সংবাদ এশিয়া

কারাগার থেকে সুচির চিঠিতে দুর্দশার বর্ণনা

97275 suci
print news

ভয়েস অব আমেরিকা : জেলখানা থেকে ছেলে কিম অরিসের কাছে চিঠি লিখেছেন মিয়ানমারের বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচি। এতে তিনি কারাগারে যে দুর্দশার শিকারে পরিণত হচ্ছেন তার বর্ণনা করেছেন। সুচি জানিয়েছেন তিনি পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন না। দাঁতের এবং শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। এ অবস্থায় সুচির স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কিম অরিস। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ভয়েস অব আমেরিকা।

এতে বলা হয়, প্রায় তিন বছর নীরবতার পর মা অং সান সুচির হাতে লেখা একটি চিঠি যেদিন পেয়েছেন ছেলে কিম অরিস, সেদিনটি তার কাছে বিরাট একটি মুহূর্ত। এ নিয়ে ইংল্যান্ডের বাড়ি থেকে জুম মাধ্যমে ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন ২রা ফেব্রুয়ারি। মিয়ানমারে জেলে তার মায়ের স্বাস্থ্যের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অরিস নিশ্চিত করেছেন বৃটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তার মায়ের হাতের লেখা একটি চিঠি পেয়েছেন। প্রথমে সেটা ছিল ছবি।

অরিস বলেন, তার মা, মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি আটক নেত্রী- পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। অরিসের ভাষায়- তাকে আমি ‘কেয়ার প্যাকেজ’ এবং পরিবারের ভালবাসা হিসেবে যা পাঠিয়েছি, তার জন্য তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি এখন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। এখনও তার দাঁতের অবস্থা বাজে। এর ফলে খাবার খাওয়া তার জন্য মাঝে মাঝেই খুব কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া আছে তার অস্টেপেরোসিস। এই রোগে হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে।

অরিস বলেছেন, তিনি তার মায়ের মঙ্গলের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। বলেন, তিনি এখন ৭৮ বছর বয়সী। তাকে পর্যাপ্ত চিকিৎসা না দিয়ে ভয়াবহ একটি পরিবেশে আটকে রাখা হয়েছে। তাকে নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। যতদূর জানি, তাকে আটকে রাখা হয়েছে রাজধানী ন্যাপিডতে আলাদা করে একটি নিঃসঙ্গ কারাগারে।

২০২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী নির্বাচিত অং সান সুচির সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে। তারপর তাকে গ্রেপ্তার করে। এতে শুধু মিয়ানমার নয়, সারাবিশ্বে ক্ষোভ দেখা দেয়। ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা রাজনৈতিক। এসব মামলায় তাকে ২৭ বছরের জেল দেয়া হয়েছে।

অরিস বলেন, মা অসুস্থ একথা শোনার পর সেপ্টেম্বরে আমি তার কাছে একটি ‘কেয়ার প্যাকেজ’ পাঠাই। যদিও তা রেঙ্গুনে পৌঁছে সেপ্টেম্বরে, কিন্তু তা মা পেয়েছেন ডিসেম্বরের শেষে। এরপর তার জবাব পেয়েছি মধ্য জানুয়ারিতে।

অং সান সুচিকে এর আগে ১৫ বছর একটি বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল। সুচির পারিবারিক সেই বাড়িটি নিলামে তোলার জন্য ২৫শে জানুয়ারি নির্দেশ দিয়েছে সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত এক আদালত। এই বাড়িটির অর্ধেক মালিকানা আছে সুচির বড়ভাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অং সান ওও’র। এ নিয়ে দীর্ঘ আইনি জটিলতার পর আদালত ওই নির্দেশ দিয়েছে। সে অনুযায়ী বাড়িটি নিলামে তোলার কথা ২০শে মার্চ। এতে ফ্লোর প্রাইস ধরা হয়েছে ৩১৫০০ কোটি মিয়ানমার কিয়াত (প্রায় ৯ কোটি ডলার)।

অরিস বলেন, ন্যাপিডতে সুচি যে বাড়িতে থাকতেন সেটা তার নিজস্ব সম্পত্তি নয়। সেটা সরকারি সম্পত্তি। সুতরাং তিনি যদি রেঙ্গুনের বাড়িটি হারান, তাহলে মিয়ানমারে তার নিজের বলতে কোনোই সম্পত্তি থাকবে না। এরই মধ্যে তার সম্পদ জব্দ করেছে সামরিক জান্তা। এসব সম্পদ তিনি দাতব্য কাজের জন্য গড়ে তুলেছিলেন। ইউনিভার্সিটি এভিউয়ের বাড়িটি তিনি দাতব্য কাজের জন্য ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, তারা দেশের সঙ্গে সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। সবকিছু পশ্চাৎদিকে ধাবিত হচ্ছে।

সুচির পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আছে এমন একজন মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবি নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফোনে জানিয়েছেন- সুচির বিরুদ্ধে যেসব আইনি প্রক্রিয়া চলছে তাতে ন্যায়বিচারের অভাব আছে। ২০১৮ সালের মিয়ানমার সুপ্রিম কোর্টের দীর্ঘদিনের একটি সিদ্ধান্তকে তারা অবমূল্যায়ন করেছে। ২০১৮ সালে বেসামরিক সরকারের অধীনে সুচির বাড়িটি নিলামে বিক্রির বিরুদ্ধে যে আপিল করেছিলেন অং সান ওও, সেই আবেদন দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রত্যাখ্যান করেছে। এ সময়ে ওই সম্পত্তিতে তার অর্ধেক মালিকানার কথা বলা হয়। এর মধ্যে আছে ১.৯ একর এলাকা। যার ভিতর আছে ইনায়ে লেক এবং ঔপনিবেশিক ধরনের দোতলা একটি বাড়ি। সুচির পিতা ও দেশটির স্বাধীনতার বীর জেনারেল অং সানকে হত্যার পর তার স্ত্রী খিন কি’কে এই বাড়িটি সরকার দিয়েছিল। ফলে বাড়িটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। সুচির মা খিন কি ১৯৮৮ সালের ডিসেম্বরে মারা যান। তার আগে সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে এক ব্যাপক গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়। তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি দলের সহপ্রতিষ্ঠাতা অং সান সুচি।

মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক একজন আইনজীবি বলেন, এই বাড়িটি তড়িঘড়ি করে বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত সুচির প্রতি অন্যায়। কারণ, বর্তমানে তিনি জেলে এবং তিনি ওই বাড়িতে বাস করেন। কিন্তু বিষয়টি মোটেও আমলে নেয়নি আদালত।

অরিস বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলো সেনাবাহিনীই আইন বানাচ্ছে এবং সেমতো সব করছে। এর ফলে তারা আমার মার জীবনকে আরও কঠিন করে তুলেছে। তারপর তারা এই ধারা অবলম্বন করবে। চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও তিনি তার মায়ের সঙ্গে ভবিষ্যত যোগাযোগ রাখার আশা করেন। বলেন, তাকে আমি আবারও চিঠি লিখবো। আবারও পাঠাবো ‘কেয়ার প্যাকেজ’।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *