চাঁদাবাজির নায়ক : ‘সমন্বয়ক’ অপুর গোপন জীবন


শীর্ষনিউজ: কখনো নিজেকে পরিচয় দিতেন ছাত্রনেতা, আবার কখনো ক্ষমতাবান রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ক হিসেবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারদলীয় উপদেষ্টা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি প্রকাশ করে নিজেকে তুলে ধরতেন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজির মামলায় হাতেনাতে গ্রেপ্তার হলেন জানে আলম অপু।
রাজধানীর গুলশানে সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে চাঁদা আদায়ের সময় গ্রেপ্তার হন অপু। জানা গেছে, অপু জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম পূণঘরদীঘির বাসিন্দা। তার বাবা আনোয়ার হোসেন ঢাকায় একটি কোম্পানিতে কাজ করতেন এবং প্রায় ১০ বছর আগে মারা যান। অপু বর্তমানে গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।
অপুর রাজনৈতিক জীবনের উত্থান শুরু হয় ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বিত ছাত্র আন্দোলনের ‘সমন্বয়ক’ হিসেবে সামনে আসেন তিনি। এই পরিচয়ই হয়ে ওঠে তার জীবনের মোড় ঘোরানো ‘সোনার হরিণ’। কিছুদিনের মধ্যেই গাড়ি, দামি পোশাক ও রাজনৈতিক প্রভাব—সবকিছুতে পরিবর্তন আসে। নিজ জেলা জয়পুরহাটে পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ফুলেল ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে নিজের পরিচিতি বাড়ান।
তার নামে থাকা বিত্ত-বৈভব গ্রামের মানুষের কাছে নতুন কিছু নয়। গ্রামের মানুষ জানান, অপু কখনোই গ্রামের সন্তান হিসেবে দায়িত্বশীল ছিলেন না। বাবার মৃত্যুর পর মা অন্যত্র বিয়ে করেন এবং ছোট বোন মায়ের কাছেই থাকেন। গ্রামের বাড়ি প্রায় সময় তালাবদ্ধ থাকে।
জানা যায়, অপু এক সময় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে নারী কেলেঙ্কারির দায়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর একাধিক দলে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এনসিপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার সময় তিনি জয়পুরহাটে এসেছিলেন এবং নিজেকে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থাপন করেন।
অপুর নানা বাড়ির সদস্যরা জানান, অপু এক সময় তাদের সঙ্গেও থাকতেন, তবে অনেক বছর ধরে যোগাযোগ নেই। তার দ্বিতীয় বিয়ের খবর তারা গণমাধ্যম থেকেই জানতে পেরেছেন।
আক্কেলপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক দেওয়ান তানভীন নেওয়াজ বলেন, “অপু এক সময় ছাত্রদলের হয়ে কাজ করতেন, কিন্তু তার চরিত্রগত সমস্যার কারণে তাকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর সে বিভিন্ন দলের নাম ভাঙিয়ে ঢাকায় প্রভাব বিস্তার করত।”
ছাত্রদল নেতা ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরমান হোসেন বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানের পর অপুর জীবনযাত্রায় হঠাৎ পরিবর্তন আসে। সে মূলত চাঁদাবাজি ও তদবির বাণিজ্যের মাধ্যমে আয়ের পথ গড়ে তোলে। এলাকায় কিছু না করলেও ঢাকায় তার বিপুল সম্পদ গড়ে ওঠার কথা শোনা যায়।”
অবশেষে, গুলশানে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে অপুর প্রভাবশালী ছদ্মবেশ ফাঁস হয়ে যায়। জয়পুরহাটের স্থানীয় নেতারা তার শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এবং বলেছেন, তার কর্মকাণ্ডে পুরো জেলার সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।