vola 1

প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত ভোলার প্রসূতিরা, ৫ বছরে সাড়ে ৬ হাজার ডেলিভারী

print news

সাব্বির আলম বাবু :
চিকিৎসার প্রয়োজনীয় উপকরণ, যন্ত্রপাতি, চিকিৎসক আর অনুন্নত সেবা ব্যবস্থার কারণে প্রসূতি মায়েদের প্রয়োজনীয় সেবা মিলছে না ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে মায়েদের জীবন।মাঝে মধ্যেই ঘটছে প্রাণ হানির ঘটনা। এমন বাস্তবতায় বাধ্য হয়ে বরিশাল ও ঢাকা গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। যার ফলে মৌলিক স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রামের গরীব অসহায়রা। প্রসূতি মা ও গরীব অসহায়দের সঠিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে সার্বক্ষণিক সেবা কার্যক্রম চালুর দাবি ভোলাবাসীর।রোগীদের অভিযোগ, সপ্তাহে ৬ দিন হাসপাতালের গাইনি বিভাগে সেবা কার্যক্রম চালু থাকলেও তা চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এরপরে বন্ধ হয়ে যায় ওটি (অপারেশন থিয়েটার)। যে কারণে বাধ্য হয়ে অন্য কর্মদিবস বা ভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকে গিয়ে তাদের সিজারিয়ান অপারেশন করতে হয়। প্রসূতি মায়েদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল-ঢাকাও নিয়ে যেতে হয় রোগীর স্বজনদের। এতে যেমন বাড়তি অর্থ গুণতে হয় দারিদ্র রোগীদের, তেমনি দেখা দেয় প্রাণহানির আশঙ্কা!জানা গেছে, দ্বীপজেলার ২০ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা ভোলা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল। এ হাসপাতালে স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম কিছুটা সন্তোষজনক হলেও প্রসূতি মায়েদের সেবা নিতে পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। একজন মাত্র অ্যানেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞের ওপর নির্ভরশীল সিজারিয়ান অপারেশন কার্যক্রম। এতে নিয়মিত সেবা পাচ্ছেন না প্রসূতি মায়েরা। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নেই আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন। সংকট রয়েছে সিজারিয়ানের জন্য উন্নতি প্রযুক্তির। এতে দারিদ্র রোগীদের বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়। এমন সংকটের কারণে ঠিকমতো সেবা দিতে পারছেন না হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের ডাক্তার-নার্সরাও।হাসপাতালটিতে ভর্তি থাকেন গড়ে ২৫-৩০ জন প্রসূতি রোগী। কিন্তু প্রসূতিদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে মাত্র একটি কক্ষ। যে কক্ষে বেডে রয়েছে ২৫টি। ফলে সেখানে গাদাগাদি করে তাদের চিকিৎসা নিতে হয়। এদিকে গত এক বছরে এ হাসপাতালে প্রসূতি মায়েদের সর্বমোট ডেলিভারি করা হয়েছে ২৫৭টি। যার মধ্যে সিজারিয়ান ডেলিভারি হয়েছে ১৩৪টি। বাকি ১২৩টি নরমাল ডেলিভারি। তবে এসব ডেলিভারি করাতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। এক বছরে মৃত সন্তান প্রসব হয়েছে ১৩৪টি।বিগত দুই মাসে হাসপাতালটিতে সর্বমোট ডেলিভারি হয়েছে ৪১৩ জনের। যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২ জন প্রসূতির।নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন রোগীর স্বজন জানান, হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা হলেও বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। মাঝে মধ্যে আবার ডাক্তার পাওয়া যায় না। নার্সদের ওপর নির্ভর করেই রাখতে হয় রোগীদের। আলীনগর থেকে আসা রোগীর স্বজন শাহিন বলেন, হাসপাতালে প্রসূতি মায়েদের সেবা নিয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। তবে এখানে সব সময় ডাক্তার পাওয়া যায় না। যদি ২৪ ঘণ্টা ওটি চালু থাকতো বা সব সময় একজন ডিউটি ডাক্তার পাওয়া যেতো, তাহলে সবার জন্য ভালো হতো।
এ বিষয়ে হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স বেবি নাজনিন বলেন, আমরা প্রয়োজনীয় সেবা দেই। কিন্তু নার্স কম থাকায় আমাদের অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনা নাইট ডিউটি নিয়ে। মাসে ১০ দিন নাইট ডিউটি করতে হয়। গাইনি ওয়ার্ড নিয়ে রোগীদের অভিযোগ নেই, আমরা প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে থাকি। এদিকে, গাইনি ওয়ার্ডটি অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন এবং মাঝে মধ্যে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে বলেও অভিযোগ করেন কয়েকজন রোগী। এ বিষয়ে নার্সিং সুপারভাইজার লাইলি খাতুন বলেন, নরমাল ডেলিভারির যে রুমটি (লেবার রুম) রয়েছে, সেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই ছোট। এতে ডেলিভারি করাতে আমাদের সমস্যা হয়। রুমটা আরেকটু বড় হলে ভালো হতো। এছাড়া গাইনি ওয়ার্ড পরিস্কার-পরিচ্ছন্নই রাখা হয়। আমরা সাধ্যমতো রোগীদের সেবা দিচ্ছি। যেসব প্রসূতির মৃত্যু হচ্ছে, তাদের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক সুরাইয়া ইয়াসমিন বলেন, রোগীদের সচেতন করা গেলে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু কমানো সম্ভব। আমরা সেই বিষয়টি রোগীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। তবে প্রসূতি মৃত্যু আগের তুলনায় এখন অনেকটাই কম। এসব বিষয়ে হাসপাতালের আরএমও ডা. তায়েবুর রহমান বলেন, গ্রামের মায়েরা অনেকটা অসচেতন। তাই, মাঝে মধ্যেই প্রসূতির মৃত্যু ঘটছে। তবে মৃত্যুর হার খুবই কম। গাইনি ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক দেওয়ার সুযোগ নেই। এখানে জনবল সংকট রয়েছে। তবে হাসপাতালে কর্মরত দুজন গাইনি চিকিৎসক প্রসূতি রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে থাকেন। হাসপাতালের চলমান এসব সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানালেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সব ধরনের রোগী যাতে পর্যাপ্ত সেবা পান, সেই বিষয়ে আমরা সচেষ্ট।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ৫ বছরে এই জেলা হাসপাতালে ৬ হাজার ৬৬৫টি নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারি হয়েছে। এর মধ্যে ৩১ জন মায়ের মৃত্যু ঘটেছে এবং ৬০৭টি নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....

Check Also

jhalokathi01 20240129163550

উদ্বোধন হলেও চালু হয়নি ২৫০ শয্যার ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল

ঝালকাঠি প্রতিনিধি : তিন মাস আগে জমকালো আয়োজনে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল চত্বরে ৭০ কোটি টাকা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *