই, সেই পানীয়ে চুমুক দেয়া যেতেই পারে।

বরিশালের অনেক এলাকায়ই এই মেহেদিকে তারা চায়ের বিকল্প হিসেবে নিয়েছেন। নাম দিয়েছেন জোশন্দা। জোসন্দায়ে আযীযি। সাথে আযীযি হওয়ার কারণ ও রয়েছে। ঝালকাঠীর আধ্যাত্নিক সাধক দার্শনিক আল্লামা আযীযুর রহমান নেছারাবাদী রহ. প্রথম এই পানীয়ের সূচনা করেন। যিনি ‘কায়েদ সাহেব হুজুর’ নামে অধিক পরিচিত।

বলা হয়ে থাকে, মেহেদি চা বা জোশন্দা নানা রোগের অব্যর্থ ওষুধ ও।
তারা মেহেদি পাতাকে প্রথমে শুকিয়ে সংরক্ষণ করেন। পরে গুড়া করে সেই পাতাকে চা-পাতার মতোই তাপে সিদ্ধ করেন। এরপর পরিমাণমত চিনি বা গুড় মিশিয়ে পান করেন। তবে অধিকাংশ সময়ে তারা মেহেদি-চা বা জোশন্দা গুড় দিয়েই পান করেন।
এবার আপনি বানিয়ে নিতে পারেন জোসন্দা বা মেহেদি-চা।

আবার মেহেদি পাতা মানব জীবনে অনেক রোগের অনুষজ্ঞও। এই পাতার যে নানাবিধ ঔষধি গুণ যে আছে তা আমাদের অনেকেরই হয়তো অজানা।

✔️এবার জেনে নিন মেহেদি পাতার ঔষধি গুণঃ

▪️জন্ডিসের সমাধানেঃ
জন্ডিস হলে মেহেদিগাছের মূল আতপ চাল ধোয়া পানি দিয়ে ঘষে ২ চা চামচ ৮ থেকে ১০ দিন সকালে ও বিকালে খেলে ৪ থেকে ৫ দিনেই রোগী আরোগ্য লাভ করে। ওষুধ খাওয়ার সময় ডাবের পানি ও আখের রস খেলে আরও ভালো কাজ করে।

▪️পায়ের জ্বালাপোড়ায়ঃ
মেহেদি পাতা ভিনেগারে ভিজিয়ে এক জোড়া মোজার ভেতরে রেখে দিন। এবার এই মোজাটি পায়ে সারা রাত পরে থাকুন। এটি পায়ের জ্বালাপোড়া কমিয়ে দিবে অনেকখানি।

▪️টাক পড়া কমায়ঃ
কয়েকটি মেহেদি পাতা সরিষার তেলের সঙ্গে দিয়ে জ্বাল দিন। এটি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে মাথার তালুতে ব্যবহার করুন। এটি টাক পড়া প্রতিরোধ করবে।
ইউনানী চিকিৎসকদের মতে, চুল উঠে যাওয়া বা পাকায় ১টি হরিতকি ও ১০/১২ গ্রাম মেহেদী পাতা একটু থেতো করে ২৫০ মলি গ্রাম পানিতে সেদ্ধ করে ৬০-৭০ মিলি থাকতে নামিয়ে ছেকে ঠান্ডা হলে মাথায় লাগালে উপকার পাওয়া যায়।

▪️মাথাব্যথা নিরাময়েঃ
মেহেদি গাছের ফুল মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। এই ফুল পেস্ট করে এর সঙ্গে ভিনেগার মিশিয়ে নিন। এটি কপালে অথবা ব্যথার স্থানে লাগিয়ে রাখুন। এছাড়া আপনি মেহেদির পেস্টও ব্যবহার করতে পারেন।

▪️চুলকানি বা ঘা শুকাতে সাহায্য করেঃ
মেহেদির পেস্ট পিঠ, ঘাড় এবং ঘামাচি আক্রান্ত অন্যান্য স্থানে লাগান। এটি ঘামাচির চুলকানি এবং জ্বালাপোড়া হ্রাস করতে সাহায্য করে। এই মেহেদি দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন মাউথ ওয়াশ। মেহেদি পাতা গুঁড়ো পানিতে গুলিয়ে নিন। এবার এটি দিয়ে কুলকুচি করুন। এটি মুখের ঘা দ্রুত ভাল করে থাকে এবং মুখ জীবাণুমুক্ত করে তোলে।

▪️খুশকি দূর করেঃ
খুশকি দূর করতে মেহেদি বেশ কার্যকরী। সরিষা তেল, মেথি, মেহেদি পাতা সেদ্ধ একসঙ্গে যোগ করে এটি চুলে ব্যবহার করুন। এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ফেলুন। এটি খুশকি দূর করে চুলকে করবে ঝলমলে সুন্দর।

▪️ক্ষত সারায়ঃ
পুরনো ক্ষত, যেগুলো বার বার ফিরে আসে, এসব ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে মেহেদি। মেহেদিপাতা বেটে এরকম ক্ষতে লাগিয়ে রাখুন।

▪️পানি পচা রোগেঃ
সাধারণত নোংরা, জীবাণুযুক্ত পানি লেগে এই রোগ হয়। আবার দীর্ঘক্ষণ পানিতে কাজ করলেও এ রোগ হতে পারে। এতে দুই আঙ্গুলের মাঝের অংশে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এই ক্ষতে মেহেদির প্রলেপ লাগিয়ে রাখলে ঘা ভালো হয়ে যায়।

▪️বয়সের ছাপ দূর করেঃ
বয়সের ছাপ(বলিরেখা) দূর করতেও মেহেদির তুলনা নেই। ভাবছেন ত্বক লাল হয়ে যাবে কি না? মুখের ত্বকে মেহেদি ব্যবহারের নিময়টি পুরো আলাদা। আপনার প্রতিদিনের ফেসপ্যাকে মিশিয়ে নিন কয়েক ফোটা মেহেদি পাতার রস। আর ফেসপ্যাক ১০ মিনিটের বেশি রাখবেন না। নিয়মিত ব্যবহারে বলিরেখা হবে বিলম্বিত।

▪️পা ফাটাঃ
শীতকালে তো পা হরদম ফাটে। তবে কারো কারো বার মাসই পা ফাটার সমস্যা থাকে। এ ছাড়া চামড়া ওঠার সমস্যাও থাকে অনেকের। মেহেদি পাতা বেটে ফাটা জায়গায় পুরু প্রলেপ দিয়ে রাখুন। আধা ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে পা ফাটা প্রতিরোধ হবে।

▪️ঘুমের সমস্যা দূর করেঃ
যে কোন ধরনের ঘুমের সমস্যা যেমন- ইনসোমনিয়া দূর করতে এই পাতা যথেষ্ট উপকারী। প্রতিদিন নিয়ম করে মেহেদি পাতার রস খেলে ঘুমের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

▪️নখের যত্নেঃ
নখ মজবুত ও আকর্ষণীয় করতে মেহেদির জুড়ি নেই। পানিতে কয়েকটি মেহেদি পাতা ভিজিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। পানি হালকা লাল হয়ে আসলে ওই পানি খেয়ে নিতে পারেন।

▪️রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখেঃ
মেহেদি পাতা হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। মেহেদির রস বা বীজ নিয়মিত খেলে কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম ও রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। এটি ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে হার্ট অ্যাটাক ও স্টোকের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

▪️শ্বেতপ্রদর নিরাময়েঃ
শ্বেতপ্রদরে ২৫ গ্রাম মেহেদি পাতা সেদ্ধ করে সেই পানিতে উত্তরস্তি ( ডুশ দেওয়া) দিলে সাদাস্রাব ও অভ্যন্তরের ‍চুলকানি প্রশমিত হয়। স্থানভ্রস্ট জরায়ুর ক্ষেত্রেও উপযুক্ত পদ্ধতি প্রয়োগ করলে অসুবিধা কমে যায়।

▪️শুক্রমেহ হ্রাসেঃ
শুক্রমেহ রোগে মেহেদি পাতার রস এক চা চামচ দিনে দুবার পানিতে বা দুধের সাথে একটু চিনি মিশিয়ে খেলে এক সপ্তাহের মধ্যে উপকার পাওয়া যায়।

▪️চোখ ওঠা রোগ নিরাময়েঃ
চোখ ওঠায় অল্প কয়েকটা পাতা থেঁতো করে গরম পানিতে ফেলে ছেকে সেই পানির ফোটা চেখে দিলে সেরে যায়। এমনকি চোখেন কোন থেকে পুজের মতো পড়তে থাকলেও এটি ব্যবহার করলেও সেরে যায়।

▪️হিমোগ্লোবিন পরীক্ষায়ঃ
প্রাচীনপন্থী বৈদ্য সম্প্রদায়ের মতে শরীরে হিমোগ্লোবিন সঠিক পরিমানে আছে কি না জানার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। মেহেদী পাতা বাটা হাতের তালুতে লাগালে রংটা লালচে আভা দিলে ভাল, না হলে হিমোগ্লেবিন কম আছে বলে ধারণা করা হয়।

▪️অনিদ্রা দূরকরণেঃ
আগের দিনে নবাব-বাদশাহদের অনিদ্রা রোগ হলে মেহেদি ফুলের বালিশে ঘুমানোর পরামর্শ দেয়া হত। এতে আছে লাইলাকের গন্ধ। গন্ধটি পার্থিব সস্তায় সমৃদ্ধ।

অধিকাংশ মেহেদি পাতা শরীরের জন্য উপকারী তবে কালো মেহেদি ত্বকের র‌্যাশ, অ্যালার্জি ও আরও বেশ কিছু সমস্যার উদ্রেক করে থাকে। তাই মেহেদি পাতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

মোঃ বদরুল আলম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন....

Check Also

jhalokathi01 20240129163550

উদ্বোধন হলেও চালু হয়নি ২৫০ শয্যার ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল

ঝালকাঠি প্রতিনিধি : তিন মাস আগে জমকালো আয়োজনে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল চত্বরে ৭০ কোটি টাকা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *