সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে ৫ জনক আটক,স্থায়ী বহিষ্কার


ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : সমন্বয়ক পরিচয়ে রাজধানীর গুলশানে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এক এমপির বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় তাদের আটক করে গুলশান থানায় নেওয়া হয়। রাত ১০টা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে মামলা প্রক্রিয়াধীন। আটকরা হলেন—মো. সিয়াম, সাদমান সাদাব, মো. আমিনুল ইসলাম, ইব্রাহীম হোসেন ও আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আটকদের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদস্য। এছাড়া অন্যরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।
গুলশান থানার ওসি হাফিজুর রহমান আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপির শাম্মী আহমেদের কাছে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। ১০ লাখ টাকা আগে নিয়েছিলেন। শনিবার বাকি টাকা নিতে শাম্মি আহমেদের বাসায় গেলে পুলিশকে খবর দেয়। আমরা ওই বাসা থেকে পাঁচজনকে আটক করি। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
ডিএমপির গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার ওসি আলী আহমেদ মাসুদ বলেন, আটকদের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছে—‘চার থেকে পাঁচদিন আগে আওয়ামী লীগ নেত্রী সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদকে ধরতে গুলশানের বাসায় যায় তারা। তখন শাম্মীর স্বামী তাদের অফার করে বলে তোমরা আমার ছেলের মত। আমি তোমাদের কিছু এন্টারটেইনমেন্ট করি, আমার বউকে নিয়ে যেও না। ওই সময় রিয়াদকে পাঁচ লাখ টাকা দেয় শাম্মীর স্বামী।
ওসি বলেন, রিয়াদের বক্তব্য অনুযায়ী ওই পাঁচ লাখ টাকা নেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপু। এ টাকা দিয়ে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ মেটায় এবং একটি মোটরসাইকেল ক্রয় করে। বাকি টাকা নিতে শনিবার ওই বাসায় যায় তারা।
সূত্র বলছে, গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে সংরক্ষিত মহিলা- আসনের সাবেক এক এমপি শাম্মির বাসা। এর আগে ১৭ জুলাই সকালে সমন্বয়ক পরিচয়ে ওই বাসয় গিয়ে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে রিয়াদ। টাকা না দিলে ফ্যাসিস্টের দোসর বলে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখায়। তখন তারা ১০ লাখ টাকা চাঁদা নিয়ে আসে। পরে ফের শনিবার চাঁদার জন্য গেলে পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
এদিকে চাঁদার টাকা নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, ১৭ জুলাই সকাল ১০টার দিকে একটি বাসার গেস্ট রুম থেকে টাকা বুঝে নিচ্ছে দুই যুবক। গুলশান থানা পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, ভিডিওটি গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডের শাম্মির বাসার।
আটক পাঁচ নেতাকে স্থায়ী বহিষ্কার
চাঁদাবাজির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতা ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) দুই নেতাকে নিজ নিজ সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। সাংগঠনিক নীতিমালা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে দুই সংগঠন পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।শনিবার দিবাগত রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সম্পাদক শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাংগঠনিক নীতিমালা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম ও সাদাবকে সংগঠনের সব ধরনের সাংগঠনিক পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, সংগঠনের সভাপতি রিফাত রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন। সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বহিষ্কৃতদের সঙ্গে কোনো প্রকার সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশ দেয়া হলো।
অন্যদিকে, বাগছাস দপ্তর সম্পাদক মাহফুজুর রহমান প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজির ঘটনায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপু ও আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমানের (রিয়াদ) সরাসরি সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। গঠনতন্ত্রের ধারা ৩.১ অনুযায়ী সংগঠনের ভাবমূর্তি ও শৃঙ্খলার পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে কেন্দ্রীয় সংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার ও সদস্য সচিব জাহিদ আহসানের নির্দেশনায় তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো।
এর আগে, শনিবার সন্ধ্যার পর রাজধানীর গুলশানের ৮৩ নম্বর রোড থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বাগছাসের পাঁচ নেতাকর্মীকে চাঁদাবাজির অভিযোগে হাতেনাতে আটক করে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন—ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, মো. সাকাদাউন সিয়াম, সাদাব, জানে আলম অপু ও আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান (রিয়াদ)।