বাংলাদেশ ঢাকা

যুবদল নেতা কিবরিয়া হত্যা : বিদেশে বসে হত্যার নির্দেশ, খুন করে ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা

বসে হত্যার নির্দেশ
print news

রাজধানীর পল্লবীতে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ওই এলাকার এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আসছে, যিনি কয়েক বছর ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। মফিজুর রহমান ওরফে মামুন নামের পলাতক ওই আসামি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও লেনদেন নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে কিবরিয়াকে হত্যা করিয়েছেন। ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।

কিবরিয়া হত্যার ঘটনা তদন্তে যুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। তাছাড়া ওই এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এলাকায় মামুনের পক্ষে চাঁদাবাজির কথা জানা গেছে। আর স্থানীয় বিএনপির নেতারা বলেছেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে কিবরিয়াকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন মামুন। কিবরিয়া তাতে রাজি না হওয়ায় মামুন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

নিহত কিবরিয়া (৪৭) ছিলেন পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব। পাশাপাশি তিনি চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করতেন বলে পরিবার জানিয়েছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে মুখোশধারী তিন সন্ত্রাসী মিরপুর ১২ নম্বরের বি ব্লকে ‘বিক্রমপুর হার্ডওয়্যার অ্যান্ড স্যানিটারি’ নামের একটি দোকানে ঢুকে খুব কাছ থেকে গুলি করে তাকে হত্যা করে। এ ঘটনার পর দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ওঠে এবং দ্রুত না চালানোয় চালক আরিফ হোসেনের (১৮) কোমরে গুলি করে তাকে আহত করে। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা জনি ভূঁইয়া (২৫) নামের একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশ বলেছে, কিবরিয়াকে হত্যা করতে জনি ভূঁইয়াসহ কয়েকজনকে ভাড়া করা হয়েছিল। হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া অপর দুজনকেও শনাক্ত করা হয়েছে। তাদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

হত্যা মামলা,আসামি জনিসহ পাঁচজন

এ হত্যাকাণ্ডে ঘটনায় কিবরিয়ার স্ত্রী সাবিহা আক্তার ওরফে দীনা বাদী হয়ে আজ পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় আসামি হিসেবে জনিসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অপর আসামিরা হলেন সোহেল ওরফে পাত্তা সোহেল ওরফে মনির হোসেন (৩০), সোহাগ ওরফে কালু (২৭), মাসুম ওরফে ভাগিনা মাসুম (২৮) ও রোকন (৩০)। এ ছাড়া অজ্ঞাত পরিচয় আরও সাত-আটজন এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছে পল্লবী থানা–পুলিশ।

পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান আজ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আটক জনি ভূঁইয়া যুবদল নেতা কিবরিয়া হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, কিবরিয়াকে হত্যা করার জন্য তাকেসহ কয়েকজনকে ভাড়া করা হয়েছিল। এ হত্যাকাণ্ডের কারণ এবং নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদেরও শনাক্ত করা হয়েছে।

মাদক ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ
ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের একাধিক নেতা ও মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, পল্লবী এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী মফিজুর রহমান ওরফে মামুন মালয়েশিয়ায় এবং তার ভাই মশিউর ওরফে মশি ভারতে পালিয়ে আছেন। সম্প্রতি মামুন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ তাদের লোকদের পাইয়ে দিতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু কিবরিয়া তাতে রাজি হননি। এছাড়া কিবরিয়ার কাছে মামুন টাকা পেতেন। সেই টাকা পরিশোধে কিবরিয়া টালবাহানা করছিলেন। এসব কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে মামুন লোক ভাড়া করে কিবরিয়াকে হত্যা করিয়েছেন বলে তারা ধারণা করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলেন, এক সময় কিবরিয়া মামুনের সঙ্গে চলাফেরা করতেন। ২০-২৫ বছর আগে কিবরিয়া তার সঙ্গ ছেড়ে দেন। মামুনের সঙ্গে যোগাযোগও করতেন না কিবরিয়া। এসব কারণে কিবরিয়ার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে থাকতে পারেন মামুন।

স্থানীয় কয়েকজন জানান, মামুন বিদেশে বসে ওই এলাকার একটি পোশাক কারখানায় চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করেন। কিছুদিন আগে কিবরিয়া সেখানে চাঁদা নিতে এলে মামুনের লোকজন বাধা দিয়েছিল। মামুন ফোন করে তাকে সেখানে যেতে নিষেধ করেছিল। এ ছাড়া মামুন পল্লবী থানা যুবদলের কমিটিতে তার কিছু লোককে ঢুকাতে কিবরিয়াকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু কিবরিয়া তা শোনেননি। এসব কারণে মামুন তার ওপর ক্ষুব্ধ হন।

মামুনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, খুন, মাদক, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ও ডাকাতির অভিযোগে পল্লবী থানায় ২৭টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে ১৫টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও ২টি সাজা পরোয়ানার তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে। একটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মামুনকে ২০২১ সালে পল্লবী থেকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারতে বসে মিরপুরের অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছিলেন মামুন। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে মামুন মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যান বলে পুলিশ জানায়।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.