দু’টি মামলার আসামি হয়েও বহাল তবিয়তে স্বাস্থ্য সহকারী


অনলাইন ডেস্ক : বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দাপুটে নেতা দু’টি মামলা মাথায় নিয়ে এখনো সরকারি চাকরি করছেন প্রকাশ্যে। শুধু তাই নয়, নিজের নামে বিভিন্ন সংবাদপত্রের এজেন্ট ছাড়াও ফ্রেশ কোম্পানির ডিলারশিপের ব্যবসাও পরিচালনা করেন তিনি নিজেই। বিগত সরকারের সময় প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিং করেছেন। তার হাতে নির্যাতিত হয়েছেন বিএনপি-জামায়াতের অসংখ্য নেতাকর্মী। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পেয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে পরে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল তাকে তলব করে। সেখানে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে পার পান।
দাপুটে এই নেতার নাম আপেল মাহমুদ। তিনি মোকামতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য এবং স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে মোকামতলা ইউনিয়নের স্বাস্থ্য সহকারী। তবে আপেল মাহমুদ দাবি করেন, তিনি আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করায় তাকে ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগের মিছিল করতে বাধ্য করা হয়েছিল। এ ছাড়াও পত্রিকার এজেন্ট এবং ফ্রেশ কোম্পানির ডিলারশিপ তার বাবার নামে।
জানা গেছে, ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আপেল মাহমুদের নামে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বগুড়া সদর ও শিবগঞ্জ থানায় হত্যার চেষ্টাসহ বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দু’টি মামলা হয়। মোকামতলা ইউনিয়নের স্বাস্থ্য পরিদর্শক সোনা মিয়া বলেন, আপেল মাহমুদ নিয়মিত চাকরি করছেন। তার নামে মামলার বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। আপেল চাকরিতে আমার জুনিয়র হলেও আওয়ামী লীগের প্রভাব বিস্তার করে এতদিন সে স্বাস্থ্য পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু নিয়মিত অফিস করেননি। ৫ই আগস্টের পর আমাকে স্বাস্থ্য পরিদর্শকের পদের দায়িত্ব দেয়া হয়। মোকামতলা ইউনিয়নের শংকরপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডার ছামছিল আরিফিনা বলেন, আপেল সপ্তাহের তিনদিন এই ক্লিনিকে আগত সেবাপ্রার্থীদের প্রাথমিক সেবা দিয়ে থাকেন। শনিবার তিনি ক্লিনিকে সেবা দিয়েছেন।
গনেশপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডার সুলতান আহম্মেদ বলেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আপেল এখানে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের টিকা প্রদান করেছেন। দেউলী ইউনিয়ন জামায়াতের যুব বিভাগের সেক্রেটারি সুমন খন্দকার বলেন, আমি পেশায় ভেটেনারি চিকিৎসক। ২০২১ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে মুসল্লিদের নিয়ে একটি পোস্ট করায় আপেলের নির্দেশে তার লোকজন আমাকে মোকামতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিসে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে আপেল আমাকে মারধর করে পুলিশে দেয়ার হুমকি দেয়। তাদের হাতে-পায়ে ধরে পোস্ট ডিলিট করে রেহাই পাই। শিবগঞ্জ উপজেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ও মোকামতলা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফাহিমা বেগম বলেন, আমি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হিসেবে ২০২৩ সালের ১৪ই মার্চ দুপুরে ৪নং ওয়ার্ডের ফজলুর বাড়ির সামনে কাজে গেলে আপেল মাহমুদের নেতৃত্বে আমার ওপর হামলা করে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় অভিযোগ দিলে থানা ঘটনাটি জিডিভুক্ত করে। পরে আর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুহুল আমীন বলেন, আপেল মাহমুদের নামে মামলা রয়েছে বিষয়টি আমি শুনেছি। তার নামে একটি লিখিত অভিযোগও জমা পড়েছে। তিনি নিয়মিত চাকরি করছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে আপেল মাহমুদের বিষয়টি জানিয়েছি। গত দেড় মাস ধরে সিভিল সার্জন নেই। ডেপুটি সিভিল সার্জন দায়িত্বে ছিলেন। এক সপ্তাহ আগে তিনিও বদলি হয়ে চলে গেছেন। রোববার নতুন সিভিল সার্জন পদায়ন হয়েছেন। তিনি যোগদান করলে আপেল মাহমুদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, মামলার বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো এবং সিভিল সার্জনকে অবগত করবো। তদন্তে তার বিরুদ্ধে মামলার সত্যতা পাওয়া গেলে আমরা যথযথভাবে আইনগত প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।