ইত্তেহাদ এক্সক্লুসিভ

গোপালগঞ্জ রণক্ষেত্র,কারফিউ জারি: নিহত-৪,এনসিপি’র শীর্ষ নেতারা অবরুদ্ধ

9470ece0 625b 11f0 83d2 4f671b8c1523.jpg
print news

বিবিসি বাংলা: গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি’র (এনসিপি) সমাবেশ এবং তাদের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘিরে সহিংসতায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। দফায় দফায় সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও গুলিতে রীতিমত রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্ক ও লঞ্চঘাট এলাকা।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় বুধবার রাত আটটা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।বিপুল সংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র সদস্যদের।

এর আগে, বুধবার দুপুরে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি শেষে ফেরার সময় আওয়ামী লীগের হামলার মুখে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন এনসিপি’র শীর্ষ নেতারা। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের কড়া পাহারায় গোপালগঞ্জ ছাড়েন তারা।

এনসিপির দাবি, নেতাদের “হত্যার উদ্দেশ্যে জঙ্গি কায়দায় হামলা” চালানো হয়েছে এবং “আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের সন্ত্রাসীরা” এই হামলা চালিয়েছে।

এ দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে হামলাকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা ওই সংঘর্ষে নিহত অন্তত চারজনের মরদেহ হাসপাতালে এসেছে বলে বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেশ বিশ্বাস।

নিহতদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলেও জানিয়েছেন মি. বিশ্বাস।তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম-পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি হাসপাতাল কতৃপক্ষ।সংঘর্ষের ঘটনায় আরও অনেকে আহত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।এনসিপি’র কর্মসূচিকে ঘিরে বুধবার সকালে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং পুলিশের গাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটে।পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও প্রাণঘাতী কোনো অস্ত্র ব্যবহার করেনি বলে বিবিসি বাংলার কাছে দাবি করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।

এদিকে, হামলার প্রতিবাদে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি।অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামলাকারীদের “বিনা বিচারে ছেড়ে দেওয়া হবে না।”

ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে

‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি ঘোষণা করে এনসিপি।তাদের এই কর্মসূচিকে ঘিরে মঙ্গলবার রাত থেকেই জেলাটিতে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে গোপালগঞ্জের পৌরপার্ক এলাকায় আয়োজিত এনসিপি’র সমাবেশস্থলে হামলার ঘটনা ঘটে। এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা অবশ্য তখনও সমাবেশস্থলে পৌঁছাননি।ওই সময় হামলাকারীরা সভামঞ্চের সাউন্ড বক্স, মাইক, চেয়ার ভাঙচুরসহ উপস্থিত এনসিপি’র নেতাকর্মীদের ওপর হামলা এবং ককটেল বিস্ফোরণ করে বলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক সাংবাদিক  জানান।পরে এনসিপির নেতাকর্মীরা তাদের পাল্টা ধাওয়া দিয়ে সভাস্থলের নিয়ন্ত্রণ নেন এবং সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের হামলার জন্য দায়ী করে অচিরেই এর জবাব দেওয়া হবে বলে সমাবেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন জাতীয় নাগরিক পার্টি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।”মুজিববাদীরা আজকে বাধা দিয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে আমরা বলেছিলাম, বাধা দিলে বাধবে লড়াই, সেই লড়াইয়ে জিততে হবে এবং সেই লড়াইয়ে আমরা জিতেছিলাম। আজকে আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। অচিরেই আমরা এর জবাব দেব ইনশাআল্লাহ,” বলেন মি. ইসলাম।

তিনি আরও বলেন, “আমরা নিশ্চিত করতে চাই, গোপালগঞ্জ নামের কারণে ভবিষ্যতের চাকরি ক্ষেত্রে বা অন্য কোনো স্থানে কেউ বৈষম্যের শিকার হবে না। কিন্তু গোপালগঞ্জে সন্ত্রাসীদের আস্তানা হতে আমরা দেবো না।”সমাবেশ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় গোপালগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে হামলার মুখে পড়ে এনসিপি নেতাদের বহনকারী গাড়িবহর।দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের বহনকারী গাড়িবহরের ওপর ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলাকারীরা।সেই সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ।পুলিশ ও র‍্যাবের পাহারায় এনসিপির নেতাদের শহর থেকে বাইরে বের করার চেষ্টা করা হলেও ব্যাপক হামলার মুখে তাদের আবারও শহরে ফিরিয়ে আনা হয়।কিছুক্ষণ পরে সেনাবাহিনীর একটি টহল টিম ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপরেও হামলা চালানো হয়। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছোঁড়েন বলে জানান ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকরা।

সেনা পাহারায় গোপালগঞ্জ ত্যাগ

গাড়িবহরে হামলার ঘটনার পর প্রাথমিকভাবে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহসহ দলের শীর্ষ নেতারা।

সেখানে এনসিপি নেতা নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের বলেন, ”আমরা যখন রওনা দিয়েছি, তখন গ্রাম থেকে যত আওয়ামী লীগ-যুবলীগ, সারা বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগের লোকজন এসে আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমরা এখন একটি জায়গায় অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছি।”হামলা প্রতিহতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন দলটির নেতারা।

এছাড়া মসজিদের মাইকগুলোতে ঘোষণা দিয়ে “সন্ত্রাসীদের একত্রিত হওয়ার আহ্বান” জানানো হয় বলে ঘটনাস্থল থেকে বিবিসি বাংলাকে বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন।এদিকে, হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফাঁকা গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস ছোঁড়ে।সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অনেকে আহত হন। নিহত হন অন্তত নিহত চারজন। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধরা জারি করে জেলা প্রশাসন। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের কড়া পাহারায় এনসিপি নেতারা গোপালগঞ্জ ছাড়েন।

পুলিশ এবং ইউএনও’র গাড়িতে হামলা

এনসিপি’র কর্মসূচিকে ঘিরে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং পুলিশের গাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে।এর মধ্যে বুধবার সকাল ১০টার দিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপজেলার উলপুর গ্রামে পুলিশের একটি গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দেয় বলে বিবিসি বাংলাকে জানান গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মো. সাজেদুর রহমান।বিষয়টি জানার পর একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে সঙ্গে করে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম রকিবুল হাসান।পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে ইউএনও’র গাড়িবহনটি গোপালগঞ্জ সদরের বৌলতলী ইউনিয়নের কংসুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে তাদের ওপর হামলা হয়।”আমরা নিরাপত্তার বিষয়টি দেখার জন্য ওখানে গিয়েছিলাম। এর আগে পুলিশের গাড়ি পুড়িয়েছে। মূলত, ওইটা দেখতে গিয়েছিলাম আমরা এবং ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছিলো,” বিবিসি বাংলাকে বলেন মি. হাসান।কারা হামলা চালিয়েছিল? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের লোকজন।”হামলার এসব ঘটনায় কর্মকর্তারা অক্ষত থাকলেও তাদের গাড়ি চালক “সামান্য আহত” হয়েছেন বলে জানান মি. হাসান।

থমথমে পরিস্থিতি

গোপালগঞ্জে রাত আটটা থেকে শুরু হয়েছে কারফিউ। চলবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত।স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সন্ধ্যার পরই অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেছে গোপালগঞ্জ শহর। ঘরে ফেরা কয়েকজন মানুষকে বিচ্ছিন্নভাবে রাস্তায় দেখা গেলেও তাদের চোখেমুখেও ছিল আতঙ্ক।

শহরজুড়ে টহল দিচ্ছে র‍্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি উপস্থিতির কথাও বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন তারা।পুলিশ বলছে, পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে বাড়তি নজরদারিও করা হচ্ছে।
গোপালগঞ্জে ২২ ঘণ্টার জন্য কারিফিউ জারি করা হয়েছে

বিক্ষোভের ডাক এনসিপির

গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সারা দেশে বিক্ষোভ পালনের ঘোষণা দিয়েছে এনসিপি। “আওয়ামী লীগ অনেকদিন ধরে পরিকল্পনা করে এটা ঘটিয়েছে” বলেও তারা দাবি করেছে।রাত পৌনে ১০টার দিকে খুলনায় সংবাদ সম্মেলন করে এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বিক্ষোভ পালনের ঘোষণা দেন।তিনি এই হামলার ঘটনায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার তদন্ত দাবি করেছেন। একইসঙ্গে গোপালগঞ্জে নিহতের ঘটনারও তদন্ত চেয়েছেন।”যতই হামলা, হত্যাচেষ্টা হোক- জুলাই পদযাত্রা থামবে না” বলেন নাহিদ ইসলাম।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.