বাংলাদেশ চট্টগ্রাম

আলোচনায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট -কেএনএফ

3 1712414780
print news

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :  পার্বত্য চট্টগ্রামে ফের তাণ্ডব চালিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছে সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। নিজেদের অবস্থান জানান দিতে একের পর এক সরকারি ব্যাংকে হামলা চালাচ্ছে গোষ্ঠীটি। দুই দিনে তিনটি ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টা করেছে এর সদস্যরা। নাথান বম নামে এক ব্যক্তির সশস্ত্র গোষ্ঠীটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।বাংলাদেশ সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হিসেবে বর্ণনা করলেও সংগঠনটি তাদের ফেসবুক পাতায় দাবি করেছে তারা বাংলাদেশের কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন নয়। তাহলে কুকি-চিন আসলে কারা? কে এই নাথান বম?

কেএনএফ কারা

কেএনএফের ঘোষণা ও বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্য অনুযায়ী, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির অন্তত ছয়টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে তারা। যদিও দলবদ্ধ ভাবে তাদের বম হিসেবেও প্রচার করছে অনেকে।

২০২২ সালের এপ্রিলে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করে ফেসবুকে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম উপজেলাগুলোর সমন্বয়ে পৃথক রাজ্যের দাবি করে তারা। তখনই তাদের সাংগঠনিক প্রধান হিসেবে নাথান বমের নাম ঘোষণা করে তারা।নাথান বম এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং বান্দরবানের রুমা উপজেলায় তার বাড়ি বলে জানা যাচ্ছে।তার সাথে ব্যক্তিগত পরিচয় ছিলো এমন অন্তত দু’জন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, একসময় তিনি নিজের সম্প্রদায়ের মানুষদের উন্নয়নে কাজ শুরু করলেও গত কয়েক বছর ধরে তাকে আর লোকসমক্ষে দেখা যায়নি।তবে ফেসবুকে ও ইউটিউব পোস্টে কেএনএফ তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ ছাড়াও শুরু থেকেই সরকার ও জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়ে আসছিলো।পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বা জেএসএস এর প্রচার বিভাগের সদস্য দিপায়ন খীসা বলছেন, পাহাড়ের একটি বিশেষ প্রভাবশালী মহল এই কেএনএফকে আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়েছে। কথিত কেএনএফ ফেসবুক পেজে ঘোষণা দিয়ে তাদের সশস্ত্র কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।বান্দরবানের মানবাধিকার কর্মী লেলুং খুমী বলছেন, কয়েক মাস ধরেই রিমোট এরিয়াগুলোতে কেএনএফের কিছু তৎপরতার খবর পাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু তাদের সুনির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক লক্ষ্য আছে বলে মনে হয়নি। তাদের কিছু অর্জন করতে হলে সেটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই করতে হবে।তাদের ফেসবুক পাতায় সামরিক পোশাক পরিহিত নারী পুরুষের ছবি ছাড়াও ট্রেনিং করার কিছু চিত্র দেয়া হয়েছে। যদিও এসব ভিডিও বা ছবি বাংলাদেশের নয় বলেই মনে করছে র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।ফেসবুক পাতায় কেএনএফ বলেছে, ‘কুকি-চিন জনগোষ্ঠীরা সার্বিক উন্নয়নে সরকার থেকে অন্যান্য বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মতো তেমন কোন সহযোগিতা বা সুযোগ-সুবিধা পায়নি, তবে স্বীয় প্রচেষ্টায় দেশকে উন্নয়নের দিকে সবসময় নিয়ে যাবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কুকি-চিন জনগোষ্ঠীরা কখনো কোন দিন সরকার পরিপন্থী বা ভূ-খণ্ডের জন্যে হুমকি এমন কোন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল না।’অবশ্য এর আগেই তারা জানিয়েছিলো, তাদের একটি কমান্ডো দলও আছে যার নাম – হেড হান্টার কমান্ডো টিম।

কে এই নাথান বম?

নাথান বমের পুরো নাম নাথান লনচেও বম। বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার ২নং রুমা সদর ইউনিয়নের ইডেনপাড়ার বাসিন্দা মৃত জাওতন লনচেও এর ছেলে। ১৯৮০ সালে তার জন্ম।স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, লেখাপড়ায়ও বেশ ভাল ছিলেন নাথান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। সেখান থেকে সম্পন্ন করেছেন স্নাতকোত্তর। নাথান এক সন্তানের জনক। তার স্ত্রী স্থানীয় এক স্কুলের শিক্ষক। পাশাপাশি পরিবার পরিকল্পনাকর্মী হিসেবে কাজ করেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নাথান ছাত্রজীবন থেকে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রথমে যুক্ত ছিলেন সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদে। পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর খাগড়াছড়ি শহরের মহাজন পাড়া এলাকায় লারমা স্কয়ারে এমএন লারমার একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করেন।

ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করা হয় ২০০০ সালে। এরপর শিল্পী হিসেবে খ্যাতি বাড়ে। সে সময় হিল আর্টিস্ট গ্রুপেও যুক্ত ছিলেন। পাশাপাশি বম বিষয়ে লেখালেখি করেছেন। কুকি-চিনভুক্ত জাতিগোষ্ঠীর পরিচিতি নিয়ে ‘দ্য বমজৌ’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। এছাড়া গবেষণামূলক আরও পাঁচটি বই প্রকাশিত হয়। এই কারণে নাথান লেখক হিসেবেও পরিচিত। তবে বর্তমানে তার অবস্থান কোথায় তা জানা যায়নি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য মতে, নাথানের অবস্থান নিশ্চিত করতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ২০০৮ সালে অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর শিক্ষিত ব্যক্তিদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন কুকি-চিন জাতীয় ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও)।সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের অনগ্রসর ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষা করা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার রূপ বদলাতে থাকে। ২০১৭ সালের পর থেকে নতুন রূপ ধারণ করেন নাথান। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠা করেন কেএনএফ।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নামে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন নাথান। ২০১৬ সালে সশস্ত্র একটি গ্রুপ তৈরি করেন। পরে কেএনডিওর বদলে কুকি-চিন ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স (কেএনভি) নাম দিয়ে কার্যক্রম চালান। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি।

এরপর ভারতের মণিপুর ও বার্মার চীন রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কেএনভির প্রথম ব্যাচে সংগঠনের শতাধিক সদস্যকে মণিপুরে প্রশিক্ষণে পাঠান। এরপর ১০০ সদস্যকে মণিপুর, বার্মার কারেন ও কাচিন রাজ্যে গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়। ২০২০ সালে কেএনভির নাম বদলে কেএনএফ হয়। তাদের সশস্ত্র উইংয়ের নাম দেয়া হয় কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)।এরপর থেকে সংগঠনটি নিজেদের অধিকার আদায়ের নামে গুম, খুন ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে পাহাড়ের পরিবেশকে অশান্ত করে তোলে।

 

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *