খুলনার পরে বরিশালে মাংসের দোকানের কর্মচারী’র কুকুর জবাই নিয়ে হুলস্থুল


মামুনুর রশীদ নোমানী,বরিশাল : বরিশালে খাসির মাংসের দোকানে কুকুরের মাংস বিক্রি করার অভিযোগ। জানা গিয়েছে, আগেও এই রকম অভিযোগ উঠেছিল। গ্রেফতার করা হয়েছিল চারজনকে। তার ঠিক দুই মাস পরেই আবার সেই একই ঘটনা ঘটল বাংলাদেশে। ঘটনার খবর পেয়ে ওই এলাকায় পৌঁছায় অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অব বরিশালের সদস্যরা। তাঁরাই কেটে ফেলা ওই কুকুরটিকে উদ্ধার করেছে। তবে অভিযুক্ত এখনও পলাতক। তাকে খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
আগেও বাংলাদেশে খাসির মাংস বলে বিক্রি করা হয়েছে কুকুরের মাংস। সেই মাংস দিয়েই তৈরি বিরিয়ানি কম দামে বিক্রি হয়। এই অভিযোগে খুলনায় গ্রেফতার করা হয় চার জনকে। তারপরে দুমাস যেতে না যেতেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল বাংলাদেশেই। এই ঘটনা ঘটেছে বরিশালে। একটি মাংসের দোকানের পিছনে কুকুর কাটা হয়ে বলে জানার পরই সেখানে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

বিক্রির জন্য কাটা হয় কুকুর
বরিশাল নগরের বটতলা বাজারে একটি কুকুর কেটে মাংস হিসাবে বিক্রির পূর্বেই বিষয়টি জানাজানি হয়। স্থানীয়দের রোষানলে পড়ে পালিয়েছে অভিযুক্ত। কেটে ফেলা ওই কুকুরটি উদ্ধার করেছে অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অব বরিশালের সদস্যরা। তারা জানান, রাস্তা থেকে ধরে আনা কুকুর কাটা হচ্ছে মাংসের দোকানের পিছনে, বিষয়টি জানার পরেই সেখানে আসেন ওই সংগঠনের সদস্যরা।
তাঁদের দাবি, খাসির মাংসের সঙ্গে কুকুরের মাংস মিশিয়ে দিয়ে তা বিক্রি করা হত। এ ঘটনায় পশু আইনে কোতয়ালী থানায় তাবাস্সুম নামের একজন ডাক্তার লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ।। এদিকে বটতলা মাংস বাজারের ব্যবসায়ীরা প্রকৃত ঘটনার তদন্ত করে দেখার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি করেছেন। অভিযোগ, এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত রায়হান মোল্লা। অভিযুক্ত রায়হান বটতলা এলাকার বাসিন্দা। সে বটতলা বাজারের মাংস বিক্রেতাদের কর্মচারী হিসাবে কাজ করত।
ব্যবসায়ীদের দাবি
এলাকার বাসিন্দা এবং মাংস বিক্রেতারা জানান, কুকুরের চামড়া ছাড়ানোর পর বোঝার উপায় নেই এটি কুকুর নাকি ছাগল। তাই প্রশাসনের কঠোর নজরদারি বাড়ানোর দাবি তুলেছেন তাঁরা। বটতলা বাজারে ১১টি মাংস বিক্রির দোকান আছে। আর বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তালিকাভুক্ত শহরের মধ্যে বাজার আছে ১৭টি। সেই সমস্ত বাজারে প্রায় অর্ধশত মাংসের দোকান রয়েছে। এর একটিতে কাজ করে রায়হান।
বটতলা বাজারের মাংস ব্যবসায়ী শামসুল আলম বলেন, ‘এই বিষয়টি তদন্ত করে প্রশাসনকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। এই ঘটনার সঙ্গে কোনও ব্যবসায়ী জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হোক। একই সঙ্গে এই ঘটনায় জড়িত রায়হানের শাস্তিও দাবি করছি আমরা।’ এই রকম ঘটনায় সেখানের মাংস বিক্রেতারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও জানান অন্য ব্যবসায়ীরা।
পলাতক অভিযুক্ত
অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অব বরিশালের সদস্য সৈয়দ রিমেল জানান, পেশাদার লোকের হাতেই সেই কুকুরটি কাটা হয়েছে। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আরিচুল হক বলেন, ‘রবিবার এই ঘটনার খবর পেয়েই অভিযুক্ত রায়হানের দিলবাগ গলির বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। তবে তাকে পাওয়া যায়নি। তার খোঁজ চলছে।
কুকুর জবাইয়ের প্রভাব রেস্তোরাঁ গুলোতে:
প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়তে দেখা গেছে নগরী বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা নামি বেনামী ছোট ও মাঝারি আকারের রেস্তোরাঁ গুলোতে। দুটি বিশেষ খাবার বেচা বিক্রিতে প্রভাব পড়েছে এই রেস্তোরাঁ গুলোয়। নগরীর বিভিন্ন এলাকার ছোট বড় কমপক্ষে দশটি রেস্তোরাঁয় খিচুড়ি ও বিরানি বিক্রি একেবারেই নেই বললেই দেখা গেছে। এ সকল রেস্তোরাঁ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বটতলা বাজারে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা সত্যিই অনাকাঙ্ক্ষিত। প্রকৃত দোষীকে যেহেতু এখন পর্যন্ত আটক করা সম্ভব হয়নি, তাই সে কি কারনে কুকুরটি জবাই করেছিল তা এখনো অস্পষ্ট। তবে বিষয়টি নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে হুলস্থুল সৃষ্টি হয়েছে। বরিশাল নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছোট বড় মিলিয়ে কমপক্ষে ২০০ রেস্তোরাঁ রয়েছে, যারা কেউ কেউ শুধুমাত্র বিরানি এবং খিচুড়ি ও অন্যান্যরা এর সাথে বিভিন্ন ধরনের খাবার বিক্রি করে থাকে। নগরীর মানুষ বিষয়টি এখন স্পষ্ট না হওয়ায় আপাতত হলেও যে কোন রেস্তোরাই মাংস খাওয়া বন্ধ রাখবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে অতি দ্রুত প্রকৃত দোষীকে ধরে বিষয়টি সাধারণের কাছে পরিষ্কার করা দরকার ।কম সংখ্যক ক্রেতাদের কাছে সারাদিনে বিরিয়ানি ও অন্যান্য খাবার বিক্রি করেছে। তবে প্রকৃত খাসি ও গরুর মাংসের তৈরি খাবার নিয়ে তা বিক্রি করতে পারেনি ছোট ও মাঝারি আকারের রেস্তোরাঁ গুলো। প্রতিদিন যে পরিমাণ পার্সেল বিক্রি করে থাকে তার দশ ভাগের এক ভাগ বিক্রিও হয়নি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো সংশ্লিষ্টরা।
খুলনায় যেভাবে বিক্রি হতো কুকুরের মাংসের বিরিয়ানি
খুলনায় ভ্রাম্যমাণ এক ব্যবসায়ী গত একমাস ধরে কুকুরের মাংস দিয়ে তৈরি বিরিয়ানি বিক্রি করে আসছিলেন। বুধবার তাকেসহ মাংস সরবরাহ করা তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরপর সারাদেশে এ নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা।কুকুরের মাংস সরবরাহ করা আটক তিন বন্ধু বাড়তি টাকা আয়ের লোভে এ ধরনের সমাজবিরুদ্ধ কাজে নেমেছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।শুরুর দিকে তাদের থেকে কেউ মাংস কিনতে রাজি ছিলেন না। মো. আবু সাইদ নামে এক ব্যক্তি তাদের কাছ থেকে প্রথমে মাংস কিনতে রাজি হন। প্রতি কেজি মাংস তিনি কিনতেন ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকায়।আর প্রতি প্লেট বিরিয়ানি বিক্রি করতেন ৪০ টাকায়। নগরীর বিভিন্নস্থানে ফেরি করে বিক্রি করতেন এই বিরিয়ানি। প্রতিদিন চার-থেকে পাঁচ কেজি মাংস কিনতেন আবু সাইদ।আটকের পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তেরখাদা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা প্রিয়ঙ্কর কুণ্ডু খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
কুকরের মাংসের বিরিয়ানির খোঁজ মিললো যেভাবে
পরিত্যক্ত একটি ভবন থেকে দুর্গন্ধ পাচ্ছিলেন আশপাশের বাসিন্দারা। আর এই গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখা মেলে তিন কিশোরের। তারা কুকুর নিয়ে ওই ভবনের দিকে যাচ্ছিলেন।স্থানীয়রা কিশোরদের পিছু নেন এবং দেখতে পান, ভবনের বিভিন্ন জায়গায় আরও অনেক হাড় এবং মাংস-চামড়ার মতো জিনিস পড়ে আছে। এরপর কিশোররা কুকুরগুলোর গলা কেটে রশিতে ঝোলালে স্থানীয়রা তাদের হাতেনাতে আটক করে।খবর দেয়া হয় পুলিশকে। পুলিশ এসে তিন কিশোরকে নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, আবু সাইদের হোটেলে কুকুরের মাংসের বিরিয়ানি বিক্রি করা হয়। পরে পুলিশ তাকেও আটক করে।অভিযুক্তদের আটকের যে ভিডিও একাত্তরের কাছে এসেছে তাতে অবশ্য, আবু সাইদকে গোটা ঘটনা অস্বীকার করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ওই তিন কিশোরের কাউকেই তিনি চেনেন না। বরং তিনি খাসির মাংস ভেবেই ওই মাংসগুলো কিনেছেন।এসময় এক পুলিশ সদস্যকে অনুরোধের স্বরে সাইদ বলেন, ‘স্যার মোবাইলটা দেন, আমি বাসায় ফোন দিয়ে একটু জিজ্ঞেস করি- কেউ মাংস খেয়েছে কিনা।- আমি আগে থেকে এগুলো কিছুই জানতাম না।’সাইদ মিথ্যা বলছে দাবি করে ওই তিন কিশোর জানান, গত বেশ কিছুদিন ধরেই দুই-তিন-চার বা পাঁচ কেজি করে মাংস সাইদ তাদের থেকে কিনতেন। সেগুলো তিনি বিরিয়ানিতে দিয়ে বিক্রি করতেন।
কুকুর আসতো কোথা থেকে
কুকুর জবাই চক্রের প্রধান খালিশপুরের ডলার হাউজ মোড় এলাকার অষ্টম শ্রেণির ছাত্র (১৬) তার দুই বন্ধুকে (১৬) সাথে নিয়ে কুকুরের মাংসের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তারা শুরুতেই স্থানীয় এক পরিত্যক্ত পলিটেকনিক কলেজের ভবন খুঁজে বের করেন- যার আশপাশে মানুষের উপস্থিতি কম।এরপর তারা তাদের বাড়ির আশপাশের এবং এলাকার কুকুরগুলোকে খাবারের লোভ দেখিয়ে কাছে এনে দড়িতে বাঁধতেন। তারপর তিন বন্ধু সেগুলোকে টেনে ভবনে নিয়ে আসতেন।প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনার মূলহোতা কিশোর জানান, শুরুতে তারা তাদের পোষা কুকুর কেটে বিক্রি করেন। সে সময় তারা ওই মাংস খাসির মাংস বলে ফেরি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে ততোটা সুবিধা করতে না পেরে তারা সাইদের সাথে চুক্তি করেন।
পুলিশ যা বলছে
খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন জানান, পরিত্যক্ত ভবনটি থেকে কয়েকদিন ধরে দুর্গন্ধ পাচ্ছিলেন স্থানীয়রা। ঘটনার দিন বিকেলে একটি কুকুর নিয়ে ওই ভবনে চার জনকে ঢুকতে দেখেন স্থানীয়রা। কয়েকজন তাদের পিছু নেন। তারা গিয়ে দেখেন, কুকুরটিকে জবাই করে মাংস কাটার প্রস্তুতি চলছে। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায়।তিনি জানান, ওই ভবনটি থেকে অনেকগুলো কুকুরের চামড়া ও হাড় উদ্ধার করা হয়েছে। আটকরা জানিয়েছেন তারা প্রায় এক মাস ধরে কুকুরের মাংস দিয়ে বিরিয়ানির ব্যবসা করছিলেন। খালিশপুরের বঙ্গবাসী এলাকায় প্রতি প্লেট বিরিয়ানি মাত্র ৪০ টাকায় বিক্রি করতেন তারা।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়